×

জাতীয়

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার ঘোষণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৯ পিএম

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার ঘোষণা

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। ছবি: ভোরের কাগজ

২০১৮ সালে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচন ইশতেহার বাস্তবায়নের চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন সংগঠনটি।

আগামী ৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকার শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে একই দাবিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখী রোড মার্চ করে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে ঘোষনায় জানানো হয়।

দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি শেষে রাজধানী শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বেলা সাড়ে তিনটায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পরবর্তী সময়ের কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

লিখিত ঘোষণাপত্র পাঠকালে তিনি বলেন, আগামি ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধর প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে। গত ২৪ মার্চ শাহবাগ চত্বর থেকে পদযাত্রাসহকারে আড়াই লক্ষ সংখ্যালঘু জনগণের স্বাক্ষরসম্বলিত এক স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রদান করে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতি- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্যবিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন দ্রুত বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন আইন প্রণয়নে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের জন্যেও। এর পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই একই দাবিতে সারাদেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপরেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি, যাতে এ দেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায় যারপরনাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির স্বার্থে এর নিরসন হওয়া অপরিহার্য চলতি বছরের শারদীয় দুর্গাপুজো সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গণতন্ত্রমনা সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সচেতন সক্রিয়তায় নির্বিঘ্নে, শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে বৌদ্ধ পূর্ণিমাও নির্বিঘ্নে উদযাপিত হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। কিন্তু '৭৫ পরবর্তীকাল থেকে অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিকভাবে অনুসৃত পাকিস্তানি আমলের সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ায় ১৯৭০-এর আগে ১৯-২০ শতাংশ, ১৯৭৪ সালে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবানুযায়ী ৮ দশমিক ৬ শতাংশ এ নেমে এসেছে। ধারাবাহিক অত্যাচার, উৎপীড়ন ও উচ্ছেদে সংখ্যালঘু-আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেশত্যাগ এই মাত্রায় অব্যাহত থাকলে আগামিতে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূণ্য হয়ে পড়তে বেশি সময় নেবে না। আমরা মনে করি, ক্ষমতায় থাকার ও ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি গণতন্ত্র নয়, সমঅধিকার ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে রক্ষা করাও গণতন্ত্রের অন্যতম মূল আধার।

গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সুনিশ্চিতকরণের লক্ষে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুণঃপ্রতিষ্ঠায় এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চিরতরে বন্ধে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তিসমূহের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।

রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য আজ এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত আদিবাসী সংখ্যালঘু জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, অস্তিত্বের সংকটে নিক্ষেপ করেছে। এ থেকে উত্তরণে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মানবাধিকারের আন্দোলন, সম-অধিকারের লড়াইকে এগিয়ে নেয়া ছাড়া আজ আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই।

এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে সরকারি দলের ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে আমরা এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হলে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে একই দাবিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখী রোডমার্চ করে ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি বিকেল তিনটায় ঢাকার শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি হবে।

সুস্পষ্টভাবে আমরা বলতে চাই, নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারি দলের নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততাকে ধর্মীয়-জাতিগত-আদিবাসী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোনভাবেই মেনে নেবে না। ধর্মীয়-জাতিগত আদিবাসী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে এটি হবে প্রতারণার সামিল, যা গণতন্ত্র জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় কারো কাছে কাম্য হতে পারে না।

এর আগে সকাল জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সাম্প্রদায়িক হামলা চিরতরে বন্ধসহ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

ঢাকায় এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে শাহবাগ চত্বরে। সকালে এই কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে আগত প্রায় কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী এই গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App