×

জাতীয়

হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৫১ এএম

হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেই

সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেড ফাঁকা নেই

আলাদা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত ডিএসসিসির চিরুনি অভিযান চলছে ডিএনসিসি নামছে আজ

৩/৪ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাহাদি ইসলাম (১০)। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। প্লাটিলেট নেমে আসে ৬০ হাজারে। মাহাদিকে নিয়ে যাওয়া হয় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাকে ভর্তিও করা হয়। তবে হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেই। মাহাদির জায়গা হয় হাসপাতালের ৮ম তলায়, শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

৩ বছর বয়সি মেয়ে অর্পিতাকে নিয়ে সকাল থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করছেন লোপা সাহা ও দিলিপ সাহা দম্পতি। জানালেন হাসপাতালে বেড ফাঁকা না থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত অর্পিতাকে ভর্তি রাখছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিরুপায় হয়ে একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা।

শুধু মুগদা কিংবা শিশু হাসপাতাল নয়, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে এমন চিত্র। হাসপাতালগুলোয় এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই বেশি। বেড ফাঁকা না থাকায় অনেকের ঠাঁই হচ্ছে বারান্দায়, অনেককে রেফার করা হচ্ছে অন্য হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শাখার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৩৮ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স ১ থেকে ১৮ বছর। আর ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছে তাদের ৩৫ শতাংশ শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে ৬২ শতাংশ বিশোর্ধ্ব। ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য বেড আছে ৪০টি। এর বিপরীতে গড়ে ভর্তি প্রায় ৭০ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১১০ জন।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েকজন রোগীকে আইসিইউ ও সিসিইউতে রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য কিডনি রোগীর আইসিইউও ব্যবহার করা হচ্ছে। বেড ফাঁকা না থাকায় অধিকাংশ রোগীকে চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তাদের অনেককেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন ছিল।

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ সম্পর্কে গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, দৈনিক ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দীসহ রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দ বেড ফাঁকা নেই।

এদিন দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক অবহিতকরণ ও মতবিনিময় ওই সভা শেষে সচিব সাংবাদিকদের বলেন, এই পরিস্থিতিতেও প্রতিদিনই নতুন রোগী হাসপাতালে আসছে। আমরা তো তাদের ফেরত পাঠাতে পারি না। মেঝেতে হলেও জায়গা দিচ্ছি, চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। আমরা চাই না ২০১৯ সালের মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হোক। তিনি বলেন, হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত ফ্লুইড সরবরাহ করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। রোগী যদি মশারি না নিয়ে আসে, তাহলে হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

ড. আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, হটস্পটগুলোয় দ্রুত অভিযানের ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনগুলোকে বলা হয়েছে। শুধু অভিযান চালালেই হবে না, গণমাধ্যমে প্রচারে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে বর্জ্যরে জায়গায় কোনোভাবেই যেন পানি জমে না থাকে। ডাবের পানি ডেঙ্গু নিরাময়ে খুবই জরুরি, কিন্তু ডাবের খোসা সর্বনাশের কারণ। ময়লা দ্রুত পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আজকের ময়লা যেন আগামীকালের অপেক্ষায় না থাকে। এক্ষেত্রে ওয়াসার অনেক কাজ থাকে। তবে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে অভিযান পরিচালনা করেও কিছু করতে পারব না। মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আশপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

এদিকে ৫টি ওয়ার্ডে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিস্থিতি আরো গুরুতর। আজ থেকে ২৫ অক্টোবর উত্তর সিটির সব অঞ্চলে একযোগে বিশেষ অভিযান চলবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App