×

জাতীয়

মেজর জিয়ার ছকে ছিনিয়ে নেয়া হয় জঙ্গিদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ১২:০৮ পিএম

মেজর জিয়ার ছকে ছিনিয়ে নেয়া হয় জঙ্গিদের

আনসার আল ইসলামের প্রধান মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক

আনসার আল ইসলামের প্রধান মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনায় ১৮ সহযোগী মিলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান তিনি।

ডিবি প্রধান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, আদালতে আসা ১২ জঙ্গির মধ্যে দুজনকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকি ১০ জনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরতে অভিযান চলছে। যে কোনো মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে (সিটিটিসি)।

সূত্র বলছে, আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘেটনায় দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। আদালতপাড়া থেকে তাদের কেড়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। এরই ধারাবাহিকতায় সাত মাস আগে ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কেনা হয় মোটরসাইকেল। এ পরিকল্পনার মূলহোতা ছিলেন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার করা ছক ধরে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় দফায় দফায় র‌্যাকি করে জঙ্গিরা। অপারেশনে অংশ নেওয়া জঙ্গিদের টিমটিকে সাজানো হয় তারই দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী।

কখন, কীভাবে হামলা চালাতে হবে; হামলার পর কোন পথে পালাতে হবে সেই ছকও করে দিয়েছিলেন মার্কিন সরকারের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় থাকা মেজর জিয়া। এই ছক করার জন্য কারাবন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগও করেন তিনি একটি গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রের খবর, জিয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আনসার আল ইসলামের ২০ সদস্যের অপারেশনাল টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অপারেশনে তাদের কার কী ভূমিকা হবে, তাও নির্ধারণ করে দেন জিয়া নিজেই। কারাগার থেকে আদালত পর্যন্ত আসামিদের যাতায়াতের পুরো পথই একাধিকবার রেকি করেছিল জঙ্গিরা। তুলনামূলক কম নিরাপত্তা থাকার কারণে সিদ্ধান্ত হয় আদালত এলাকাতেই চালানো হবে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেয়ার অপারেশন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার সকাল থেকেই আদালত এলাকায় অবস্থান নেয় জঙ্গি দলের সদস্যরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুনানি শেষে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে প্রথমে নিচে নামানোর সুযোগ করে দেয় তাদের অপর সহযোগীরা।

রিমান্ডে থাকা আরাফাত ও সবুরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসির একটি সূত্র জানান, ত্রিশালে যেভাবে জঙ্গি ছিনতাইয়ের অপারেশন হয়েছিল, সেভাবে অর্থাৎ প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু কাশিমপুর থেকে ঢাকার আদালতে আনা-নেয়ার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা করাটা অনেক বেশি ঝুঁঁকিপূর্ণ এবং অনেক বেশি শক্তিরও প্রয়োজন। এ জন্য শেষ পর্যন্ত আদালতপাড়াকে টার্গেট করা হয়। ফাঁসির আসামিরা কারাগারের ভেতরে কনডেমড সেলে থাকে। সেখানেই তারা হরহামেশা মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। জিজ্ঞাসাবাদে তারা সেটা স্বীকারও করেছে। কারাগারের বাইরে তাদের যেসব নেতা আছে, তাদের সঙ্গে যৌথ পরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য রিমান্ডে আনা ১০ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের অন্য জঙ্গিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একাধিক দল কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে যায়। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে দলটি বের করার চেষ্টা করে, কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে জঙ্গিরা বাইরের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেয়া জঙ্গিকেও শনাক্ত করেছেন। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে অভিযানও শুরু হয়েছে। গত রবিবার ঢাকার আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি সিফাত সামির ও সোহেল ওরফে সাকিব আনসার আল ইসলামের আশকারি সদস্য। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আনসার আল ইসলামের নেতা মেজর জিয়ার পরিকল্পনা ও দিক-নির্দেশনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করে সংগঠনটির সদস্যরা। মেজর জিয়াকে ধরতে কয়েক বছর আগেই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আর মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের জেরে মার্কিন সরকার গত বছর মেজর জিয়াকে ধরতে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।

সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে এবং আগামীতে আরও বড় ধরনের হামলা চালাতেই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। টার্গেট ছিল, ৪ জঙ্গিকেই ছিনিয়ে নেওয়ার। আদালতে হাজিরার জন্য আসা অন্য ৮ জঙ্গিরও যোগসাজশ ছিল এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। ছিনতাইকাণ্ডে অংশ নেওয়া জঙ্গিরা ছিল অস্ত্রধারী। কিন্তু দুই জঙ্গিকে খুব সহজেই কেড়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে তারা অস্ত্রের ব্যবহার করেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App