×

জাতীয়

কর্তব্যবোধ, অসীম সাহসই বাঁচিয়ে রেখেছে আ.লীগকে: মতিয়া চৌধুরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২২, ১২:০৪ এএম

বিএনপি ‘পেয়ারে পাকিস্তানের’ জন্যই আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে আগস্ট মাসকে বেছে নেয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, আগস্ট এলেই তারা উজ্জীবিত হতে চায়। তাদের ভেতর পাকিস্তান ভাব কাজ করে। ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। এই অঙ্কটা মেলাতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। তাই আগস্ট মাসে তাদের ভেতরে একটা জোস কাজ করে। তারা আবারো পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের তাদের অসমাপ্ত কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে।

শনিবার (২০ আগস্ট) নিজ বাসভবনে একুশে আগস্ট নিয়ে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করা বা কাবু করা হচ্ছে রাজনৈতিক খেলা। কিন্তু ফিজিক্যাল এ্যানেহিলেশনটা শুরু হয়েছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে। শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছেন। ১৫ আগস্টের সেই শক্তিই একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে।

সাবেক এই কৃষিমন্ত্রী বলেন, সুস্থ রাজনীতি করলে সবাই যে এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে- আমরা সেটা বলি না। মত-পথ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু মূল কথাটা থাকবে যে আনুগত্যটা কোথায়। আনুগত্য থাকবে দেশের মাটির কাছে। কিন্তু বিএনপির আনুগত্য হলো পাকিস্তানের কাছে। বিএনপি ক্ষমতায় এসেই চার মূলনীতি বাদ দিয়েছিল, এটি ভুলে গেলে চলবে না। তারা বারবার সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করছে। এই কাজটা বিএনপি অনেকটা জিদ ও আক্রোশের সঙ্গে করে।

তিনি বলেন, রাজনীতি হবে মানুষের জন্য, কোনো আক্রোশ থেকে রাজনীতি হতে পারে না। বিএনপির রাজনীতি শুরুই হয়েছে আক্রোশ আর পেছনের দিকে হাঁটার মধ্য দিয়ে। আমরা ¯স্লোগান দিতাম, ‘জিন্নাহ সাহেবের পাকিস্তান, আজিমপুরের গোরস্থান’। বিএনপি সেই গোরস্থান থেকে পাকিস্তানকে তুলে নিয়ে আসতে চায়। রাজনীতিতে একটা কথা আছে- ইতিহাসের শিক্ষা হলো এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। বিএনপি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। বিএনপির কার্যকলাপ বিচার বিশ্লেষণ করলেই দেশের মানুষ এটি দেখতে পাবে।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আওয়ামী লীগ যত আঘাত পায় ততই শানিত হয়। একুশে আগস্টের ফলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা আরো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কর্মীদের ঝিমুনি কেটে গেছে। আওয়ামী লীগ সবসময় সতর্ক এবং অতন্দ্রভাবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বিভীষিকাময় দিনটির স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, বক্তব্য দিয়ে ট্রাক থেকে নেমে আমি ট্রাকের সামনে বসা নারীদের সঙ্গে দাঁড়ালাম। আমার পাশেই আইভি ছিল। নেত্রীর বক্তব্যের শেষের দিকে আমরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আইভির পায়ের সমস্যা ছিল, সে কারণে সে জোরে হাঁটতে পারত না। আমি তাকে বললাম, তুমি তো মিছিলে জোরে হাঁটতে পারবে না, আমি মিছিলে থাকব এই কথা বলে মঞ্চের পাশেই যে সোনালি ব্যাংক আছে, তার সামনে একটা কদম গাছ আছে, সেই পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। এর মধ্যেই পটকার মতো শব্দ শুরু হলো। আমি ভাবলাম আতঙ্কিত করার জন্য হয়তো এটা ঘটিয়েছে। সামনের দিকে এগুনোর চেষ্টা করছি, তখন আমাদের দলের একজন কর্মী আমাকে ধরে টেনে স্টেডিয়ামের সামনে যে ডিভাইডারটা আছে, ওই পর্যন্ত নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেঁচে গেছেন। যদি দ্রুত তাকে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে না তোলা যেতো, তাহলে কী হতো- আল্লাহ জানেন। নেত্রী নিজেও বলেন, আল্লাহ তার হাত দিয়ে ভালো কিছু কাজ করাবেন, মানুষের সেবা করাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন, সেজন্যই হয়তো তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। না হলে এই অলৌকিকভাবে তিনি কেন বেঁচে যাবেন?

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আইভিসহ আমাদের বহুকর্মী সেদিন মারা গেছে। এর মধ্যেও আওয়ামী লীগ কর্মীরা একে অন্যের প্রতি কর্তব্যবোধ দেখাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি। এই কর্তব্যবোধ, অপরিসীম সাহসই আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছে। নেত্রীকে গাড়িতে ওঠানোর সময় তার দেহরক্ষী মাহবুব গুলিতে মারা গেল। ঘাতকদের কীরকম আক্রোশ ছিল, সেটা ভাষায় বলার মতো নয়। নইলে নেত্রী গাড়িতে ওঠার সময়েও তারা গুলি করছে! যেভাবেই হোক- শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করে দিতে হবে। গাড়ির ড্রাইভারও অসীম সাহস দেখিয়ে গাড়ি চালিয়ে নেত্রীকে সুধাসদনে নিয়ে গেছেন। গাড়িটা যদি কোনোভাবে আটকা পড়ত, তাহলে তো নেত্রী সুধাসদনে যেতে পারতেন না!

তিনি বলেন, এরপর একটা বেবিট্যাক্সি নিয়ে আমি সোজা সুধাসদনে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন নেত্রী। বলছেন, তোমরা রক্ত দাও। আমাদের ডাক্তারদের খবর দাও। যে আসছে, তাকেই তিনি আহতদের খুঁজে খুঁজে বের করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। টাকার ব্যবস্থাও করছেন। সেদিন আমাদের নিরস্ত্র কর্মীরা একদিকে মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা, অন্যদিকে নিজের সহকর্মীদের রক্ষা করার জন্য লড়াই করেছে। এটা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ছাড়া সম্ভব হবে না। এজন্যই আওয়ামী লীগ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App