×

জাতীয়

সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০৬ এএম

সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতা

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সরকারের নানা কর্মকাণ্ড, গণতন্ত্র, রাজনীতি নিয়ে বিরোধী দলসহ অন্য দলের দ্বিমত থাকবে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের উন্নয়ন প্রশ্নে, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপারে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এক থাকার নামই দেশপ্রেম। তিরিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য বিদেশিদের আহ্বান জানানো শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৈনতাই নয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন বক্তব্যের জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।

চট্টগ্রামে দলীয় সমাবেশে গত বুধবার মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, শুধু র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে হবে না, দিতে হবে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর। এই শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই বক্তব্যেই থেমে থাকেননি বিএনপি মহাসিচব। গতকাল শুক্রবার ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের কালিবাড়ি নিজ বাসবভনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন না দিয়ে, সরকারের ওপর স্যাংশন দেয়া উচিত। র‌্যাব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান। সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, মালিক হুকুমদাতা। র‌্যাব কোনো কাজই করতে পারে না হোম মিনিস্টার বা প্রাইম মিনিস্টারের নির্দেশ ছাড়া। এই দেশে যত মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, এই দেশে যত গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয়েছে এবং মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে, বিভিন্ন আইন করে জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে; তার জন্য সম্পূর্ণভাবে, এককভাবে দায়ী বর্তমান অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারের প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি। পত্রিকায় দেখলাম, চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য। যদি এটা বলে থাকেন, এটা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যকে রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার দেশের বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়া নিজের দলের জন্য যেমন লজ্জাজনক ব্যাপার, তেমনি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। এমন বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত।

বিএনপি মহাসচিব হয়ে নিজের দেশ সম্পর্কে কেমন করে এমন বক্তব্য দিতে পারেন প্রশ্ন রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ভোরের কাগজকে বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অর্বাচীনের মতো কথা বলেছেন। গণতন্ত্রকে সুসংসহ করার জন্য বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনি তার দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতেই পারেন। কিন্তু দেশের ওপর, প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিদেশি নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বক্তব্য দেয়ার আগে তিনি একবারও ভাবলেন না কী বলছেন? তার এই বক্তব্য যেমন তার দলের জন্য লজ্জাজনক, আত্মমর্যাদাহানিকর, তেমনি দেশের জন্যও।

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচারই নয়, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূতও। জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশে অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকতেই পারে। দেশের সমস্যা আমরা দেশেই সমাধান করবো। কিন্তু দুইবার ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের মুখে এমন বক্তব্য লজ্জাজনক। বিদেশের কাছে দেশকে ছোট করেছেন তিনি। এটি আত্মঘাতী বক্তব্য। অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। জনগণের প্রতি, দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকলে এ ধরনের বক্তব্য তিনি দিতে পারতেন না। রাজনৈতিক নেতাদের চিন্তাভাবনা করে কথা বলা উচিত। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, বিএনপির এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। এর আগেও এ ধরনের কাজ তারা করেছে। কয়েক বছর আগে ওরা টাকা দিয়ে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা না দিতে ওয়াশিংটনের একটি পেপারে আর্টিকেল ছাপিয়ে ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের পোশাক শিল্পে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। শুল্ক নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দেশপ্রেম’ বোধ না থাকার কারণে বিএনপির এমন আগ্রাসী আচরণ। আর বিএনপির ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ মহব্বত সবার জানা। এই পাকিস্তান প্রেমের কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন তারা চায় না। তারা চায় ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, যদি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক মনে করেন, তাহলে এমন বক্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত। আর নিজেকে যদি বাংলাদেশের নাগরিক মনে না করেন, তাহলে দেশ ত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল কয়েকদিন আগেও বলেছেন, বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান আমল ভালো ছিল। তিনি মনেপ্রাণে একজন পাকিস্তানি। একটি দেশের ওপর স্যাংশন হলে কারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দলের মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম তা জানেন না? দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়, তা তিনি জানেন না? তিনি সবই জানেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App