×

জাতীয়

অজিত ডোভালের সফর নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৮, ১০:৫০ এএম

অজিত ডোভালের সফর নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার ডোভাল তিন দিনের সফরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা এসেছেন। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনভুক্ত (বিমসটেক) দেশগুলোর নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের দ্বিতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তার এ সফর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এবং উভয় দেশের নিরাপত্তা তথা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তাসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চোখ, কান এবং উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত ভারতীয় এই নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তার একাধিক বৈঠকের কথা রয়েছে। এ কারণে তার এ সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার প্রত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, সমুদ্র্র নিরাপত্তাসহ দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক সুরক্ষা-সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা ইস্যু তার এই সফরের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। তার এ সফরকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে তার পদের গুরুত্বের কারণে। কারণ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) নির্বাহী প্রধান এবং পদাধিকারবলে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এই অবারিত ক্ষমতার কারণে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদটি ওই দেশের ব্যুরোক্রেসিরও ক্ষমতার শীর্ষে। দেশের জন্য অভ্যন্তরে ও বাইরের হুমকিসংক্রান্ত এবং বৈদেশিক কৌশলগত যাবতীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়াই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব। এছাড়া আছে চীনের সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত সব ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে নিয়মিত সঙ্গী থাকা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তার কাজ যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্য গ্রহণ এবং সমন্বয়ের মাধমে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা। এ ছাড়া ব্যক্তি হিসেবে তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতার কারণেও তাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কারণ, ১৯৪৫ সালে উত্তরখন্ড প্রদেশে জন্ম নেয়া সাবেক এই গোয়েন্দা ও পুলিশের কর্মকর্তা গত ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের পঞ্চম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। তার আগে গত ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক ছিলেন। তার আগে আইবির অপারেশন শাখার প্রধান ছিলেন। সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তার সন্তান ডোভাল আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি শাস্ত্রে পড়ালেখা করেন। ১৯৬৮ সালে প্রথম ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে (আইপিএস) যোগ দেন। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে পাকিস্তানের ইসলামাবাদেও তিনি ৬ বছর ছিলেন। ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় চাকরি জীবন থেকে ২০০৫ সালে অবসরে যাওয়ার পর বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই নানা সময়ে তার সম্পর্কে উঠে এসেছে নানা গল্প। ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে কাটিয়েছেন তিনি। মুসলিম সেজে সাত বছর লাহোরেও কাটিয়েছিলেন তিনি। বিমসটেকের দাপ্তরিক তথ্যমতে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইস্যুকে সামনে রেখে এটি বিমসটেকের নিরাপত্তাবিষয়ক দ্বিতীয় সম্মেলন। সমগ্র বিমসটেকের নিরাপত্তাসংক্রান্ত এ সম্মেলন বা বিমসটেক সিকিউরিটি মিটস পর্বটির নেতৃত্বে ছিল ভারত। প্রথম বৈঠকটি গত বছরের ২১ মার্চ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। ‘বিমসটেকের ২০ বছর : বঙ্গোপসাগরের অভিমুখে’ শিরোনামে এর বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয় গত ২০ মার্চ। এর সচিবালয় ঢাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের পক্ষে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৯৯৭ সালে বিমসটেক গঠিত হয়। ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড প্রথম এ উদ্যোগ শুরু করে। মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান পরবর্তী সময়ে এ সংস্থায় যোগ দেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App