×

জাতীয়

ঈশ্বরদী-পাবনাবাসীকে ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৭:০২ পিএম

ঈশ্বরদী-পাবনাবাসীকে ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা করায় ঈশ্বরদী ও পাবনাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে যারা অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই আমার ঈশ্বরদী ও পাবনার জনগণকে। কারণ তাদের কাছ থেকেও আমরা সহযোগিতা পেয়েছি। একটা প্রকল্প করতে গেলে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। এছাড়া এটা দীর্ঘদিনের একটা বিষয় ছিল, যা তাদের (ঈশ্বরদী ও পাবনাবাসীর) জন্য গর্বের বিষয় বলে আমি মনে করি।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বহুল আলোচিত এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (চুল্লিপাত্র) স্থাপনের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণে পাকিস্থান সরকার ১৯৬২ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিয়ে জমি ক্রয় করে রাখলেও পাকিস্তানের শাসকরা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আর নির্মাণ করেনি। আমাদের বঞ্চিত করেছিলেন বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ করতে এবং সেই অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু তিনি এটা সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি। আমাদের বিদ্যুৎ-জ্বালানি, সংবিধানে পল্লী বিদ্যুতায়নসহ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই বিষয়ে কিছু আলোচনাও হয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি থমকে গিয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিদেশ থেকে আমি দেশে ফিরে আসার পর থেকেই (পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের) প্রচেষ্টা চালাই, জায়গাটা আমি দেখতেও গিয়েছিলাম। এরপর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি এবং অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু ২০০১-এ সরকারে না আসার কারণে এটার আর কোনো অগ্রগতি ছিল না, কারণ ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের এই ব্যাপারে কোনো ইচ্ছেই ছিল না এবং ব্যবস্থাও নেয়নি। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেই আমরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেই।

তিনি বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং পাবে। কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ ব্যয়ে মিতব্যয়ী হতে হবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরও (সরকার) মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে এবং হতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি, সেজন্য আমরা একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি পাশাপাশি আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করছি। এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে, তা আমাদের উত্তরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আর্থ-সামাজিক আরও উন্নয়ন হবে।

এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর আরএনপিপির প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (চুল্লিপাত্র) স্থাপনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঠিক এক বছর ৮ দিন পর আজ দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধনের পর প্রকল্পের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হলো। এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ হবে পারমাণবিক জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বিশ্বের ৩৩তম দেশ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন রুশ আনবিক শক্তি সংস্থার (রোসাটম) মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. আজিজুল হকসহ মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদের সদস্যরা। আর প্রকল্প এলাকায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০২৩ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটও অনুরূপ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। যা জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নে জনশক্তি প্রশিক্ষণসহ মোট ব্যয় হচ্ছে ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ অর্থায়ন করছে রাশিয়া। বর্তমানে প্রকল্পে ৩৩ হাজার লোক কাজ করছে। এদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার বিদেশি নাগরিক রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App