×

জাতীয়

সাফজয়ী ফুটবলারদের লাগেজে চুরি: নেই কূলকিনারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০৭ এএম

সাফজয়ী ফুটবলারদের লাগেজে চুরি: নেই কূলকিনারা

সাফজয়ী ফুটবলার

দেশে ফেরার পর সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের লাগেজ থেকে ডলার, কাপড়চোপড় ও অন্য জিনিসপত্র কিভাবে চুরি হয়েছে তা বের করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি ফুটবলাররা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর কোন জায়গা থেকে কে বা কারা লাগেজ ভেঙে চুরি করেছে সেটিও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডলার ও টাকা খোয়ানো তিন নারী ফুটবলার কৃষ্ণা রানি সরকার, শামসুন্নাহার ও সানজিদাসহ বাফুফের সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেও মেলেনি কোনো ক্লু। বিমানবন্দর ও বাফুফে ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণেও চুরির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় অন্ধকার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে তোলপাড় সৃষ্টি করা ওই ঘটনা।

পুলিশের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছে, চুরির ঘটনার পর রাজধানীর মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের হওয়ার পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী খেলোয়াড়দের ক্ষতিপূরণ দেয়ার পর তদন্তে আগ্রহ কমে যায় বাফুফের। এদিকে এ ঘটনায় বাফুফে বিমানবন্দর থানায় জিডি দায়ের করবে জানালেও পরে আর সেটি করা হয়নি। ফলে চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তরা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করেও পরে থেমে যায়। র‌্যাব-১ এর ছায়া তদন্তেও চুরির প্রমাণ পায়নি সংশ্লিষ্টরা। চুরির খবর পাওয়ার পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বলে আসছে, বিমানবন্দরে কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। তবে, নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে চুরির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জিডির তদন্তের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) উপকমিশনার (ডিসি) হাইয়াতুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, জিডি দায়েরের পর থেকেই পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়েছে। তবে, এখনো চুরির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, বিমানবন্দরে লাগেজগুলো নামানোর পর থেকে বাফুফে ভবনে খেলোয়ারদের রুমে পৌঁছানো পর্যন্ত যত জায়গায় সিসি ক্যামেরায় কাভার করেছে, সব ফুটেজ আমরা বিশ্লেষণ করেছি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো আলামত আমরা পাইনি।

এক প্রশ্নের জবাবে এসি আরো বলেন, ডলার ও কিছু জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় জিডি করার পর সংশ্লিষ্ট নারী ফুটবলার ও বাফুফের দুই প্রটোকল অফিসারসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। খেলোয়াড়েরা এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্যই দিতে পারেননি। উল্টো জানিয়েছে, তারা তালাবদ্ধ অবস্থাতেই লাগেজ পেয়েছেন। কিন্তু ভেতরে ডলার ও টাকা পাননি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরের ফুটেজ আমরা পুনরায় পর্যবেক্ষণ করে চুরির প্রমাণ পাইনি। সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে বাফুফে ভবনে সেগুলো আনা হয়। খেলোয়াড়রা পৌঁছানোর আগেই লাগেজগুলো পৌছায়। এরপরের ফুটেজেও চুরির আলামত পাওয়া যায়নি। সড়কের কোথাও বা দেশের বাইরে থেকে কিছু ঘটেছে কিনা সে বিষয়েও নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান।

প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর নেপাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সাফজয়ী নারী ফুটবল টিম ও কোচিং স্টাফরা দুপুরে ঢাকায় অবতরণ করে। পরে খেলোয়াড়দের ছাদখোলা বাসে রাজসিক সংবর্ধনা জানিয়ে বাফুফে ভবনে নেয়ার পর রাতে চুরির বিষয়টি টের পান ফুটবলার কৃষ্ণা রানি সরকার ও শামসুন্নাহাররা। শিরোপা জেতার উৎসবের মধ্যে চুরির এই খবর হতবাক করে সবাইকে। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ নারী দলের দুই ফুটবলার কৃষ্ণা রানি সরকার ও শামসুন্নাহারের লাগেজ থেকে খোয়া যায় এক হাজার ৩০০ ডলার।

এছাড়া মার্জিয়ার কিছু নেপালি রুপি ও সাবান চুরি হয়েছে। দলের ফিজিওর বেশ কিছু জিনিসপত্র খোয়া গেছে। পরে বাফুফের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শামসুন্নাহারকে এক লাখ টাকা, কৃষ্ণাকে দেড় লাখ টাকা ও সানজিদাকে আইফোন কিনে দেয়া হয়। যা খোয়া যাওয়া টাকার চেয়েও বেশি। ভুক্তভোগী নারী ফুটবলাররা এই ক্ষতিপূরণ পেয়ে খুশিও হন এবং এ ব্যাপারে তাদের আর কোনো অনুযোগ নেই বলে গণমাধ্যমকে জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App