×

জাতীয়

কোড নম্বরের সাহায্যে মাদক পাচার করতো চক্রটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০১:১৩ পিএম

কোড নম্বরের সাহায্যে মাদক পাচার করতো চক্রটি

রবিবার ট্রাকের প্রকোষ্ঠ থেকে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকার ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি: ভোরের কাগজ

কোড নম্বরের সাহায্যে মাদক পাচার করতো চক্রটি

রবিবার ট্রাকের প্রকোষ্ঠ থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকার ইয়াবা ও গ্রেপ্তারকৃত তিনজন। ছবি: ভোরের কাগজ

# গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করে ইয়াবা পাচার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- আমিনুল ইসলাম (২৬), নুরুল ইসলাম (৪৮) ও হেদায়েত উল্লাহ (২০)। শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ইয়াবা পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। অভিনব কায়দায় ট্রাকের তেলের সিলিন্ডারের মধ্যে ইয়াবা পাচারকালে এক লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩ এর একটি দল। বেশি টাকা আয়ের লোভে ইয়াবা পরিবহনের জন্য ভাড়ায় খাটছিল ট্রাকটি। গাড়ির মালিক সোহেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তেলের সিলিন্ডারের মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করেছিল।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচারের উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ইয়াবা টেকনাফের ডিলারের কাছে আসে। টেকনাফের ডিলার ও ঢাকার ডিলারের পরিকল্পনামত ইয়াবা বিভিন্ন সংখ্যায় চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে বিশেষ কোড নাম্বার দিয়ে প্যাকেটজাত করে থাকে। এই কোড নাম্বার দেখেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ডিলাররা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী চালান পৌঁছে দিয়ে থাকে।

রবিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ট্রাকের প্রকোষ্ঠ থেকে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকার ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ চক্রটি টেকনাফ থেকে ইয়াবা রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিত। মূলত ট্রাকের মালিক সোহেলের নেতৃত্বে গত চার-পাঁচ বছর ধরে ওই চক্র পরিবহন ব্যবসার আড়ালে টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

[caption id="attachment_361499" align="aligncenter" width="1142"] রবিবার ট্রাকের প্রকোষ্ঠ থেকে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকার ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

তিনি আরও বলেন, চক্রটি পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীকে মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ইয়াবা ট্যাবলেট পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করে থাকে। ওই ইয়াবা পাচার চক্রের সদস্য সংখ্যা সাত-আটজন। ট্রাক মালিক সোহেল ও গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল টেকনাফের সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে।

এরপর সোহেলের নির্দেশনায় গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। জানা যায় যে, চকরিয়ায় একটি গ্যারেজে বিশেষ পদ্ধতিতে গাড়ির তেলের সিলিন্ডারের মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করে তার মধ্যে ইয়াবা লুকিয়ে পরিবহন করা হয়। এভাবে অভিনব কায়দায় তেলের ট্যাংকিতে ইয়াবা রাখার পর সোহেল, আমিনুল ও নুরুল ইসলাম প্রথমে ট্রাক নিয়ে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। চট্টগ্রাম আসার পর সোহেল গাড়ী থেকে নেমে যায়। এরপর আমিনুল, নুরুল ইসলাম ও হেদায়েতকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পথিমধ্যে তারা সীতাকুন্ড ও কুমিল্লায় যাত্রা বিরতি করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা আরো জানায়, ইয়াবার চালানটি তারা গাজীপুরে সরবরাহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তাদের ট্রাকে অন্য কোন মালামাল ছিল না। পথিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্টে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায় যে গাজীপুর থেকে মালামাল লোড করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসার জন্য তারা খালি ট্রাক নিয়ে গাজীপুর যাচ্ছে। ট্রাকের তেলের ট্যাংকে ইয়াবাগুলো লুকিয়ে রাখায় তারা নিশ্চিত ছিল যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশীতে উক্ত ইয়াবার সন্ধান পাওয়া যাবে না।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল পেশায় একজন ট্রাকের হেলপার। সে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। চট্টগ্রাম ট্রাক স্ট্যান্ডে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য ট্রাক মালিক সোহেলের সাথে তার পরিচয় হয়। অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে সোহেলের প্ররোচনায় সে কক্সবাজার হতে ঢাকাগামী ট্রাকে হেলপারের কাজ শুরু করে। সে বিগত চার-পাঁচ বছর যাবত ওই ইয়াবা পাচার চক্রের সঙ্গে কাজ করছে। সে মূলত সোহেলের নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌছে দিতে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে থাকে। যখন কোন মাদকের চালান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় তখন আমিনুল ট্রাকের হেলপার হিসেবে উপস্থিত থাকে। মাদকের একটি চালান নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারলে আমিনুল চালান প্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা পেত। গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল একাধিক মামলায় ইতোমধ্যে দুইবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত নুরুল বান্দরবান এলাকায় মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ট্রাক মালিক সোহেলের সহযোগিতায় সে ইয়াবা পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। ঘটনার দুই দিন পূর্বে ইয়াবা পরিবহনের উদ্দেশ্যে সোহেল ও নুরুল টেকনাফ যায়। তখন আমিনুল ও হেদায়েত গাড়ীতে হেলপার হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। টেকনাফের সিন্ডিকেট হতে ইয়াবা সংগ্রহের পর ট্রাকের তেলের ট্যাংকিতে ইয়াবা বহন করে নুরুল ও সোহেল খালি ট্রাক চালিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। এরপর সোহেল গ্রেপ্তারকৃত আমিনুলকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে নেমে যায়। এরপর চট্টগ্রাম হতে নুরুল ও হেদায়েত পালাক্রমে গাড়ি চালিয়ে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসে। আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ট্রাক চালক নুরুলের গাড়ি চালনায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। এমনকি তার ভারী যানবাহন চালনার কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ট্রাকের হেলপার হিসেবে মালামাল লোড আনলোড করতে গিয়ে গাড়ি স্বল্প দূরত্বে স্থানান্তর করার মাধ্যমে সে ড্রাইভিং শিখেছে। সে বিগত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের পরিবহন চালনা করছে। মাদকের একটি চালান পৌছাতে পারলে সে ৫০ হাজার টাকা পেত বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃত হেদায়েত পূর্বে টেম্পু চালক ছিল। সে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। তারও যানবাহন চালনার কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। সে হেলপারের কাজ করতে গিয়ে গাড়ি চালানো শিখে। সোহেল ও হেদায়েতের উভয়ের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হওয়ায় এলাকার বন্ধুদের মাধ্যমে তার সোহেলের সাথে পরিচয় হয়। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের আশায় সে সোহেলের সাথে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সে সোহেলের বিশ্বস্ত হওয়ায় মাদক বহনের সময় সে গাড়ির চালক ও হেলপার উভয় ভূমিকা পালন করে থাকে। মাদকের একটি চালান পৌঁছাতে পারলে সে ১৫-২০ হাজার টাকা পেত বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও সোহেলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App