×

জাতীয়

‘জয়বাংলা’র কবির প্রয়াণ দিবস আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ০৯:০৯ এএম

‘জয়বাংলা’র কবির প্রয়াণ দিবস আজ

জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম

জাতীয় কবি নজরুলকে শুধু বিদ্রোহী বা সাম্যের কবি নামেই ডাকা হয়। কেউ বলেন প্রেমের কবি। কিন্তু তিনি যে ’জয় বাংলার’ও কবি এই বিষয়টা আঢ়ালেই থেকে যায়। আজ ১২ ভাদ্র ‘জয়বাংলা’র কবির ৪৬তম প্রয়াণ দিবস। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের এই দিনে (২৯ আগস্ট, ১৯৭৬) বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, জয় বাংলার কবি কাজী নজরুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই চিরবিদ্রোহী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মাদারীপুরের স্কুলশিক্ষক পূর্ণচন্দ্র। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা। যিনি শিকার হয়েছিলেন জেল-জুলুম-নির্যাতনের। তার সেই আত্মত্যাগ আর স্বজাতিবোধ মুগ্ধ করেছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। পূর্ণচন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বহরমপুর জেলে বসে নজরুল লিখেছিলেন ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতা। যে কবিতা তিনি পাউরুটির ভেতরে ভরে পাঠিয়েছিলেন জেলের বাইরে। যা পাঠ করা হয় মাদারীপুরে বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাসের অভ্যর্থনা সভায়। সেই কবিতায় কবি ‘জয় বাংলা’ শব্দটি লিখেছিলেন। কবিতার কয়েকটি চরণে লেখা হয়- ‘জয় বাঙলা’র পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি অন্তরীণ, জয় যুগে যুগে আসা সেনাপতি, জয় প্রাণ অন্তহীন’।

‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ও জয় বাংলা’ শিরোনামে একটি লেখায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, ফোকলোরবিদ প্রয়াত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানও উল্লেখ করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি সেই কবিতা থেকেই নিয়েছিলেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ১১৬তম জন্মবার্ষিকীতে কুমিল্লার টাউন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতাম সেটি কবি নজরুলের একটি কবিতা থেকে বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। তাই কাজী নজরুল শুধু বিদ্রোহ বা প্রেমের কবিই ছিলেন না। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনারও কবি। তার ‘হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ’ শিরোনামের কবিতায় কবি লিখেছেন- ‘যে-লাঠিতে আজ টুটে গম্বুজ, পড়ে মন্দির-চূড়া সেই লাঠি কালি প্রভাতে করিবে শত্র-দুর্গ গুড়া!… কবি আরও লিখেছেন, ‘প্রভাতে হবে না ভায়ে-ভায়ে রণ/ চিনিবে শত্র, চিনিবে স্বজন’। দেশে সাম্প্রদায়িক সুরক্ষা, আর ধর্মে ধর্মে, বর্ণে বর্ণে মানুষের হানাহানি বন্ধে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমাজ বাস্তবায়নে কবি নজরুল আজ বড় প্রাসঙ্গিক।

তিনি একাধারে সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং দার্শনিকও ছিলেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য রূপকার। কবিতার পাশাপাশি সঙ্গীতেও তিনি সৃষ্টি করছিলেন অনন্যতা। রাগ-রাগিণী আর শব্দের ব্যঞ্জনায় গান ও কবিতার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছিলেন, একইভাবে উপন্যাসে জীবনকে তুলে এনেছেন তীক্ষè দৃষ্টিতে। লেখনির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে। দারিদ্র্যতার কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় কবিকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। শুধু কলমেই দ্রোহের আগুন জ্বালাননি, দেশমাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধও করেছেন সৈনিক কবি।

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে উৎখাতের আন্দোলনে তার রচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধে উঠার কারণে কবিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দি হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহার আদালতে দেয়া ওই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ’রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। বন্দিদশায়ও তিনি রচনা করেন অসংখ্য গান, কবিতা ও উপন্যাস।

১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারানোর আগ পর্যন্ত নজরুল ছিলেন সৃষ্টিশীল। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগিবীণা’। এর মাধ্যমে বাংলাকাব্য জগতে নতুন দিনের সূচনা হয়। এ কাব্যগ্রন্থসহ ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী কামাল পাশা’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘আগমনী’, খেয়াপারের তরণী’সহ প্রতিটি কবিতাই বাংলা কবিতার ভুবনে নতুন বাঁক সষ্টি করে। সাহিত্যের সব সৃজনশীলতাকে ছড়িয়ে সঙ্গীতেও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রাখেন জাতীয় কবি। প্রায় চার হাজার গান রচনা ও সুর করে এদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের জন্য এনেছেন বিরল সম্মান ও খ্যাতি।

ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে এনে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে এদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরর ২১ ফ্রেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।

নানা আয়োজেনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিনব্যাপী জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে থাকছে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা, ফাতেহা পাঠ, দোয়া, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App