×

জাতীয়

ফের জলে ডুববে ৩ সিটি?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৮, ১১:১৩ এএম

ফের জলে ডুববে ৩ সিটি?
ফের জলে ডুববে ৩ সিটি?
ফের জলে ডুববে ৩ সিটি?
 ঢাকা বর্ষার বাকি আর মাত্র দুই মাস। কিন্তু ঢাকার বড় অভিশাপ জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো সুখবর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। বর্ষা এলেই রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকে দিনের পর দিন। ব্যাঘাত ঘটে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে। তবে গত বছর এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। জলাবদ্ধতার এ সমস্যা নিরসনে এ বছর সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার পক্ষ থেকে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সারফেস ড্রেন ও ফুটপাতে সংস্কার কাজ করেছে। ওয়াসার পক্ষ থেকেও বেশ কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু সংস্থাগুলোর এসব কাজে ঢাকাবাসী জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে কতটুকু মুক্তি পাবেন? বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহসভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে অতিসম্প্রতি বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। শুধু রাস্তার দুপাশে বড় বড় গর্ত করে ড্রেন বসানোর কাজ করতে দেখা গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজের কোনো কাজ হয়নি। ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃবৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। গত বছরের পর থেকে জলাবদ্ধতার ব্যাপারে তেমন উন্নয়ন কাজ হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলো হলো- মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। গত বছর থেকে শুরু হওয়া এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী যেমন সুফল পাবেন, তেমনি কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চরম দুর্ভোগও পোহাতে হবে। কারণ এসব কাজের জন্য নগরীর সড়কগুলি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তার সঙ্গে মূল ড্রেনে পানি যাওয়ার সংযোগটি বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। সামান্য বৃষ্টি হলে পানি ড্রেনে যেতে পারবে না। ফলে রাস্তায় পানি জমে থাকবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ ছাড়া পানি যাওয়ার খালগুলো দখলমুক্ত বা নির্বিঘ্নে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকায় বর্তমানে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। এতে চলতি বছর বর্ষায় আরো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ মূল ড্রেনেজের সঙ্গে রাস্তার পানি যাওয়ার পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এ ছাড়া যে খালগুলো রয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ঢাকার সব খালেরই এ অবস্থা। এদিকে অন্য বছরের তুলনায় গত বছর বর্ষায় শান্তিনগর এলাকায় জলাবদ্ধতা কিছুটা কম ছিল। আগে যেখানে পানি নামতে সময় লাগত ২-৩ দিন। খুব অল্প সময়ে শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা কমবে বলে আশা করছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করছি। শান্তিনগর, আরামবাগসহ জলাবদ্ধপ্রবণ উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলোতে কাজ করছি। শান্তিনগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে আমরা সফলতা পেয়েছি। গত বছর এ এলাকায় ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা কমে গেছে। এ বছর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে নাজিম উদ্দিন রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। সব মিলিয়ে এ বছর জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী অনেকটাই রক্ষা পাবেন।মেয়রের এ বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা একমত পোষণ করে নগরবিদ ড. আকতার আরো বলেন, এটা ঠিক, শান্তিনগরে প্রতি বছর বড় ধরনের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে শান্তিনগর ও এর আশপাশ এলাকায় কিছু কাজ হয়েছে। এ বছর মানুষ কিছুটা সুফল পেতে পারে। কিন্তু অন্য এলাকার জলাবদ্ধতা কমবে না। সিটি করপোরেশন সব এলাকায় উল্লেখযোগ্য কাজ করেনি। তা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল কাজ তো ঢাকা ওয়াসার। এই সংস্থাটিও দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখাতে পারেনি। এই যখস্থায় আসন্ন বর্ষায় ঢাকাবাসীর উন্নয়ন সম্পর্কে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশে^র হোসেন বলেন, চাইলেই দুবছরের মধ্যে ঢাকার যানজট ও জলাবদ্ধতা সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। প্রত্যেক সমস্যার সমাধান আছে। শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প ও বন্যার সমাধান সহজে হয়নি। তিনি বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন দক্ষ ব্যবস্থাপনা। জলাবদ্ধতা কমাতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বিভাগগুলো যেসব কাজ করে, সেগুলোর যদি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হয়, তাহলে প্রতিটি কাজের সুফল পাওয়া যাবে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ জাগ্রত করা।
চট্টগ্রাম আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দেশের আমদানি রপ্তানির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নাগরিকরা আবারো ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শঙ্কা থেকে মুক্ত নন। কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে গত বছর বর্ষা মৌসুমে এ নগরী ৩০ দিনেরও বেশি সময় কোথাও বুকসমান আবার কোথাও তার চেয়েও বেশি পানিতে হাবুডুবু খেয়েছেন নগরবাসী। এবার বর্ষামৌসুম শুরুর আগে যদি নগরীর খাল-নালা-নর্দমাগুলোকে সংস্কার করে পানি অপসারণের উপযোগী করে তোলা না যায় তাহলে সে দুর্ভোগ যে আরো বেশি পোহাতে হবে এ ব্যাপারে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি নগর পরিকল্পনাবিদগণও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার এবং এ জন্য তাদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দেয়া হয়েছে, তাই চউক যেসব কাজ করবে সেখানে সিটি করপোরেশন কাজ করবে না। অপরদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেছেন, এই মাসের শেষ দিকে অথবা এপ্রিল মাসের প্রথম দিকেই নগরীর খাল-নালা-নর্দমার আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু করবেন। নগরবাসী অন্তত যাতে আশ্বস্ত হতে পারেন যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজটি শুরু হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন তাদের রুটিন ওয়ার্কগুলো করলে নগরবাসীই উপকৃত হবে। এ অবস্থার মধ্যে এটি সহজেই অনুমেয় যে অত্যন্ত দ্রুতগতি-পরিকল্পিত-সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে এ সমস্যা সমাধানে কাজ না করলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। চট্টগ্রাম নগরীতে নানামুখী উন্নয়নে নিয়োজিত সংস্থা বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় নেই। সমন্বয় না থাকায় তারা জলমগ্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে নিজেরা কতটা নির্দোষ সেটা প্রমাণেও অন্যের ওপর দায় চাপাতে বেশি ব্যস্ত। সিটি মেয়র, সাবেক মেয়র, চউক চেয়ারম্যান সবাই বলছেন, মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হলে এই দুর্ভোগ কমবে। তবে এবার চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে আগামী ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র, প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাসমূহ ও কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন এলাকাসহ চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা হতে মুক্তি পাবে। গত বছর চট্টগ্রাম নগরীর অন্তত ৪০ ভাগ এলাকা এই সীমাহীন জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল। নগরীর খাল-নালা-নর্দমার আবর্জনা পরিষ্কার ও পানি চলাচলের উপযোগী করার দায়িত্ব যে সংস্থার সেই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাই গত ২০ মার্চ ঘোষণা দিয়েছেন, নগরীর জলাদ্ধতা নিরসনে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বে নগরীর কোনো খালের খনন ও মাটি উত্তোলন করবে না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানালে এর জবাবে সিটি করপোরেশন তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সেদিন সকালে করপোরেশনের কনফারেন্স হলে নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি (সিডিসিসি)’র ১১তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা তাদের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থাপত্যবিদ আশিক ইমরান এ প্রতিবেদেককে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থা অর্থাৎ প্রধান দুটি সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের ঠেলাঠেলি দেখেছি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য এ দুটি সংস্থাই নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধ। তাই তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা দায়িত্ব এড়ানোর এই প্রবণতাটি দেখে অত্যন্ত হতাশ হচ্ছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে কাজ রয়েছে তারা সে কাজ করা থেকে অর্থাৎ নগরবাসীকে সেবাদান থেকে বিরত থাকতে পারে না। আর চউক-এর উচিত এই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প কাজ অত্যন্ত দ্রুত ও পরিকল্পিতভাবে শুরু করা। না হলে নগরবাসী আবারো গত বছরের মতো অথবা আরো বেশি দুর্ভোগে পড়বে।’ এদিকে গত ১১ মার্চ চউক মিলনায়তনে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মনিটরিং কমিটির প্রথম সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রথম ধাপে নগরীর ১৬ খাল খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই খাল খনন শুরু করবে চউক। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর প্রতিটি সেবা সংস্থাকে সমন্বয় করে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে খাল খননের কাজ দ্রুত করারও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। ‘বর্ষা মৌসুমের আগেই নগরীর খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। শুরুতেই পুনঃখনন, এরপরেই খনন কাজ করতে হবে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। ৩৬টি খালের মধ্যে এ মৌসুমে ১৬টি খালের ডিজাইন দেখে কনসালটেন্ট প্রকল্পের কাজে হাত দেবেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়েছি। চট্টগ্রামের উন্নয়নে এ প্রকল্পের গুরুত্ব অনেক বেশি। নগরীর নালা-নর্দমা-খাল খনন ও পরিষ্কারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সহায়তা কামনা করেছেন চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত নগরবাসীকে এটুকু আশ্বস্ত করতে চাই, এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা যেসব খাল দিয়ে অধিক পরিমাণ পানি নগর থেকে নেমে যায় সেগুলো পরিষ্কার ও খনন কাজ শুরু করব। এ মাসের শেষে অথবা আগামী এপ্রিলের প্রথম থেকেই এ কাজটি শুরু হচ্ছে। আশা করি, কাজ শুরু হলে নগরবাসী কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।’ চসিক কর্তৃপক্ষ আর কোনো খাল বা নালা খনন করবে না বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করব না। শুধু বলব, তাদের যে রুটিনওয়ার্ক রয়েছে সেটুকুও যদি করে তাহলে নগরবাসী উপকৃত হবেন কিভাবে?’ এদিকে গতকাল চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে চসিক খাল-নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও খননের যে কাজ শুরু করেছিল তা এখন বন্ধ আছে। কারণ চউকও একই কাজের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনে সে বরাদ্দ নেই। তা ছাড়া একই কাজের ওভারলেপিং হলে আমাদের অডিট আপত্তিতে পড়তে হবে। তাই আমরা গত ২০ মার্চ চসিক মিলনায়তনে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয় সভায় আমাদের বিষয়টি স্পষ্ট করেছি এবং চউক-এর কাছে জানতে চেয়েছি তারা যেবসব খাল ও নর্দমা পরিষ্কার করবে না সেগুলোর একটি তালিকা সপ্তাহখানেকের মধ্যে চসিককে দিতে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে নগরবাসীসহ নগরপরিকল্পনাবিদদের মতে, চউক-চসিকসহ অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করে বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের গৃহীত প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
খুলনা  পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এবং খালগুলো প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় দিন দিন খুলনায় জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর নি¤œাঞ্চল। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের। এই সমস্যা নিরসনে গত তিন বছরে দুটি নদী খনন এবং ৮টি খাল পুনঃখনন করে সেখানে ড্রেন তৈরি করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ড্রেন। এসব কাজে ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। কিন্তু এতো কিছুর পরেও জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাচ্ছে না। বরং মাঝারি বৃষ্টিতেই প্রধান সড়কগুলোয় তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। তিন বছরে এতো টাকা ব্যয়ের পরও নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। আগামী বর্ষায় অবস্থা কী দাঁড়াবে তা নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। জানা যায়, ২০০৯ সালে খালের দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করেন সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। ওই তালিকায় শহর ও শহরতলির ৫০টি খাল দখলের সঙ্গে ৮১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যুক্ত থাকার তথ্য উঠে আসে। তালিকায় দেখা যায় ৫০টি খালের মধ্যে ১১টির কোনো অস্তিত্ব নেই। বাকি ৩৯টি খালের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অবৈধ দখলে রয়েছে। ২২টি খালের মাধ্যমে নগরের পানি নিষ্কাশন হয়। এ খালগুলো নগর ও এর আশপাশে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করে নেয়ায় বছর বছর নতুন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যস্ততম রয়্যাল মোড়, শান্তিধাম মোড়, শিববাড়ি মোড়, তেঁতুলতলা মোড়, পিটিআই মোড়, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, প্রেসক্লাব মোড়, বেনী বাবু, স্যার ইকবাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, মিস্ত্রিপাড়া, রূপসা স্ট্যান্ড, আহসান আহম্মেদ, বাবুখান, টুটপাড়া সেন্ট্রাল ও শিপইয়ার্ড রোড, নতুন বাজার, কেডিএ অ্যাভিনিউ, খালিশপুর লাল হাসপাতাল মোড়, দেয়ানা প্রধান সড়ক, মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া, তেলিগাতী প্রধান সড়ক, বাদামতলা, সিমেট্রি রোডের এপিসি স্কুলের সামনের অংশ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, মিরেরডাঙ্গা প্রধান সড়ক ও বাদামতলা কেবল্ শিল্প এলাকার একাংশ পানিতে তলিয়ে থাকে। সড়কের পানি নর্দমায় নামার বদলে নর্দমার পানি উপচে সড়কে উঠে যায়। কেসিসি সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে (এলজিইডি) একটি প্রকল্প জমা দেয় কেসিসি। মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে একটি মাস্টারপ্ল্যান জমা দিতে বলা হয়। ২০১১ সালে নগরের ড্রেনেজব্যবস্থার একটি মাস্টারপ্ল্যান জমা দেয়া হয়। ওই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী খুলনা নগরের জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনের জন্য ১ হাজার ১৬৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও খালগুলো পুনঃখননের কথা বলা হয়। তা ছাড়া ৪টি শক্তিশালী পাম্প হাউস স্থাপন ও ৩৫ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণও ওই প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত। প্ল্যান বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করার কথা বলা হয়। ২০১২ সালের শুরুর দিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্পের আওতায় ২০০ কোটি টাকা ছাড় করে। ২০১৩ সালের মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কেসিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের আওতায় খুলনার ময়ূর ও হাতিয়া নদী খননসহ বিভিন্ন খাল পুনঃখনন ও অভ্যন্তরীণ ড্রেনগুলো পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৩টি ড্রেনের ৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার অংশ নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। ১৩টি ড্রেন নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ময়ূর ও হাতিয়া নদী খনন করা হয়েছে ১৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়ে। এ ছাড়া মতিয়াখালী খাল, ক্ষেত্রখালী খালের একাংশ, লবণচরা গোড়া খাল, তমিজউদ্দিন খাল, গল্লামারী খাল, নিরালা খাল প্রান্তিক খাল, নিরালা ইস্ট খাল, রায়েরমহল বাজার খাল ও রায়েরমহল মোল্লাপাড়া খাল সংস্কার করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি আনোয়ারুল কাদির বলেন, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও খালগুলো প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকায় দিন দিন জলাবদ্ধ এলাকার পরিমাণ বাড়ছে। যেহেতু খুলনায় ওয়াসা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে, তাই পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও তাদের হাতে নেয়া উচিত। এ ব্যাপারে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, জলাবদ্ধতার সংজ্ঞা অনুসারে নগরে কোনো জলাবদ্ধতা নেই। কিছুক্ষণ পানি আটকে থাকে মাত্র। তা ছাড়া জলবায়ুর প্রভাবে নগরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। এতে পানির উচ্চতাও বেড়েছে। যেহেতু নগরের পানি গিয়ে পড়ে ভৈরব নদে, তাই জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি সরতে কিছুটা সময় লাগে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি খাল অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলোও দখল মুক্ত হবে বলেও জানান মেয়র। তিনি বলেন, ভৈরব নদীর দুই পাড় উঁচু করে বাঁধ দেয়া খুবই প্রয়োজন। নগরীতে জলাবদ্ধ নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কাজ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App