×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, ষড়যন্ত্রের বিচার হয়নি: পঙ্কজ ভট্টাচার্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২, ১২:০৮ এএম

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিছক হত্যাকাণ্ড নয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর নেই। রহস্য উদ্ঘাটনে উত্তরগুলো জানা প্রয়োজন। সুষ্ঠু-নির্মোহ তদন্ত হলে চিত্রনাট্যে কী পরিকল্পনা হয়েছে, অঙ্ক-দৃশ্য কেমন ছিলÑ সবকিছু বেরিয়ে আসবে। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য।

পনের আগস্টের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র ও শ্বেতপত্র প্রকাশ কেন জরুরি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছে। বিচার যথেষ্ট নয়, ষড়যন্ত্রে কারা মদত দিয়েছে, কারা পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ দরকার। অবশ্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কিছুটা ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি খুনিদের বয়ানে। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচনে শ্বেতপত্র প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক কুশীলবদের ভূমিকা এখনো উন্মোচিত হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আংশিক বিচার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠন করে শ্বেতপত্র প্রকাশ প্রয়োজন- জাতির স্বার্থে, ইতিহাসের স্বার্থে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা একক দেশীয় ষড়যন্ত্র ছিল না। সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার মিলে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা করে- বিষয়টি মোটেই এত সরল নয়। ষড়যন্ত্র দেশ-বিদেশ মিলে। বামপন্থি কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতায় উঠেপড়ে লেগেছিল- হক, তোয়াহা, সিরাজ সিকদার, নকশালরা। রাজশাহী অঞ্চলে থানা দখল করেছিল তারা। ভাসানীর হক কথা ভারতবিদ্বেষী ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রচারণায় তুঙ্গে ছিল। মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। ১৫ আগস্টের সকালে জাসদের কর্মীরা রাজধানীর রাজপথে ‘রুশ-ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’- শ্লোগানে মিছিল করেছে। তবে অনেকেই সমর্থন করেনি। মোজাফ্ফর আহমেদ মোশতাকের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি। মোশতাকের নিজের ভাগিনা ন্যাপ নেতা আব্দুল বারী তাকে সমর্থন করেননি। সিপিবির কেউ দেখা করেননি। এই উদাহরণও রয়েছে।

দলের ভেতরেই মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল মন্তব্য করে প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, চক্রান্ত করে তাজউদ্দীনকে সরিয়ে মোশতাক বঙ্গবন্ধুর ডান হাত ভেঙে দিয়েছিল। ফলে আঘাত হানা সহজ হয়। ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল খোন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমান, মাহবুবুল আলম চাষী। জাসদের বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতাকে পুঁজি করেছে খুনিরা। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই ষড়যন্ত্রে ছিল। তিনি বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য ঘাতকের দল বন্দুকের নল তাক করে জাতির পিতার দিকে। ষড়যন্ত্র সফল করতে মরিয়া ছিল দেশি-বিদেশি শক্তি। আর সেই ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই কিলিং মিশনে অংশ নেয় খুনিরা। বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় ৬ ফুটের হিমালয়সম দেহ।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যস্তরের অফিসারদের একাংশ একটা রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে- বুলগেরিয়ান রাষ্ট্রদূত বায়েজিদের এমন তথ্য আমি মুজিব ভাইকে জানিয়েছিলাম। তিনি খবরটা শুনে বললেন, ‘আমার বুকে অস্ত্র তাক করতে মেজর ডালিম, রশিদ ও ফারুকদের কি হাত কাঁপবে না?’ খুনিদের হাত কাঁপেনি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সফল হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে শুধু খুনিদের বিচার হয়েছে, এখন এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো প্রয়োজন। আর তা ইতিহাসের প্রয়োজনেই আমাদের করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App