×

জাতীয়

পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২৩ এএম

পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী হেফাজতের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা ও বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দেয়ার প্রকাশ্য হুঙ্কার দিয়ে আবারো দেশজুড়ে আলোচনায় আসে হেফাজত। ২০২০ সালে পৃথক পৃথক স্থানে চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ ফয়জুল করিম, হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হকের এসব ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িক উসকানির বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৩ জনকেই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদ ও মন্তব্য সাংবিধানিক অধিকার। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার প্রমাণ মেলেনি বলেও মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. তৈয়বুর রহমান। পিবিআইয়ের এই কর্তা ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার প্রকাশ্য হুঙ্কার যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা কী- এমন প্রশ্ন নির্মূল কমিটির। পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে আগামী সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি। গতকাল সোমবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ আলোচনা সভায় এই দাবি জানান তারা।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফাদার ড. তপন ডি রোজারিও, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, প্রণব মঠের অধ্যক্ষ স্বামী সঙ্গীতানন্দজী মহারাজ, মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা মহিব উল্লাহ শান্তিপুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান শাওন মাহমুদ প্রমুখ।

সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে সহিংসতার ম্যাপিং করা হয়। একটি স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী এই ষড়যন্ত্রটি করে। তারা ধর্ষণকে একটি অস্ত্র হিসেবে দেখে। নির্বাচন এলেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এই অস্ত্রের শিকার হয়। এই স্বাধীনতাবিরোধীদের সব যড়যন্ত্র নস্যাৎ করে সামনের নির্বাচনে আমরা অসাম্প্রদায়িকতার বিজয় দেখতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। আর নয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ষড়যন্ত্রকারীরা ওঁৎ পেতে আছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই পারে ওদের প্রতিহত করতে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির জয় হতে পারে না।

শাহরিয়ার কবির বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপের হুমকি দানকারী হেফাজতে ইসলামীর নেতা মামুনুল হক, জুনায়েদ বাবুনগরী এবং চরমোনাই পীরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পিবিআই ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে হেফাজতি ভাষায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আমরা এতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। সমাজ ও প্রশাসনের ভেতর যারা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাস ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখনো শান্তিপূর্ণ হবে না এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও বিনষ্ট হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিতে রাজনৈতিক মতলবে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। যা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন ’৭২ এর সংবিধানে। আমরা আশা করব সরকার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিভিন্ন তৎপরতার কারণে নির্বাচনের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ধরনের আতঙ্কের ভেতর থাকে। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনকালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের হাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার হন, ওই সময় ৩ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী একাত্তরের মতো প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমানে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিস্তার ঘটছে, যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ওয়াজ ও খুৎবার নামে ভিন্নধর্ম ও ভিন্নমতের মানুষদের প্রতি বিষোদগার করা হয় তা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এজন্য নির্বাচন কমিশন, সরকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App