×

জাতীয়

গ্যালারি চিত্রকে শিল্পাচার্যর দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী ‘সংগ্রাম’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৮ এএম

গ্যালারি চিত্রকে শিল্পাচার্যর দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী ‘সংগ্রাম’

ছবি: ভোরের কাগজ

গ্যালারি চিত্রকে শিল্পাচার্যর দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী ‘সংগ্রাম’

বাংলাদেশের এক অন্যতম নক্ষত্র শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বিংশ শতাব্দীর এই বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। শিল্পী হওয়ার জন্য যাকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক বন্ধুর পথ। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। আর জীবনের সেই সংগ্রামী অধ্যায় স্পর্শ করেছে তার সৃজনের ভুবনকে। সেজন্যই তার ছবিতে উঠে এসেছে খেটে খাওয়া মানুষের নিরন্তর জীবন সংগ্রাম। সেই সমান্তরালে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপরীতে সাধারণের টিকে থাকা কিংবা স্বাধীনতার জন্য বাঙালির সংগ্রাম হয়েছে তার চিত্রকর্মের বিষয়। স্বদেশের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনকেও তিনি তুলে এনেছেন তার ক্যানভাসে।

জয়নুলের এমনি দুর্লভ বেশকিছু সিরিজের ছবি নিয়ে ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। এতে দেখা মিলবে দুর্ভিক্ষ, জীবন সংগ্রাম, প্যালেস্টাইনি মুক্তি সংগ্রাম, মনপুরা ’৭০ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সিরিজের ছবি। ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিন দশকের অধিক সময়ে আঁকা ছবি স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন শিল্পী সুমন ওয়াহেদ।

সাত দশক ধরে সংগৃহিত ও সংরক্ষিত এসব উপাদান এবং ১২৫টি চিত্রকর্ম নিয়ে ধানমণ্ডির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘সংগ্রাম’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্পী রফিকুন নবী। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, প্রদর্শনীর কিউরেটর সুমন ওয়াহিদ, অভিনেতা কেরামত মাওলা ও জয়নুল আবেদিনের পুত্র ময়নুল আবেদিন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, জয়নুল আবেদিন উচ্চশিক্ষা নিয়ে এ দেশে না ফিরলে আজ আমরা চারুকলা নিয়ে চর্চা করতে পারতাম কী না সন্দেহ। তিনি দেশে এসে চারুকলা শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করলেন। এসব না করলে তিনি শিল্পচর্চায় আরও বেশি সময় দিতে পারতেন। তবে আমাদের শিল্পচর্চার পথ তিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। তাঁর ছাত্র হতে পেরে আমরা গর্বিত। জাগতিক ও শৈল্পিকভাবে সবাইকে কাছে টানার শক্তি ছিল তাঁর।

মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, শিল্পচার্যের ছোট ছেলে ময়নুল আবেদিন মিতুর সঙ্গে নটরডেম কলেজে পড়ার সময় থেকে বন্ধুত্ব। তাঁর সঙ্গে ওদের শান্তিনগরের বাসায় গেলে দেখতাম শিল্পাচার্য ছবি আঁকছেন। যখনই যেতাম তখনই দেখতাম কিছু না কিছু আঁকছেন। বলতে গেলে, শিল্পের প্রতি আমার কৌতুহল সৃষ্টি হয় এখান থেকেই। তখন না বুঝলেও পরে বুঝেছি, বৃটিশ শাসকরা আমাদের কতটা শোষণ করেছে বিশ্ব তা শিল্পাচার্যের ছবির মাধ্যমে জানতে পেরেছে। বাংলায় যে মন্বন্তর হয়েছে সেটাও তার মাধ্যমেই জেনেছে বিশ্ব। এখনও আমরা সংগ্রামের ভেতর আছি। আমরা স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষের কথা ভাবিনি কোনোদিন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই আশঙ্কা ফিরে এসেছে। যদিও আমরা এ সংগ্রামে জয়ী হবো, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কেটে যাবে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জয়নুল আমাদের শিল্পচর্চার ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিলেন। এখন বাংলাদেশের শিল্পীরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন তা গর্বের। তিনি বলেন, শিল্পাচার্য সারা জীবন এই দেশ ও মানুষকে নিয়ে ভেবেছেন। জাতির পিতা তাঁকে চিনেছিলেন। সোনারগাঁওয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

ময়নুল আবেদিন জানান, বাড়িতে থাকা পুরনো ট্রাঙ্ক খুলে তাতে একটি খেরোখাতায় জয়নুলের হাতের লেখা একাত্তরের যুদ্ধের বয়ান খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। তাতে আবার আটটি ছবি আঁকা রয়েছে। খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়তে চান না বলে প্রদর্শনীতে সে ছবি দেখানো না গেলেও সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সংগ্রাম’ নামে একটি বইয়ে ছবিগুলো রাখা হয়েছে। জয়নুলের ছবি, লেখা, নথিপত্র ও তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে অন্যদের লেখাজোখার সংকলন এই বই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মে অতিথিরা এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন গতকাল।

সুমান ওয়াহিদ জানান, দর্শক কিংবা শিল্পরসিকদের জন্য এই প্রদর্শনীটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ আয়োজনের মাধ্যমে জয়নুল আবেদিনের বেশ কিছু অদেখা চিত্রকর্মকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। রয়েছে শিল্পীর অনুশীলনভিত্তিক কাজ; যা কিনা একই ছবি একাধিকবার আঁকার মাধ্যমে শিল্পীর কাক্সিক্ষত গন্তব্যের পৌঁছানোর ইঙ্গিত দেয়। আর এসব চিত্রকর্মের সবগুলোর বিষয় হচ্ছে যুদ্ধ, দুযোর্গসহ নানা সংকটে মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম। সব মিলিয়ে জয়নুলের শৈল্পিক সংগ্রামের ধারাভাষ্য দেবে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App