×

জাতীয়

জার্মান রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়ায় বিব্রত বিএনপি: সেদিন কী ঘটেছিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২১ এএম

জার্মান রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়ায় বিব্রত বিএনপি: সেদিন কী ঘটেছিল

প্রতীকী ছবি

ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়ায় বিব্রত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত ১৭ মার্চ বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সঙ্গে বৈঠকের দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মিডিয়া ব্রিফিংয়ের এক মাস পর গত বুধবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার। তার অসন্তুষ্টির পর এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিকদের ওপর ভর করে ভোটের আগে মাঠ গরম করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু জার্মান রাষ্ট্রদূতের ‘অসন্তুষ্টির’ পর সেই পরিকল্পনায় ছেদ পড়ছে। কূটনৈতিকদের চোখে আপাতত ‘অবিশ্বাসী’ হিসেবে চিহ্নিত হলো বিএনপি। এতে দলটির পররাষ্ট্র উইংয়ের নেতাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

গত ১৭ মার্চ ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পর সাংবাদিকরা বৈঠকের বিষয়ে বিশেষত, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য জানতে চান।

জবাবে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সবাই অবগত আছে। এখানে নতুন করে বলার কিছু নেই। এসব ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন’। এমনকি এ ব্যাপারেও জার্মানের পর্যবেক্ষণ আছে বলে জানান তিনি।

গণমাধ্যমে দেয়া বিএনপি নেতার এমন বক্তব্যে গত বুধবার অসন্তোষ প্রকাশ করে জার্মান রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, কিছু বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিতভাবে কথা বলেছে বিএনপি। বৈঠকে যা আলোচনা হয়নি তা নিয়েও তারা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার জানান, তাকে বিএনপির নেতারা ভুলভাবে উদ্ধৃত করেছেন, যাতে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি পড়েছি (খবরের কাগজে), বিএনপি আমাকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। কথাটি এভাবে সত্য নয়। কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নয়, আমি সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের বৈঠকটি যদি ‘ক্লোজডোর’ হয়ে থাকে তাহলে তা নিয়ে বিএনপির আলাদা করে সংবাদ সম্মেলন করা কূটনৈতিক কৌশলের মধ্যে পড়ে না। তাছাড়া বিএনপির এ ধরনের আচরণ অবশ্যই অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের নজরে আসবে। এর ফলে তারা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করতে সতর্ক থাকবে; এমনকি আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে করা বিএনপির অভিযোগ তারা আর বিশ্বাস করতে চাইবে না।

এদিকে একমাসেরও বেশি সময় পর জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার কেন এমন অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। কেউ বলছেন, এই বক্তব্যের পেছনে সরকারের সম্পৃক্ততা আছে। সাংবাদিককে দিয়ে প্রশ্ন করিয়ে এমন উত্তর আদায় করা হয়েছে। এখানে বিএনপির কী করার আছে? কেউবা বলছেন, কথা কি হয়েছিল সেটা বৈঠকে যারা ছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন, তবে এটা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং না করলেই হতো।

অন্যদিকে, জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মিস কোট’র পাল্টা অভিযোগ এনেছেন বিএনপির মহসাচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার যে কথাগুলো বলছেন সেগুলো সঠিক নয়। কারণ, আমাদের দলের যিনি বক্তব্য রেখেছেন তিনি তাকে (ট্র্যোস্টারকে) কোট করে কোনো কথা বলেননি। বরং ট্র্যোস্টারই বিএনপির বক্তব্য ‘মিস কোট’ করেছেন।

তবে জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে মির্জা ফখরুল যে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিষয়টি ঠিক হয়নি বলছেন খোদ দলটির নেতারা। বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা বলেন, মহাসচিব দলের ক্ষতি করলেন। একজন রাষ্ট্রদূত যদি কোনো কারণে মনোক্ষুণ্ন হয়ে কোনো কথা বলেও থাকেন; বিএনপির উচিত ছিল তাকে ফের চা চক্রে ডেকে এনে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা। কিন্তু মহাসচিব পাল্টা মিস কোটের যে অভিযোগ আনলেন তাতে জার্মানের সঙ্গে বিএনপির কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল।

জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ওইদিন কী বলেছি এটাতো বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে এসেছে। এটাতো একেবারেই পরিষ্কার। আমরা তো তাকে (জার্মান রাষ্ট্রদূতকে) কোট করে কিছুই বলিনি। আমরা যেটা বলেছি, এটা ছিল জেনারেল স্টেটমেন্ট। আমরা বলেছি, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের দেশের মানবাধিকার, নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর এতদিন পরে তিনি কেন এটা বলছেন, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার, নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশ যে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এটাতো কোনো লুকোচুরির কিছু না

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App