×

জাতীয়

নিম্ন আয়ের মানুষেরাই তার প্রধান টার্গেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৫ পিএম

নিম্ন আয়ের মানুষেরাই তার প্রধান টার্গেট

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার খন্দকার আবুল কালাম আজাদ। ছবি: ভোরের কাগজ

নিম্ন আয়ের মানুষেরাই তার প্রধান টার্গেট
নিম্ন আয়ের মানুষেরাই তার প্রধান টার্গেট

হাতিয়ে নিয়েছেন ৭০ কোটি টাকা প্রতারণাসহ ৬০ মামলার আসামি আজাদ

নিম্ন আয়ের মানুষরাই ছিল তার প্রধান টার্গেট। সঞ্চয়ের নামে দিনমজুর ও চালকসহ বিভিন্ন দোকানী এবং চাকুরীজীবিদের কাছ থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন খন্দকার আবুল কালাম আজাদ (৫৩)।

মঙ্গলবার (১৮অক্টোবর) রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হয় র‍্যাব। আবুল কালাম আজাদের নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন থানায় চেক জালিয়াতি এবং প্রতারণাসহ সর্বমোট ৬০টি মামলা রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব। যার মধ্যে ৩৬টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে বিভিন্ন লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে ৭হাজার গ্রাহক থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়া চক্রের হোতা আজাদকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বুধবার (১৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

র‍্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২০০৩ সাল থেকে জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার খন্দকার আবুল কালাম আজাদ উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ জামানত হিসেবে নিত। এভাবে ২০১২ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যান তিনি। পরে ২০১৩ সাল থেকে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে বৃহদাকারে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান শুরু করে। সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের জন্য মোটা অঙ্কের ও প্রান্তিক মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে। গ্রাহকরা তফশিলি ব্যাংক মনে করে তাতে আমানত রাখতে শুরু করেন। অনেক ব্যবসায়ীকে প্রতিষ্ঠানটি মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকে পড়ে ওই প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন জেলা শহর গুলোতে দৃষ্টিনন্দন ও নামীদামি বাড়ি ভাড়া নিয়ে চাকচিক্যময় অফিস খুলে বসেন তিনি। মূলত আবুল কালাম আজাদ পরিবার কেন্দ্রিকভাবে ব্যবসা শুরু করে যেখানে তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মিলে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করত। এভাবে অল্প সময়ে তারা প্রচুর পরিমাণ অর্থ জামানত হিসেবে নিয়ে আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়।

তিনি আরো বলেন, গত ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া, খুলনা, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীসহ প্রতিটি জেলা থেকে অফিস গুটিয়ে নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আজাদসহ তার পরিবারের তথা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সবাই গা ঢাকা দিলে বিষয়টি নিয়ে ওই জেলাগুলোতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সর্বস্ব হারানো ভূক্তভোগীরা বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধনসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকে। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার জন্য র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৩ এর একটি দল কল্যাণপুর থেকে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার ছিল। ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখতো গ্রাহকরা তাদের প্রতিষ্ঠানে। গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমান দাড়ায় প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা দাড়ালে তা মেরে দেয়ার পরিকল্পনা করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৭ সালে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সে তার আঞ্চলিক সব অফিস গুটিয়ে ও ফোন নম্বর একযোগে বন্ধ করে দিয়ে ঢাকার উত্তরায় এসে গা ঢাকা দেয়। পালানোর সময় মাঠপর্যায়ে তার প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদত্ত ঋণের পরিমান ৩২ লাখ টাকা ছিল বলে সে জানায়। যা সে আর সংগ্রহ করতে পারেনি।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেপ্তারকৃতের সঙ্গে প্রায় ৮০০ কর্মী যুক্ত ছিল। যাদেরকে কোন প্রকার বেতন দিতে হত না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাত আবুল কালাম আজাদ। এছাড়াও তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএস সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত বলে জানায়।

গ্রেপ্তারকৃত আজাদ কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ পাশ করে। ছাত্র অবস্থায় ইটের ভাটার ব্যবসা, ঠিকাদারী ব্যবসা, কুষ্টিয়ার একটি স্থানীয় পত্রিকার প্রচার সম্পাদক ও একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি ছিল। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর এলাকায় জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে প্রতিষ্ঠান চালু করে ও পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়ায়। পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৪০টির মত অফিস চালু করে। এছাড়াও সে ঠিকানা লিভিং লিমিটেড নামে আরো একটি ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরী করে ক্রয়-বিক্রয় করত। উক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম করে নিজের জেলা কুষ্টিয়াতে ১৫ বিঘা জমি, একটি ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন, একটি ইটের ভাটা ও রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি ক্রয় করে। আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে সে ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি ক্রয় করে। তার স্ত্রীর নামে পোষ্ট অফিসে ২০ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে বলে জানা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে তার একাউন্ট রয়েছে এবং একটি প্রাইভেট ব্যাংকে তার দুই কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এছাড়াও নামে বেনামে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App