×

জাতীয়

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই খুন করা হয় এমপি লিটনকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২২ পিএম

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই খুন করা হয় এমপি লিটনকে

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার সাবেক সাংসদ সাবেক সাংসদ আবদুল কাদের খান

# হত্যার পর ভারতে পালিয়ে আধার কার্ডে চন্দন রায় হয়ে যান শাওন রায়

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও পুনরায় ক্ষমতা পাওয়ার লোভ থেকেই মূলত এমপি লিটনকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন সাবেক সাংসদ আবদুল কাদের খান।

গত ২০১৬ সালে প্রথম দিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত চন্দন কুমার রায়কে জানান তিনি। গ্রেপ্তারকৃত চন্দন ও আবদুল কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে গত ২০১৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সবাই গ্রেপ্তার হলেও চন্দন পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে গিয়ে নিজের পরিচয় পাল্টে আধার কার্ড তৈরি করেছিলেন তিনি।

বহুলআলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ও ইন্টারপোল কর্তৃক রেড নোটিশ জারিকৃত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চন্দন কুমার রায়কে (৪৩) ছয়বছর পর সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এমপি লিটনের ছোট বোনের করা হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট জমা দেন। যার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন কুমার রায় ছাড়া বাকি সাতজন গ্রেপ্তার হয়। গত ২০১৯ সালেএ ২৮ নভেম্বর বিচার কার্যক্রম শেষে পলাতক আসামি চন্দনসহ সাতজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। আসামি সুবল চন্দ্র কারাগারে বিচারাধীন থাকাকালীন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আর পলাতক চন্দন কুমার রায়কে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোল কর্তৃক রেড নোটিশ জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতরাতে সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৩ ও র‌্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে চন্দন কুমার রায়কে গ্রেপ্তারে সমর্থ হই আমরা।

তিনি আরও বলেন, আবদুল কাদের খান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির বিষয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ উথাপন করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে নিহত মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন তৎকালীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

গ্রেপ্তারকৃত চন্দন কুমার রায় সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ছিল। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় এমপি লিটনের সমর্থিত লোকজনের সাথে তার মারামারির ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়। গ্রেফতারকৃত চন্দনের ভাষ্যমতে, এমপি লিটনের প্ররোচনায় একই সময়ে একটি মামলার আসামী দেখিয়ে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার করিয়ে ১৯ দিন কারাভোগ করানো হয়। তার বিরুদ্ধে থাকা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তিনি এমপি লিটনের সহযোগীতা চান; কিন্তু তাকে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলায় সে এমপি লিটনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালের প্রথমদিকে এমপি লিটন তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে আবদুল কাদের খানের পিএস ও এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে আবদুল কাদের খানের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। তারা এমপিকে খুনের পরিকল্পনা করে।

মঈন বলেন, চন্দনের ভগ্নিপতি সুবল রায় এমপি লিটনের বাড়ির দারোয়ান হিসেবে কাজ করার সুবাদে এমপি লিটনের গমনাগমনের বিষয়ে তথ্য জানা সহজ ছিল তার জন্য। এমপি লিটন হত্যা ঘটনায় চন্দন প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এমপি লিটনের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে আবদুল কাদের খান ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য সহযোগীদেরকে তথ্য দিতেন চন্দন। পরিকল্পনানুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে তাদের সহযোগী মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা ও ড্রাইভার হান্নান অস্ত্র চালানো ও হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত পলায়েনের প্রশিক্ষণ নেয়।

চন্দন রায়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ২০১০ সালের দিকে রাজধানীর একটি অনলাইন পোর্টালে দুই বছর সাংবাদিকতা করলেও গাইবান্ধায় ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে অংশ নেয়া শুরু করেন তিনি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর চন্দন পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গিয়ে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে ভূয়া নাগরিকত্ব, আধার বা রেশন কার্ড করে সেখানে অবস্থান করে। পালালেও রংপুর ও গাইবান্ধা সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় সেখান দিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাত। মাদকের অর্থ সংগ্রহ, মাদকের ব্যবসা তদারকী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। মাদক চোরাচালান সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষে পুনরায় পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যেত বলে জানায়। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App