×

জাতীয়

১৮ বছর পর ধর্ষক গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০২:০৬ পিএম

১৮ বছর পর ধর্ষক গ্রেপ্তার
১৮ বছর পর ধর্ষক গ্রেপ্তার

ছবি: ভোরের কাগজ

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মাকে বেধে মেয়েকে ধর্ষণ

মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণের মামলায় ১৮ বছর পলাতক থাকা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি অলি নবী ওরফে লাড্ডু মিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গতকাল সোমবার (১৭ অক্টোবর) আটক করা হয় তাকে। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি ঘটে।

গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অন্যতম আসামী অলি নবী ওরফে লাড্ডু মিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, গত ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ীতে বিধবা মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তার সামনেই ১৩ বছরের মেয়েকে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেম মিলে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে পরদিন সোনাগাজী থানায় চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে গত ২০০৩ সালের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ১৪ জুলাই আদালত জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মোঃ লাতু মিয়াসহ অভিযুক্ত তিন আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামীকে ২ লাখ টাকা অর্থদন্ড করেন। তবে মোঃ ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়। তবে রায়ের পর থেকেই পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তারে আমাদের নজরদারি অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় লাড্ডু মিয়াকে গ্রেপ্তারের সমর্থ হই আমরা।

তিনি আরো বলেন, ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ঘটনার সময়ে সোনাগাজী এলাকায় মোঃ ফারুকের নেতৃত্বে লাড্ডু মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেমসহ আরও অনেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য সালিশ বিচারে হস্তক্ষেপ, নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ উপার্জন, ভূমি দখল, জলমহাল দখল, খাস জমি দখল, এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি করে ফায়দা নেয়া, বিবদমান বিষয়ে উসকানী দেয়া, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য সশস্ত্র মহড়া দেয়া, অসহায় নারীদের উত্যক্ত করাসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াত।

র‍্যাব-৩ এর সিও বলেন, ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ায় ভিকটিম ও তার বিধবা অসহায় মাকে বিভিন্ন সময়ে তারা কুপ্রস্তাব দিত। কিন্তু তাতে রাজী না হওয়ায় ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় তারা। বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়ে গ্রেপ্তার লাড্ডু মিয়া, জাহাঙ্গীর ও কাশেম পলাতক জীবন শুরু করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলে, লাড্ডু মিয়ার কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। সে নিরক্ষর। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। তার নামে ফেনী ফুলগাজী থানায় একটি ডাকাতি ও গণধর্ষণসহ তিনটি মামলা রয়েছে। ২০০৩ সালে গণধর্ষণের ঘটনার পর পলাতক জীবন শুরু হয় তার। উক্ত ঘটনার পর সে চট্টগ্রামে গিয়ে রিক্সা চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু কোন কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগত না। তারপর সে চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। একটি ডাকাতির ঘটনায় সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে সে গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবন যাপন করত। সে মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে এসে গোপনে তার স্ত্রী সন্তানের সাথে দেখা করত এবং তাদের নিকট হতে অর্থ নিয়ে যেত। তারপর সে কিছুদিন সিলেটে মাজার এলাকার ঘুরে বেড়ায়। একপর্যায়ে সে ঢাকায় এসে হকার হিসেবে ফুটপাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রয় করত। উক্ত পেশায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ার আশংকা থেকে সে দারোয়ানের চাকুরী নেয়। পলাতক সময়ে সে নিজেকে অলি নবী হিসেবে পরিচয় দিত। মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ হওয়ার পর সে ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App