×

জাতীয়

কেনাকাটায় নেই নববর্ষের আমেজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২০ এএম

কেনাকাটায় নেই নববর্ষের আমেজ

মার্কেট। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা নববর্ষ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে ধুয়েমুছে গিয়েছিল নববর্ষের উৎসব। এবার উৎসব আছে; তবে ফিকে হয়ে গেছে উৎসবের আমেজ। বিগত বছরের লোকসান পোষাতে বৈশাখকেন্দ্রিক বেচা-বিক্রির জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে রাজধানীর কেনাকাটার বাজার এখনো সরগরম হয়ে ওঠেনি। শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

বর্ষবরণের উৎসবে নতুন পোশাকের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। পয়লা বৈশাখের এক সপ্তাহ আগেই রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গুলিস্তানে বৈশাখী পোশাক কিনতে ভিড় জমে। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। রকমারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় দোকানিরা; কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। রাজধানীর নামকরা বিপণিবিতান ও বুটিকস হাউসগুলোর চিত্রও একই।

দোকানিরা বলছেন, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ খুব কাছাকাছি সময় হওয়াতে ক্রেতারা ঈদকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। ফলে আলাদা করে বৈশাখের জন্য পোশাক কিনতে ক্রেতারা আসছেন না। তারা বলছেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর মানুষ অর্থ সংকটে রয়েছে। এর মধ্যেই পর পর দুইটি উৎসব। ইচ্ছা থাকলেও অনেকে সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয় করতে পারছে না। ফলে ক্রেতারা এখন পহেলা বৈশাখের চেয়ে ঈদুল ফিতরের কেনাকাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মার্কেটের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দোকানগুলোতে দেখা যায়, বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। বিক্রি কম হওয়ায় হতাশ তারা। ‘পৌরণিক’-এর বিক্রয়কর্মী মীর রাসেল বলেন, এবার বেচা-বিক্রি একেবারেই নেই। বৈশাখের ৮ দিন বাকি, এখনো ১০ শতাংশ বিক্রি হয়নি। তাছাড়া পাইকারি বিক্রিও কমেছে অনেক।

বেচা-বিক্রি কম থাকলেও ফ্যাশন ও বুটিকের দোকানগুলো সেজেছে নানা রং ও ডিজাইনের ঝকঝকে নতুন পোশাকে। তবে গতানুগতিক সেই লাল-সাদায় এখন আর সীমাবদ্ধ নেই রংয়ের কারুকাজ। লাল-সাদার উপর গাঢ় রংয়ের মাল্টি কালারের পোশাকগুলো রাখা হয়েছে ঈদ ও নববর্ষের মিশেলে। গরমের কথা মাথায় রেখে কটন (সুতি) কাপড়ের আধিক্য বেশি। এক্ষেত্রে রেমি কটন, জেকওয়াট কটনের ওপরে ব্লক ও অ্যাম্ব্রয়ডারি করে গর্জিয়াস লুক দেয়া হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া ও পাঞ্জাবিতে। এছাড়া পিউর সুতির উপরে স্ক্রিন প্রিন্টের ভিন্ন ডিজাইনের পোশাক এসেছে দোকানগুলোতে।

বড়দের জন্য শাড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার, থ্রি-পিচ ১ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, বাচ্চাদের ফ্রক ও কামিজ ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০, বড়দের পাঞ্জাবি ১২শ থেকে ৩ হাজার, টি-শার্ট সাড়ে ৩০০ থকে ১ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আজিজ সুপার মার্কেটের কয়েকটি দোকানে কাঠ মেটালের গহনাও পাওয়া যায়। বৈশাখকে উপলক্ষ করে গহনার নতুন কালেকশন থাকছে এসব দোকানে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে বৈশাখের বাহারি গহনা পাওয়া যাচ্ছে।

জানতে চাইলে আজিজ সুপার মার্কেটের নিচ তলার উৎসব বুটিকস হাউসের ম্যানেজার মো. মুসা বলেন, আমরা আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম এবার পহেলা বৈশাখের জন্য কেউ কাপড় কিনবে না। কারণ করোনার কারণে বেশির ভাগ মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ। তাই আমাদের পোশাকের ডিজাইনও করা হয়েছে ঈদ ও বৈশাখের সমন্বয় করেই। লাল-সাদার আধিক্য কম দিয়ে সব রং একটি মোটিভে নিয়ে কালারফুল লুক দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৈশাখের বেচা-বিক্রি একেবারেই নেই। ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা ১০ রোজার পর শুরু করবে, আমরা সেই আশাই আছি। এছাড়া অন্য দোকানিরা জানান, কাস্টমার যা আসছে তাদের মধ্যে ছেলেদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাবি। আর মেয়েদের চাহিদা বেশি থ্রি-পিচ ও কাপ্তান। বাচ্চাদের টপস ও ছেলেদের ফতুয়া, পাঞ্জাবি। গরম হওয়ায় সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি।

দোকান ঘুরে দেখা গেছে, এবার বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী সাদা-লালের চেয়ে হলুদ, বেগুনি, নিলসহ চড়া রংয়ের পোশাকের প্রাধান্য বেশি। নিচ তলায় ক্রে-ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী লুৎফর রহমান লোটাস বলেন, সামনে ঈদ তাই মুসলমান ক্রেতারা ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বৈশাখের বিক্রি কম। তিনি বলেন, এবার মাল্টি কালারের চকচকে রংয়ের প্রাধান্য থাকছে পোশাকে। ডিজাইনও এমনভাবে করা হয়েছে যাতে বৈশাখের বাইরেও বছরের অন্যান্য সময়ে তা পড়া যায়।

প্রায় ১ ঘণ্টা ঘোরাঘুরির পর আজিজ মার্কেটের দোতলায় দেশালের শোরুমে একজন ক্রেতার দেখা মেলে। মাকে সঙ্গে নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেঘলা সুলতানা এসেছেন বৈশাখের জন্য কেনাকাটা করতে। মেঘলা বলেন, পহেলা বৈশাখে প্রতি বছরই নতুন পোশাক পরি; এবার নতুন পোশাক কিনব না ঠিক করেছিলাম। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে চলে এলাম শপিংয়ে। তবে মার্কেটে এসে বোঝা যাচ্ছে না যে সামনে বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের পোশাকে সাদা-লালের ছোঁয়াটা বেশ প্রাধান্য পায়। এবার একেবারেই সেটা চোখে পড়ল না। তবে আমি সাদার মধ্যে কমলা রংয়ের শাড়ি কিনেছি। ম্যাচ করে ব্যাগ-জুতাও কেনা হয়েছে। আজিজে কেনাকাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজিজ মার্কেটে বরাবরই ইউনিক কিছু পাওয়া যায়। তাই এখান থেকে কেনার চেষ্টা করি।

জানতে চাইলে ফ্যাশন হাউস রংয়ের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, গ্রামীণ ও দেশজ নানা মোটিভ নিয়ে এবারো আমরা নানা ধরনের পোশাক এনেছি। পোশাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি আবহমান বাংলার ঐতিহ্য। হালকা সুতি কাপড়ের উপর এবার বৈশাখ উপলক্ষে তুলে ধরেছি নকশিকাঁথার নানা মোটিভ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App