ম্যালওয়্যার ইনজেক্টের মাধ্যমে নামিদামি কোম্পানির ই-কমার্স ওয়েবসাইট হ্যাক করে অ্যাডমিন বনে যেতেন হ্যাকার চক্রের সদস্যরা। পরে বিভিন্ন পণ্য অর্ডার করে পেমেন্ড সম্পূর্ণ করা গ্রাহকদের ঠিকানা পরিবর্তন করে নিজেদের ঠিকানা দেয়া হতো। ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানি হ্যাকারদের এই কারসাজি বুঝতে না পেরে পরিবর্তিত ঠিকানায় পণ্য পাঠিয়ে দিতো। পণ্যের ডেলিভারি পাওয়ার পর আবারও ওয়েবসাইটে ঢুকে গ্রাহকের আসল ঠিকানা হালনাগাদ করে দেয়া হতো। এতে গ্রাহকের ফোন নাম্বারে পণ্য ডেলিভারির মেসেজ গেলেও বাস্তবে কোনো পণ্য পেতেন না। পরে ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানি পুনরায় একই পণ্য গ্রাহককে বুঝিয়ে দিতে হতো। ফলে, একদিকে যেমন কোম্পানির ক্ষতি হতো, অন্যদিকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো গ্রাহকদের।

এভাবে প্রতারণা করে আসা একটি হ্যাকার চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মূলহোতা মো. শহিদুজ্জামান ওরফে রনি, মো. মাজহার ইসলাম ওরফে রুবেল ওরফে রুমেল ও মো. আমিন আজাদ। বুধবার রাজধানী ঢাকা ও চাঁদপুরে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতকৃত তিনটি মোবাইল, একটি টিভি ও একটি রেফ্রিজারেটর উদ্ধার করা হয়েছে। ডিবি বলছে, চক্রটি স্যামসাং ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার ও ডিস্ট্রিবিউটর ‘ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের’ ওয়েবসাইট হ্যাক করে ১৫ দিনের মধ্যে ১০ জন গ্রাহকের পাঁচ লাখ টাকার পণ্য হাতিয়ে নেয়।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারিক বিন রশিদ বলেন, চক্রের প্রধান হ্যাকার রনি ও তার সহযোগী মাজহার ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি সিস্টেম হ্যাক করে অ্যাডমিন প্যানেলে প্রবেশ করেন। কোনো পণ্য ভেলিভারির ঠিক আগ মুহূর্তে গ্রাহকের ঠিকানা পরিবর্তন করে নিজেদের ঠিকানা দিতেন। ভুয়া নিবন্ধিত সিমের মাধ্যমে সেই পণ্য রিসিভ করতো চক্রের সদস্য আমিন আজাদ। পণ্য হাতে পাওয়ার পরেই গ্রাহকের আসল ঠিকানা হালনাগাদ করে দিতেন রনি। পরে সেই পণ্যগুলো কিছুটা কম দামে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া হতো।

ডিসি আরও বলেন, এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন হ্যাকার গ্রুপের যোগাযোগ রয়েছে। তারা সরকারি ওয়েবসাইট, ব্যবসায়ী ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন ব্যক্তির ই-মেইল হ্যাক করতো। চক্রের মূলহোতা এইচএসসি পাশ করা রনি ফ্রিল্যান্সিং পেশা থেকেই হয়ে ওঠেন হ্যাকার।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রতারণা করেছে কিনা রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসবে।

ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের হেড অফ বিজনেস মো. আতাউল হক বলেন, কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের পর আমাদের আইটি টিম ওয়েবসাইট হ্যাকের বিষয়টি বুঝতে পারে। পরে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।