×

জাতীয়

দর্জি থেকে মানবপাচারকারী কালাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২২, ০২:২৪ পিএম

দর্জি থেকে মানবপাচারকারী কালাম

সোমবার দর্জি থেকে মানবপাচারকারী হওয়া মো. আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি: ভোরের কাগজ

# হাতিয়ে নিয়েছে তিন কোটি টাকা

চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও প্রতারণা বিদ্যায় মুন্সিয়ানা আছে মো. আবুল কালামের। দুবাইয়ে সামান্য দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশেও দর্জি ব্যবসায় নেমে অসফল হলে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর নামে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে যান তিনি। ইউরোপে ও মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠানোর নামে মানবপাচার করে আসছেন তিনি। এভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আবুল কালাম।

রাজধানীর পল্টন এলাকা হতে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা আবুল কালামকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান, র‍্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।

সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

র‍্যাব-৩ এর সিও গ্রেপ্তারকৃতর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মালিকের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় গত ২০১১ সালে দেশে ফিরে আসেন। তারপর তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করেন তিনি। এতে অসফল হলে ২০১৯ সাল থেকে মানবপাচার শুরু করেন। প্রথমে ভুক্তভোগীদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিতে থাকেন। পরে ভিসা, টিকিট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্সসহ আরও অনেক কিছুর খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই একজনকে ভ্রমন ভিসায় দুবাইও পাঠায়। এছাড়া, ভুক্তভোগীদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা, কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। ওই নিবন্ধন বিএমইটিকার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ভুক্তভোগীরা অজ্ঞতাবশত ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করেন। তারপর ভুক্তভোগীরদন হাতে ভূয়া ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে। এভাবে ধৃত আসামি প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, ধৃত আসামি সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তার জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছিলেন। ভূয়া ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে যারাই গেছেন তাদেরকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত আসা ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে ধৃত আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

গত তিন বছরে চক্রটি অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র প্রায় তিনশ’ লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App