×

জাতীয়

উচ্চ আদালতের নির্দেশেও বন্ধ হয়নি নসিমন-করিমন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০১৮, ১০:৫১ এএম

উচ্চ আদালতের নির্দেশেও বন্ধ হয়নি নসিমন-করিমন
দেশের সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ নসিমন, করিমন ও সিএনজি অটোরিকশাসহ ঝুঁকিপূর্ণ থ্রি-হুইলার বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নে এসব যান চলছে। পুলিশের অভিযানের সময় এসব যানের চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকে। কিন্তু অভিযান থেমে গেলে আগের মতোই দাপটে চলাচল করে এসব যানবাহন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের জন্য মহাসড়কে আলাদা লেন চিহ্নিত করার কথা থাকলেও সেটিও বাস্তবায়ন করা যায়নি। গতকাল শনিবারও মহাসড়কে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় নারীসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। সারা দেশের মহাসড়কে অবৈধ (অনিবন্ধিত) নসিমন, করিমন ও ভটভটি চলাচল বন্ধে গত বছরের ২৫ জুন সার্কুলার জারি করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আদালত মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও সিএনজি অটোরিকশাসহ ঝুঁকিপূর্ণ থ্রি-হুইলার বন্ধে নির্দেশ দিয়েছিলেন গত বছর। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় গতকাল শনিবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মাণ শ্রমিকসহ ১১ জন নিহত ও অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। সকাল ১১টার দিকে পলাশবাড়ীর ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সরকার ফিলিং স্টেশন ও দুপুর ১২টার দিকে জুনদহ এলাকায় এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রংপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জগামী এস এন ট্রাভেলসের একটি রির্জাভ বাস পলাশবাড়ীর সরকার ফিলিং স্টেশন এলাকায় পৌঁছলে হঠাৎ সামনের চাকা পাংচার হয়ে যায়। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলিকে (ভটভটি) ধাক্কা দেয় বাসটি। ট্রলিতে থাকা তিন নির্মাণ শ্রমিক ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে আহত ১০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া পর মারা যান আরো একজন। পৃথক ঘটনায় দুপুরের দিকে রংপুরগামী রড বোঝাই একটি ট্রাক গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার জুনদহ এলাকায় পৌঁছানোর পর সড়কে থাকা মোটরসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সময় ট্রাকটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি যাত্রীবাহী অটোবাইককে ধাক্কা দিয়ে উল্টে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ট্রাক ও অটোবাইকে থাকা পাঁচ যাত্রী নিহত ও ১০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর আরো দুজন নিহত হন। গাইবান্ধায় ১১ ও যশোরে দুই বোনসহ ৩ জেলায় নিহত ১৪ : ৩ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় পৃথক দুর্ঘটনায় ১১, যশোরের শার্শায় ২ দুই বোন এবং নাটোরে ট্রাকচালক মারা যান। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) : উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে উপজেলা সদরের সরকার ফিলিং স্টেশনের সামনে এবং বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের জুনদহ বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ থেকে একদল নির্মাণ শ্রমিক শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটিযোগে পলাশবাড়ী আসছিলেন। পথে সরকার ফিলিং স্টেশন এলাকায় পৌঁছলে বগুড়া অভিমুখী এসএন ট্রাভেলসের (ঢাকা-মেট্রো-চ-৪৭৭৮) একটি যাত্রীবাহী বাসের সামনের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভটভটিটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রুদ্রনগর গ্রামের রাজু মিয়া (২৭) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহতদের উদ্ধার করে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে জাকিরুল (২৫) ও খসরু (৪৫) নামে অপর দুই শ্রমিকের মারা যান। এ দুর্ঘটনায় একই এলাকার স্বাধীন (১৫), জয়নুল (২৫), আতিয়ার (১৫), ইয়াছিন (২৫), রশিদ (৩০), শাহিদা (২৫), শফি (১১), আছমা (৫০), নাজমুলসহ (১১) কমপক্ষে ৪০ ব্যক্তি আহত হন। আহতদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অপরদিকে পলাশবাড়ী উপজেলা শহরের জুনদহ এলাকায় রড বোঝাই একটি ট্রাক বাইসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ২ নারীসহ ঘটনাস্থলেই ৭ এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ১ জন মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রডবোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪১৮৪) চট্টগ্রাম থেকে রংপুর যাচ্ছিল। ট্রাকের উপর প্রায় ২৫ যাত্রী ছিলেন। ট্রাকটি জুনদহ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ট্রাকের যাত্রীরা রড-অ্যাঙ্গেলের নিচে চাপা পড়েন। খবর পেয়ে গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ ও পীরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত নারীসহ ৮ জনের লাশ উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ক্রেন বসিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর ফলে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের সৎকারের জন্য আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন। বেনাপোল (যশোর) : শার্শায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী স্কুলছাত্রী ২ বোন নিহত এবং আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের চালক। সকালে নাভারন-সাতক্ষীরা সড়কের বাগআচড়া বাজারের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান নাভারন হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক পলিটন মিয়া। নিহতরা হলো- বাগআচড়া বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী উপজেলার বাগুড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে ফাতিমা খাতুন (১২) এবং একই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী একই গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লার মেয়ে জেরিন (১১)। তারা পরস্পর মামাতো-ফুফাতো বোন। আহত আলমগীর হোসেন (৪৫) বাগআচড়া কলেজের প্রভাষক। তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাভারন হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক পলিটন মিয়া জানিয়েছেন, বাগআচড়া কলেজের প্রভাষক আলমগীর মোটরসাইকেলে করে তার মেয়ে ও ভাগনিকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। পথে বালুবোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনাসামনি তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু দুটি মারা যায়। লাশ উদ্ধার এবং ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক ও সহকারী পালিয়েছে বলে তিনি জানান। নাটোর : জেলায় সকালে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক হাসান আলী মোল্লা নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত ২ জনকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ট্রাকচালক হাসান আলী মোল্লা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার খেমিরদিয়ার ভাটোপাড়া গ্রামের মৃত আমিরুল ইসলামের ছেলে। নাটোর সদর থানার ওসি মশিউর রহমান ও ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আখতার হোসেন জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে বগুড়া থেকে নাটোরগামী একটি আলু বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে বিপরীতমুখী অপর একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রাক দুটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ট্রাকচালক হাসান আলী মোল্লা মারা যান এবং ২ জন আহত হন। খবর পেয়ে নাটোর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App