×

জাতীয়

৩ বছরের এলএনজির টাকায় ৬ হাজার মে.ও. সৌরবিদ্যুৎ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৯ এএম

৩ বছরের এলএনজির টাকায় ৬ হাজার মে.ও. সৌরবিদ্যুৎ

প্রতীকী ছবি

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সংকট কাটাতে সরকার উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি শুরু করেছিল। এতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় শুরু হয়। অথচ এলএনজি আমদানিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে, তা সৌরবিদ্যুতে ব্যবহার করা হলে ভবিষ্যতে দেশের বিদ্যুৎ সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হতো। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নজরদারির অভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতে দীর্ঘ সময় ভোগান্তি পোহাতে হবে। জ্বালানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘এমবার’ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী তিন বছরে এলএনজি কিনতে বাংলাদেশের প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১০৬ টাকা ধরে) খরচ হতে পারে। অথচ এই অর্থ খরচ করে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

‘এমবার’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাসের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশে গড়ে প্রতি বছর ৮ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এই বাড়তি চাহিদার ৬২ শতাংশই প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে মেটানো হয়। এতদিন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের পর্যাপ্ত যোগান থাকায় চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যোগান কমে যাওয়ায় বিদ্যুতে সংকট শুরু হয়- যা এখনো চলছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ গ্যাস সরবরাহের ২২ শতাংশ আমদানি করা এলএনজি থেকে পূরণ করে। এই গ্যাস আমদানি করতে ব্যাপক আর্থিক চাপে পড়তে হয়।

এতে আরো বলা হয়, ২০২৬ সালের আগে বাংলাদেশের বর্তমান গ্যাস সংকটের সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ‘এমবার’ এর সিনিয়র পাওয়ার পলিসি অ্যানালিস্ট আদিত্য লোলা গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, সৌর শক্তির উৎপাদন বাড়ানো হলে উপযুক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এতে শুধু বিদ্যুৎ সংকটই নয়, অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে আমি মনে করি। অথচ একই সময়ে সারাবিশ্ব সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে অনেক এগিয়ে গেছে। তাছাড়া নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে প্রতিশ্রুতিরও অভাব রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে নজর না দিয়ে এলএনজির পেছনে টাকা ঢেলে দেয়া হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলন এবং সৌরবিদ্যুতের উন্নয়নে খরচ করা হলে আজ এই সংকট অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব হতো।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, আরো অনেক আগেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। ২০১৫ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হলেও বাস্তবায়নে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আমার মনে হয় ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। সব স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। তাছাড়া জমির স্বল্পতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়ে গেছে। এসব সমস্যা দূর করতে না পারলে সরকারের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে, সুফল মিলবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App