×

জাতীয়

বিজয়ের মূলকথা- ‘আত্মশক্তি’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:১৯ এএম

বিজয়ের মূলকথা- ‘আত্মশক্তি’

ছবি: ভোরের কাগজ

এবারের বিজয় দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। ঘরে বাইরে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে দেশের ভেতরে অযথা গুজব ছড়িয়ে মানুষের আস্থায় চিড় ধরাবার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল, অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাভাব আমাদের অর্থনীতিকে নানাভাবে চাপে রাখছে। সাধারণত যখন বাইরে থেকে কোনো চাপ আসে তখন পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলার চেষ্টা করে। সমাজ এ সময় সচেষ্ট থাকে, যাতে করে সবাই মিলে এই বহিঃসংকট থেকে স্বদেশকে সুরক্ষা দেয়া যায়। কিন্তু আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য স্বদেশকে সুরক্ষা দেবার সেই জাতীয় ঐকমত্য গড়ার কাজটি আমরা সেভাবে করে উঠতে পারিনি। অথচ ১৯৭১ সালে আমরা ঠিকই দুঃখের দিনে এক হতে পেরেছিলাম। সেই হিরণ¥য় সময়ে আমরা যখন বাইরের আক্রমণকে প্রতিহত করছিলাম তখন কিন্তু ভেতরের সামাজিক বন্ধন খুবই সুদৃঢ় ছিল। সামাজিক পুঁজির এক অসাধারণ বিস্ফোরণ ঘটেছিল একাত্তরে। মানুষ যে মানুষের জন্য- এ সত্যিটি আমরা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি। রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ পথের সন্ধান দেয়া, তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা এবং একসঙ্গে বেঁচে থাকার এক অভাবনীয় আত্মশক্তির প্রকাশ ঘটেছিল একাত্তরের বাংলাদেশে। তখন আমাদের আজকের মতো অর্থের প্রাচুর্য ছিল না। ঘরে পর্যাপ্ত খাবারও ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নানা কৌশলে পর্যুদস্তু করতে পেরেছিলাম। কোথায় পেয়েছিলাম এই আত্মশক্তি? বাঙালির এই লড়াকু মন এক দিনেই দানা বাঁধেনি। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ও মানবিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির এই মন বদল ঘটিয়েছিলেন। তাদের স্বদেশের মুক্তির আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত করেছিলেন। ‘আমরা পারি’- এই মনোভাব গড়ে তোলার জন্য তিনি আমাদের আত্মশক্তির মূলে পানি ঢেলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। নান্দনিক এই নেতৃত্ব ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে আমাদের সমাজের ভেতরই রয়ে গেছে আত্মশক্তি। এই উপলব্ধি তাঁর হয়েছিল এ কারণে যে তিনি জানতেন জাহাজের খোলের ময়লা পানি সেচে ফেলে না দিলে সাগরের পানির বাইরের চাপ তার পক্ষে মোকাবিলা করা সহজ হবে না। তাই তো তিনি সংগ্রাম করেছেন ঘরে বাইরে।

বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর মোহনীয় নেতৃত্বের গুণে। তরুণ প্রজন্ম তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল এ কারণে যে তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বদেশের প্রতিভূ হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছিলেন ‘স্বদেশকে একটি বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে আমরা উপলব্ধি করিতে চাই। এমন একটি লোক চাই, যিনি আমাদের সমস্ত সমাজের প্রতিমাস্বরূপ হইবেন। তাঁহাকে অবলম্বন করিয়াই আমরা আমাদের বৃহৎ স্বদেশীয় সমাজকে ভক্তি করিব, সেবা করিব। তাঁহার সঙ্গে যোগ রাখিলেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের যোগ রক্ষিত হইবে।’ (‘স্বদেশী সমাজ’, রবীন্দ্ররচনাবলী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৩৪)। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ঠিকই তাঁর সঙ্গে সংযোগ রেখেছিলেন। তাই তো একাত্তরের ৭ মার্চ তিনি যখন মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন তারা সকলেই উদ্বেলিত হয়েছিলেন। তাদের হাতে যা কিছু ছিল তাই নিয়ে প্রস্তুত হয়েছিলেন মুক্তির লড়াইয়ের জন্য। ঠিক যখন তাঁর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা এলো তখন আর তাদের বলে দিতে হয়নি কি করতে হবে। তদ্দিনে তারা শত্রæকে ‘পানিতে মারতে’, ‘ভাতে মারতে’ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন। যে কথা সেই কাজ। এদেশের কৃষক সন্তান, মধ্যবিত্তের ও শ্রমিকের সন্তান, সংস্কৃতি কর্মীরা দল বেঁধে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। নারীরাও পিছিয়ে ছিলেন না এই মরণপণ যুদ্ধে। তাদের রক্তে ঘামেই আত্মপ্রকাশ করে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ষোলই ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে বাংলাদেশে বিজয় কেতন ওড়ে। কিন্তু এ বিজয় বাহাত্তর সালের দশই জানুয়ারি পর্যন্ত অসম্পূর্ণই ছিল। ঐ দিন জাতির পিতা বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে পা রাখার পর এ দেশ পুরোপুরি স্বাধীনতার স্বাদ পায়। কিন্তু সেদিনও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তির মূলকথা ভুলে যাননি। রেসকোর্স (পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী ময়দান) ময়দানে লাখ লাখ মুক্ত মানুষের সামনে বলে ওঠেন- এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি মানুষ পেটভরে ভাত খেতে না পান। যদি যুবক কাজ না পায়। যদি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা না যায়।

আর তাঁর সেই অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তিনি এক দণ্ডও নষ্ট করেননি। পরের দিন থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েন এদেশের আর্থ-সামাজিক মুক্তির সংগ্রামে। স্বদেশের জন্য উপযুক্ত সংবিধান প্রণয়ন করে সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ করেছিলেন জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রকে। সুপ্রিম কোর্ট স্থাপন করে মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনের পথ খুলে দেন তিনি। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ার কাজে নেমে পড়েন তিনি। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট বিনিয়োগের ২৪ শতাংশ বরাদ্দ করেন কৃষি খাতে। এরপর শিল্প। তারপর শিক্ষা খাত। এভাবেই মানুষের কল্যাণে ব্রতী হন বঙ্গবন্ধু। স্বদেশী এই উন্নয়ন কৌশলের মূল কথাই ছিল আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার জন্য আত্মশক্তির উন্মেষ ঘটানো। আর এই স্বউন্নয়ন কৌশলে কৃষিই ছিল মধ্যমণি। বঙ্গবন্ধু জানতেন কৃষি শুধু খাদ্যই উৎপাদন করে না। এই খাতেই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান মেলে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কাঁচামাল সরবরাহ করে কৃষি। আর শিল্প পণ্যের চাহিদাও তৈরি হয় গ্রামীণ অর্থনীতি থেকেই। নগরে সব শক্তি কেন্দ্রিভূত হলে যে সভ্যতা অক্কা পায় গ্রীসের পরিণতি তার বড় প্রমাণ। তাই কৃষির আধুনিকায়ন ও রূপান্তরে বঙ্গবন্ধু তাঁর নীতি সহায়তা দিতে মোটেও কার্পণ্য করেননি। বরাবরই তিনি চেয়েছিলেন সাম্যভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজ। খাদ্য নিরাপত্তার অভাব সমাজে কি ধরনের অনাসৃষ্টি তৈরি করতে পারে সে কথাটি বঙ্গবন্ধু জানতেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরে তিনি মানবতার পরাজয় খুব কাছে থেকে দেখেছিলেন। তাই তো তিনি গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে এতোটা জোর দিয়েছেন। কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য তিনি ব্রি, বারি, বিনা ও বার্কসহ কতো কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানই না প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উন্নত বীজ, সার, সেচ ও কৃষি ঋণের প্রসার তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল। কৃষি-বান্ধব বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের মতোই জানতেন কৃষির উন্নতি শুধু কৃষকের কাজ নয়। তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে বিদ্বানকে ও বিজ্ঞানীকে। আর সে কারণেই তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং গবাদি পশুর উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কৃষি স্নাতকদের প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হবার সুযোগও করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসঘাতকদের হাতে নিহত হবার পর বাংলাদেশে নেমে আসে এক ‘অদ্ভুত অন্ধকার’। সেই অন্ধকারে বাংলাদেশের কৃষি পথ হারিয়ে ফেলে। অর্থনীতিতে বাড়তে থাকে বিদেশ-নির্ভরতা। খাদ্য সাহায্য পাবার জন্য সেই সময়ের নীতিনির্ধারকদের দৌড়ঝাঁপের কথা সবাই জানেন।

বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ পরিচালনার ভার নেবার পর কৃষি ফের প্রাণ পায়। তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে বিনিয়োগ করতে থাকেন উদারহস্তে। পরবর্তী সময়ে বর্তমান কৃষিমন্ত্রীর ড. আব্দুর রাজ্জাকও একজন কৃষি-অন্তপ্রাণ নীতিনির্ধারক হিসেবে কৃষি খাতের প্রতি সুনজর দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ সংকট কালেও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কোনো ঝুঁকিতে পড়েনি। কোভিড-উত্তর বিশ্বে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হবার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও চাপ পড়েছে। গম, ভোজ্য তেল, জ¦ালানি তেল এবং সার আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া আমাদের লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের নগরাঞ্চলে খাদ্যমূল্য বেশ বাড়ন্ত। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলা করতে সরকার কম দামে প্রতি মাসে ১ কোটি পরিবারের কাছে খোলা বাজার পদ্ধতিতে ট্রাকে ট্রাকে খাদ্য বিক্রি করছে। তা সত্ত্বেও মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ বেশ খানিকটা চাপের মুখেই রয়েছেন। তবে আমন উৎপাদনে বাম্পার হবার কারণে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর সরকারের বাড়তি মনোযোগের কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো নাগালের বাইরে চলে যায়নি। সারা বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশ এই ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত। বিশ্বনেতা হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যাভাবের আশঙ্কার কথা বললেও বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ করে যাচ্ছেন। এক ইঞ্চি জমিও পতিত না রেখে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা সাবধানি কৌশল হিসেবেই তিনি এমন কথা বলছেন। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কৃষির সাফল্য এবং আমাদের অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলে আত্মনির্ভরতার আকাক্সক্ষা মজবুত থাকায় তিনি এমন কথা বলতে পারছেন। আর এখানেই আমাদের অর্থনীতির ‘আত্মশক্তি’র সন্ধান মেলে। সাবধানী হয়েই আমরা আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্বস্তা বৈদেশিক সহায়তা নিচ্ছি। আর এসব প্রতিষ্ঠানের অংশীজন হিসেবে আমরা এমন ঋণ নিতেই পারি। আমাদের আত্মশক্তি মজবুত বলেই এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের ওপর ইচ্ছেমাফিক শর্ত আরোপ করতে পারবে না। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বিশ্ব ব্যাংককে আমাদের আত্মশক্তির জোর দেখিয়েছিলাম। তারা আমাদের অবস্থান এখন ভালোভাবেই জানেন। আর সেভাবেই পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধার আলোকেই এ সব ঋণ কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে প্রস্তুত। এ জন্য আমাদের হয়তো কিছু নীতি সংস্কার করতে হবে। তাতে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ও ব্যক্তি খাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বরং বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্বন্ধে ইতিবাচক বার্তা পাবে।

এভাবেই আমরা ‘ঘরে বাইরে’ চোখ রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনকে সাজাচ্ছি। আমরা জানি আমদের নিজস্ব উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবেই আমাদের মতো করে কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য কাঠামো দাঁড় করাচ্ছি। তার মানে এই নয় যে বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব। আমরা আদতেই চাই ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন। তাই তো বড় বড় অবকাঠামো তৈরিতে আমরা বিদেশি সহায়তা নিচ্ছি। তবে এই সহায়তার অর্থবছরে বছরে ফেরৎ দেবার মতো বিদেশি মুদ্রা অর্জনের সক্ষমতাও আমাদের আছে। আমাদের বাড়ন্ত রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আমাদের এই আত্মশক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশি কৃষি ও ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পকেও গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ মিলেই এগিয়ে চলেছে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। রবীন্দ্রনাথ যে কারণে বলেছিলেন যে ‘আমাদের আম বাগানে আজকাল আম ফলেনা, বিলাতের আপেল বাগানে প্রচুর আপেল ফলিয়া থাকে’। (‘দেশীয় রাজ্য’, রবীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬৮৮)। সে কথাটি এখন নতুন করে ভাবতে হবে। তিনি বরং ‘আত্মশক্তি’তে বলিয়ান হয়ে বিদেশ থেকে আপেল আমদানির পক্ষে ছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা কি তাই বলিয়া মনে করিব যে, আম গাছগুলো কাটিয়া ফেলিয়া আপেল গাছ রোপণ করিলে তবেই আমরা আশানুরূপ ফল লাভ করিব। এই কথা নিশ্চয় জানিতে হইবে, আপেল গাছে যে বেশি ফল ফলিতেছে তাহার কারণ তাহার গোড়ায়, তাহার মাটিতে সার আছে- আমাদের আম বাগানের জমির সার বহুকাল হইল নিঃশেষিত হইয়া গেছে। আপেল পাই না ইহাই আমাদের মূল দুর্ভাগ্য নহে, মাটিতে সার নাই ইহাই আক্ষেপের বিষয়। সেই সার যদি যথেষ্ট পরিমাণে থাকিত তবে আপেল ফলিত না, কিন্তু আম প্রচুর পরিমাণে ফলিত এবং তখন সেই আমের সফলতায় আপেলের অভাব লইয়া বিলাপ করিবার কথা আমাদের মনেই হইত না। তখন দেশের আম বেচিয়া অনায়াসে বিদেশের আপেল হাটে কিনিতে পারিতাম, ভিক্ষার ঝুলি সম্বল করিয়া এক রাত্রে পরের প্রসাদে বড়লোক হইবার দুরাশা মনের মধ্যে বহন করিতে হইত না। আসল কথা, দেশের মাটিতে সার ফেলিতে হইবে।’ (‘দেশীয় রাজ্য’, রবীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬৮৮)

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের উন্নয়ন জমিনে যথেষ্ট সার ফেলেছি। তা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ইউক্রেনে যুদ্ধের ধাক্কা এবং ডলার-টাকা বিনিময়ে হারে অস্থিরতার মতো বাইরের চাপ আমাদের অর্থনীতিকেও চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু সরকার নয়, ব্যক্তি খাত, এনজিও, সামাজিক শক্তিসহ সকলেই একযোগে কাজ করতে হবে। মনে রাখা চাই সরকার ও রাষ্ট্র এক জিনিস নয়। রাষ্ট্রকে সক্ষম রাখতে সমাজকে সক্রিয় হতে হয়। মনে রাখা চাই সকলে হাতে হাত ধরে স্বদেশের উন্নয়নে ব্রতী হবার এটিই শ্রেষ্ঠ সময়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App