×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক প্রেরণায় থিতু থাকতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২, ১১:৪৫ পিএম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদে বলেছিলেন, স্বাধীনতা মানে দায়িত্বশীলতা। পঞ্চাশ বছরে আমাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছি সেটাই এখন বিবেচ্য। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেকটা অর্জন করেছি আবার অনেকটাই অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। দুইই আছে আমাদের। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। অর্থনৈতিক সফলতা লাভ করেছি। উন্নয়ন হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সাফল্য। তবে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে হারানোরও অনেক কিছু আছে। কারণ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ ওই সময়টাতে বাংলাদেশ উধাও হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ যারা পরিচালনা করেছিল তাদের উদ্দেশ্য-আদর্শ-লক্ষ্য কোনোটাই মুক্তিযুদ্ধের ছিল না। বাকি সময়টুকু আমরা পেয়েছি- এই সময়ে আমাদের বৈষয়িক প্রবৃদ্ধি নজরকাড়া। সারা বিশ্বের নজর কেড়েছি আমরা। এগিয়ে গেছি, অনেক অর্জনও করেছি। বিশেষ করে আজকের বাংলাদেশ অনেক অর্জনের জন্য সমৃদ্ধ এবং আমরা বাঙালিরা গর্বিত। স্বাধীনতার সূচনালগ্নে অনেকেই অভিসম্পাত দিয়েছিল- বাংলদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। সেই ঝুড়ির তলা লেগেছে। ঝুড়িটিও উপচে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখন সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি মানে উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন মানে হচ্ছে সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি। দেশে যখন জনবৈষম্য থাকে তখন উন্নয়ন হয় না। অথচ এখনো পর্যন্ত আমরা বৈষম্য দূর করতে পারিনি। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৈষম্য বিরাজমান।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে আমাদের আত্মসমালোচনা করা দরকার। আত্মসংযম করা দরকার। আত্মশুদ্ধি দরকার। বঙ্গবন্ধু যে রাষ্ট্রের দ্রষ্টা এবং ¯্রষ্টা তার আদর্শকে কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছি? সেজন্য কিছু প্রশ্নও আছে। মানুষের বৈষয়িক উন্নতি হলেও নৈতিক উন্নতি প্রশ্নবিদ্ধ। সময়টা কিছু কম হয়ে গেছে। বাংলাদেশ আরো হয়ত দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারবে। তবে আদর্শচ্যুতি সবচেয়ে বেদনাদায়ক। অনেক অর্জন সত্তে¡ও বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর পথে চলছে না। এটাই আমার দুঃখ।

মনে রাখতে হবে প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সেদিক দিয়ে আমরা সঠিক পথে আছি। তবে রাজনৈতিক ও মানসিক দিক থেকে আমরা বেশ পিছিয়ে গেছি। বিশেষ করে আজকের বাংলাদেশে যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রবণতা, যা সরকারি দলও করে এবং অন্যান্য ইসলামভিত্তিক দলও করে; সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ঠিকই। কিন্তু আর্দশের দিক দিয়ে নয়। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর পথেই থাকতে হবে। যেমন বঙ্গবন্ধু তার ১০ জানুয়ারির ভাষণে বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। যার ভিত্তি ধর্মভিত্তিক হবে না। এখন যে দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম থাকে, সে দেশ কিন্তু অনিবার্যভাবে ধর্মভিত্তিক হয়ে যায়। বলা ভালো, রাষ্ট্র নিরপেক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম যোগ হয়েছে- এটি আমাদের চরম বর্থ্যতা। এই জায়গায় আমরা বড় ব্যতিক্রম। এ রকম বিচ্যুতি আরো অনেক আছে।

এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক অনেক। তবে এখনো যেতে হবে বহু দূর। আমাদের গন্তব্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। সোনার বাংলার পথ পরিক্রমা করতে হলে যে চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক প্রেরণায় থিতু থাকা, শাসনের গুণমান বাড়ানো, বৈষম্যের বৃদ্ধি রোধ, অস্থির উত্তাল সমাজকে সামাল দেয়া, শিক্ষার অবস্থা ফেরানো; সর্বোপরি দুর্নীতি ঠেকিয়ে দেয়া। চ্যালেঞ্জ আরো অনেক আছে, তবে এগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার পথ দেখানো এমন নেতা ছিলেন, যিনি জন ম্যাক্সওয়েলের ভাষায়Ñ যে পথ চেনেন, সে পথ পরিক্রমা করেন এবং পথ দেখান। আমরা কী বঙ্গবন্ধুর পথে এগোচ্ছি? বঙ্গবন্ধুর পথেই যদি এগোই বাংলাদেশের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

শ্রুতিলিখন : শরীফা বুলবুল

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App