×

জাতীয়

সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হবে কবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২০ এএম

সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হবে কবে?

প্রতীকী ছবি

তামাকের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। তবুও ক্ষতিকর এই পণ্য নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারের অঙ্গীকার থাকার পরও তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ আটকে থাকছে দীর্ঘ সময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালেই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনাও দেন তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনারও বাস্তবায়ন নেই।

জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০০৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন (২০১৩ সালে সংশোধন) আরেকটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এর খসড়া সংশোধনী তৈরি ও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত নেয়ার কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই খসড়া চূড়ান্তের কাজটি এগুচ্ছে অনেকটা শ্লথ গতিতে।

আইনের খসড়া সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

১৫৫ জন সংসদ সদস্য, বিএমএ ও সন্ধানীসহ ২০টির বেশি চিকিৎসক সংগঠন, শতাধিক স্বনামধন্য চিকিৎসক, শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং সাংবাদিকদের সংগঠন, ধর্মীয় নেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনসহ ২০ হাজারের বেশি সংগঠন ও ব্যক্তি ইতোমধ্যে সংশোধিত এই খসড়ার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ফাঁকগুলো রয়েছে সেগুলো বন্ধ হবে। এছাড়া তামাকের ব্যবহার কমবে ও নতুন করে কেউ তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহিত হবে। ফলে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে অধূমপায়ীরা রক্ষা পাবে। এছাড়া গণপরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কিংবা খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করার পক্ষে শুধু তামাক বিরোধী সংগঠনের নেতারা নয় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলও এক মত। কিন্তু তবুও সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস বিলম্বিত হচ্ছে।

জানা যায়, খসড়া আইনটি পাস হতে এখনো বেশ কয়েকটি পর্যায় পেরোতে হবে। সরকারের এই মেয়াদে এই আইন পাস হওয়া নিয়েও রয়েছে সংশয়। কারণ এরই মধ্যে সরকারের এই উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে একটি মহল। মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি এসোসিয়েশন ও ব্যবসায়িক চেম্বার প্রস্তাবিত সংশোধনীর বেশ কিছু ধারা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের মধ্যে আছে এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, ফরেইন ইনভেস্টরর্স চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বেন্ডসটা, মুদ্রণ শিল্প সমিতিও আছে। তাদের যুক্তি- সংশোধিত এই আইন পাস হলে এই খাতে সম্পৃক্ত প্রান্তিক আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনমানের অবনতি ছাড়াও বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কমবে। যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, জনস্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা দরকার। বিদ্যমান তামাক আইনের যে সব সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি একমত। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্রুত এই খসড়া সংশোধনীটি চূড়ান্ত করা দরকার।

জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তামাকমুক্ত দেশ গড়তে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তাহলে খসড়া আইন পাসে বাধা কোথায়- এ প্রশ্নের উত্তরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির সদস্য এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশর লীড পলিসি এডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সব সময়ই চেষ্টা করে তামাকের বিরুদ্ধে আইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম যাতে না হয়। তাদের এই অপচেষ্টা অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয় পুরো বিশ্বেই। তামাক কোম্পানি অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআইসহ বিভিন্ন বড় বড় ফোরামে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) সদস্যরা রয়েছে। তারা নিজেদের সংযুক্ত করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ায়। সেই বিভ্রান্তির আলোকে অনেক প্রেসার গ্রুপও তৈরি হয়। এমন সমস্যা সারা বিশ্বেই।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ইতোমধ্যে এই ধারাগুলো সংযুক্ত হয়েছে এবং তারা এর সুফলও পাচ্ছে। তামাকের সর্বনাশা ছোবল থেকে রক্ষা পেতে সব নাগরিকের দায়িত্ব তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর প্রস্তাবনাকে সমর্থন এবং তামাক কোম্পানির কূটকৌশলকে প্রতিহত করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App