×

জাতীয়

বিএনপিকে এড়িয়ে চলার কৌশল ধর্মভিত্তিক দলের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০৫ এএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা শেষে দ্বিতীয় দফা সংলাপ করছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। ইতোমধ্যে ১৬টি দলের সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষ করেছে দলটি। চলমান দ্বিতীয় দফা সংলাপে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানা গেছে। তবে, প্রথম দফায় যোগযোগ করেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সংলাপে রাজি করাতে পারেনি বিএনপি। দ্বিতীয় দফায়ও বিএনপির সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী নয় ইসলামী দলগুলো। এসব দলের নেতারা মনে করেন- এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ কিংবা কোনো ধরনের সখ্যতার পথে হাঁটলে নানামুখী ঝামেলাসহ সরকারের রোষানলে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো দল বা জোটে না গিয়ে অভ্যন্তরীণ (ইসলামী দলগুলোর মধ্যে) সমঝোতা কিংবা বোঝাপড়ার মাধ্যমে কিভাবে একটি জোট গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে আলোচনা করাটা সময়োপযোগী বলে মনে করছেন তারা।

কয়েকটি ইসলামী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- গত বছরের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে ঘিরে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে সিংহভাগ এখনো কারাগারে আছেন। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও এসব নেতাকর্মীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর যদি কোনো ধরনের সখ্যতা গড়ে ওঠে; তাহলে দমন-পীড়ন আরো বাড়বে। এ কারণে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপ কিংবা আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে এসব দল। যদিও এসব দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে এসব দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কিংবা অঘোষিত আলোচনা হয়েছে বিএনপির। আলোচনায় বিএনপিকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করা হয়েছে। বিএনপিও প্রাথমিক আলোচনায় এসব দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে তাদের সংলাপের আমন্ত্রণ জানায়নি। তবে ধর্মভিত্তিক এসব দলের নেতারা মনে করেন, বিএনপির দাবির সঙ্গে তারাও একমত। বিএনপি যদি রাজপথে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের চোখ সামনের দিনে রাজনীতির গতিবিধির ওপর।

এদিকে, ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ‘নির্বাচনী সমঝোতা’ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেয়া এবং মাঠে প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তোলা। ধর্মভিত্তিক দলগুলো যাতে নিজেদের মতো করে ‘নির্বাচনী সমঝোতা’ গড়ে তুলতে পারে, সেই চেষ্টায় সরকারের দিক থেকেও উৎসাহ থাকবে। ইতোমধ্যে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতার লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। এসব আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আন্দোলনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ইসলামী দলগুলোর নেতাদের ভাষ্য, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে- ‘একলা চলো’ নীতির ফল ভালো হয়নি ইসলামী দলগুলোর। তাই আগামীতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার বিষয়ে আলোচনা করছেন তারা। তবে, এসব পার্টি সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিলেও দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে ভিন্নভাবেই। তারা বলছেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর তেমন গুরুত্ব না থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের একটা প্রভাব আছে। সঙ্গত কারণেই দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে অতীতে কোনো জোটে গিয়ে ইসলামী দলগুলোর তেমন লাভ হয়নি। তাই এখন সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করার। যে ঐক্যের মধ্যদিয়ে দেশে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় একজন নেতা বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে আমরা খুব একটা আগ্রহী নই। বরং কিছু কৌশলগত কারণে আমরা বিএনপিকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ তাদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিলে সরকারের রোষানলে পড়তে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, আমরা বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছি। সামনের দিনের পরিস্থিতিই আমাদের পথ বাতলে দেবে, আমরা কোন পথে যাব, সে অপেক্ষায় আছি। যদিও প্রকাশ্যে দলটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। আমন্ত্রণ পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংগঠন কিংবা ভোটের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে দলটির মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ বলেন, তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপে অংশ নেয়ার বিষয়ে আমরা আমন্ত্রণ পাইনি। আমন্ত্রণ পেলেও যে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ যাব এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। আমন্ত্রণ পেলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অতীতে কখনো কোনো জোটে যাইনি। এবারো সম্ভাবনা নেই। আমরা নিজেদের সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত আছি। জানতে পেরেছি আপনারা সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে একটি জোট গড়ার চেষ্টা করছেন, জবাবে তিনি বলেন, এটা সত্যি, আমরা সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের এক জায়গায় ডাকছি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা সমঝোতার পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আপনারা বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনের শতভাগ প্রস্তুতি থাকবে। তবে, নির্বাচনে যাব কিনা, সেটা পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কী ধরনের পরিবেশ আশা করছেন, জবাবে তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে নির্বাচনকালীন সময়ে, এবং স্বচ্ছ একটি নির্বাচন কমিশন হবে। তাহলেই কেবল আমরা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারি, এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়ার বিষয়ে এখনই আমরা চিন্তাভাবনা করছি না। আসলে যারা ইসলামী দল তাদের নিজেদের মধ্যে একটা সমন্বয় কিংবা সমঝোতা গড়ে উঠুক এটাই চাই আমরা। এটা ইসলামের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো হবে। অন্য কোনো জোট বা বিকল্প কিছু আমরা চিন্তা করছি না। মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস দীর্ঘ সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। কিন্তু নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১ অক্টোবর জোট ছাড়ে দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, একটা কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা ২০ দলীয় জোট ছেড়েছি। সে পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। ফলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নতুন করে কোনো বিপদে পড়তে চাই না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App