×

জাতীয়

বিজয় গৌরবের ৫১তম বার্ষিকী আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪৭ এএম

বিজয় গৌরবের ৫১তম বার্ষিকী আজ

প্রতীকী ছবি

একাত্তর থেকে ২০২২। অর্ধশতকের বেশি দিনবদলের যাত্রা। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। মহান একাত্তরের এইদিনে ঘড়ির কাঁটায় যখন ৪টা বেজে ৩০, তখন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয় অর্জন হয়েছিল বীর বাঙালির। আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ। বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে আজ ওই স্মরণীয় মুহূর্তে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নেবে জাতি।

দেশজুড়ে আজ উৎসবের আমেজ। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। আজ সকালে জাতীয় পতাকা শোভা পাবে আঙিনায় আঙিনায়। গতকাল থেকেই ঢাকার অলিগলিতে মাইকে বাজতে শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড করা ভাষণ ও মুক্তির গান।

গত ৫১ বছরে নানা বিচ্যুতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের রয়েছে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। দারিদ্র্যের তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম গুছিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদালাভ। জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর এগিয়ে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে যাওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে দায়মুক্তির ইতিহাস তৈরি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে এগিয়ে যাওয়ার আদর্শিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঘরে ঘরে বিজলি বাতির ঝলকানি, সাবমেরিন ক্যাবল থেকে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট- সবই বিস্ময়কর অগ্রগতির নাম বাংলাদেশ। আর এসব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে গত এক দশকে। এর আগে জাতির পিতা ও চার নেতার হত্যাকাণ্ড, ক্ষতবিক্ষত সংবিধান, কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, জিয়া-এরশাদের স্বৈরশাসন, হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২১ বার হামলা, পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা, সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা, জঙ্গি বাংলাভাইদের উত্থান বিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছিল বারবার। অন্ধকারের সেসব দিনরাত্রি পেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ, যার ফলস্বরূপ কোভিড বিশ্বেও সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশ। রূপকল্প-২০৪১ এর আগেই উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে জাতি।

ফিরে দেখা একাত্তর : স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল, সেখানেও বাঙালির ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ-নির্যাতন। প্রথম আঘাত এসেছিল মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশ নিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। একাত্তরের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তার ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রæদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা কিছু আছে, তাই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে এর আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশের বীর সন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং ২ লাখ মা-বোনের ত্যাগ ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি। আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন বিজয়ী বাঙালিরা। সেই পতাকা উঁচিয়ে চলছে প্রগতির পথে বাঙালির অভিযাত্রা।

বিজয়ের ৫১ বছর উদযাপন : আজ ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সরকারের দায়িত্বশীল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক ও প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা শ্রদ্ধা জানাবেন। শ্রদ্ধা জানাবেন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এরপরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App