×

জাতীয়

সরাসরি রেল যোগাযোগের আওতায় চট্টগ্রাম সিলেট রাজশাহী ও খুলনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২৩ এএম

সরাসরি রেল যোগাযোগের আওতায় চট্টগ্রাম সিলেট রাজশাহী ও খুলনা

ফাইল ছবি

২০২৭ এর মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা

এবার চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি খুলনা পর্যন্ত রেলরুট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দেশের রেলওয়ে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ এ দুলাইনে বিভক্ত হওয়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও রাজশাহীর সরাসরি যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। তবে রেলের মহাপরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে রাজশাহী হয়ে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি দ্রুত গতির ট্রেন চালানোর কথা ছিল। কিন্তু দাতাসংস্থা নির্ধারণ, করোনাসহ নানা কারণে এ রুটে রেল যোগাযোগের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরো দেশকে রেল সংযোগের মধ্যে আনতে এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবললাইন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর জন্য এডিবি প্রথম পর্যায়ে ৫০০ মিলিয়ন ঋণ সহায়তা দেবে। রেলসূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-আখাউড়া ও লাকসাম-চট্টগ্রাম রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ এর মধ্যে শেষ হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজ রেল ঢাকা পর্যন্ত থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরো রুট এখনো মিটারগেজেই রয়ে গেছে। পূর্বাঞ্চলে মিটারগেজ লাইন ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও রাজশাহীর সরাসরি রেলযোগাযোগ গড়ে ওঠেনি।

রেলওয়ের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো দেশকে রেল সংযোগের মাধ্যমে আনতে এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তা বাস্তবায়ন হলে পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও খুলনার সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।

মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু যথাসময়ে বৈদেশিক ঋণের অভাবে এবং করোনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রকল্পটি সময়মতো শুরু করা যায়নি। পরে এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে অর্থায়নের প্রাথমিক নিশ্চয়তা পাওয়ার পর আশার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে সময়সীমা ২ বছর পিছিয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের পুরো মিটারগেজ রেল লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ শেষ করা সম্ভব বলে মনে করছে।

প্রকল্পের আওতায় লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেল লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে আনুমানিক মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রেলের গতি বাড়বে এবং ৩০ শতাংশ বেশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় কমবে প্রায় এক ঘণ্টা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, রেলওয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ একটি মহাপরিকল্পনা করেছে। মহাপরিকল্পনায় সারাদেশে পর্যায়েক্রমে রেল নেটওয়ার্ক ব্রডগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটের রূপান্তরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, একটি প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ শেষ

পর্যায়ের রয়েছে। কয়েক বছর আগে পরিকল্পনা নেয়া হলেও বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ায় টঙ্গী-আখাউড়া এবং লাকসাম-চট্টগ্রাম অংশের কাজ শুরু করা যায়নি। এডিবির সঙ্গে সময়মতো ঋণ চুক্তি এবং নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে আশা করা যাচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম ডুয়েল গেজে রূপান্তর হবে।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলের ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমাদের একটি মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। সেটির সময়সীমা বাড়তে পারে। তবে এ মহাপরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য সারা দেশে প্রতিটি জেলাকে রেলপথে সংযুক্ত করা। আর চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি খুলনা পর্যন্ত রেল চালু করা। পর্যায়ক্রমে আমরা সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন করব। তবে সমস্যা হচ্ছে পূর্বাঞ্চলে মিটারগেজ হওয়ায় পশ্চিমাঞ্চলের ব্রডগেজ লাইনের ট্রেন কমলাপুুর পর্যন্ত চলাচল করতে পারে। সে কারণে আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ (মিটার ও ব্রড) লাইন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি। এটি আপাতত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দাতা সংস্থা (এডিবি) পাওয়া গেছে। আমরা ২০২৭ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী হয়ে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চালাতে পারব। এটি দ্রুত গতির ট্রেন হবে যাতে সময় কম লাগে।

রেল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এডিবি ২০২৩ সালে লাকসাম-চট্টগ্রাম ডুয়েলগেজ প্রকল্পের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে টঙ্গী-আখাউড়া ডুয়েলগেজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দানের আশ্বাস দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর জন্য পরে সংস্থাটি আরও ঋণ অনুমোদন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রেলের প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইন ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর করতে ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। ব্যয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে, লাকসাম-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে খরচ ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যার ৮৫ শতাংশ বিদেশি ঋণদাতাদের কাছ থেকে ধার নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৮৬ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এডিবি এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটের অন্তর্ভুক্ত আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত একটি ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। প্রকল্পের অধীনে ৭২ কিলোমিটার রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরিত হবে। তবে মূল নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। গত বছর সেপ্টেম্বরে এর একটি অংশ চালু করা হয়েছে। যদিও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) বাধায় প্রকল্পটির দুটি স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় বছর ধরে। এতে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। স¤প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, গত বছর বিএসএফ প্রকল্পটির সালদা নদী ও কসবা স্টেশন এলাকায় কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে নানা উদ্যোগ নিলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। পরে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এর পরও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App