×

জাতীয়

যুদ্ধাঞ্চল ঘোষণার আগেই ইউক্রেন যায় ‘বাংলার সমৃদ্ধি’: বিএসসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২২, ০৯:৫৭ পিএম

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে মিসাইল হামলা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত জানিয়েছে জাহাজটির পরিচালনাকারী বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)।

সোমবার (৭ মার্চ) রাত ৮টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসসি দাবি করেছে, ওয়ার জোন ঘোষণার পূর্বেই বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেইন গিয়েছিল। পাশাপাশি কোন প্রেক্ষাপটে বাংলার সমৃদ্ধি সেখানে গিয়েছিল এর বিস্তারিত ব্যখ্যা দেয়া হয়।

বিএসসি’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারেক-উল-ইসলাম সাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আন্তজার্তিক শিপিং আইন ও বিধি-বিধান নিয়মানুযায়ী ডেনমার্ক ভিত্তিক চার্টারার ডেলটা কর্পোরেশন ও বিএসসি’র মধ্যে ৩ মাসের জন্য ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি চুক্তিপত্র (চার্টার পার্টি) সম্পাদিত হয়। সে অনুযায়ী গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই নিয়ে তুরস্কের ইরেগলিতে পণ্য খালাস সম্পন্ন করে। ওই চার্টার পার্টি সম্পাদনকালে কোনরুপ যুদ্ধ ঝুঁকি ঘোষণা না থাকায় ইউক্রেইনকে ট্রেডিং এরিয়ার বাহিরে রাখা হয়নি।

তাই সেখান থেকে পূর্ব নির্ধারিত ভয়েজ অর্ডার অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে জাহাজটি রওনা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে পৌঁছায়। অলভিয়া বন্দর থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে অনতিবিলম্বে লোডিং বাতিল করে জাহাজটিকে অলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার জন্য মাস্টারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

কিন্তু বন্দর কর্তৃক পাইলট সরবরাহ না করা, পোর্ট অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া এবং বন্দর চ্যানেলে মাইন পোতার ফলে ওলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে জাহাজটি। এরপর যুদ্ধ চলার মধ্যে গত ২ মার্চ বুধবার একটি মিসাইল আঘাত হয় বাংলার সমৃদ্ধির উপর, তাতে আমাদের একজন সহকর্মী থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান।

বিএসসি’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লন্ডন জয়েন্ট ওয়ার কমিটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সি অব আজব এবং ব্ল্যাক সি এরিয়াকে যুদ্ধ ঝুঁকি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। যা ২৩ ফেব্রুয়ারি হতে কার্যকর হবে মর্মে বীমা সংস্থা নিশ্চিত করেন। কিন্তু জাহাজটি পণ্য খালাসের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইরেগলি (ব্ল্যাক সি এরিয়া) বন্দরে পৌঁছায় অর্থাৎ ওয়ার জোন এরিয়া ঘোষণা করার পূর্বেই জাহাজটি সেখানে পণ্য খালাসের জন্য গমন করে। যুদ্ধ ঝুঁকি এলাকা হতে পরবর্তী বন্দরের জন্য পণ্য বোঝাইকরণ অর্থাৎ ইউক্রেন-ইতালি ভয়েজের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা (UN, NATO, IMO ইত্যাদি) এবং ফ্ল্যাগ স্টেট কর্তৃক কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিলনা।

এছাড়া, উক্ত ভয়েজের জন্য বিধি মোতাবেক ইন্স্যুরেন্স কভারেজ প্রাপ্তি এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন কর্তৃক কোনরূপ বাধা/আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ার ফলে চার্টার পার্টি এগ্রিমেন্ট এর যুদ্ধ ঝুঁকি সংক্রান্ত ধারার বিধান মোতাবেক ভয়েজ অর্ডার বাতিল করার কোনরূপ যুক্তিসঙ্গত কারণ (reasonable judgement) তৈরি হয়নি। এর প্রেক্ষিতে চার্টারার প্রদত্ত পূর্বনির্ধারিত ভয়েজ আদেশ বাতিলপূর্বক যুদ্ধ ঝুঁকি এলাকা হতে লোডিং ব্যতিরেকে জাহাজকে ফেরত আসার নির্দেশনা প্রদান করার কোনো আইনগত সুযোগ বা এখতিয়ার বিএসসি’র ছিলনা বলে দাবি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “যুদ্ধ ঝুঁকি এলাকায় কার্গো অপারেশন চলমান ছিল বিধায় সংশ্লিষ্ট পোর্ট অথরিটি বিএসসি’র জাহাজসহ (বাংলার সমৃদ্ধি) মোট ২১টি জাহাজ একত্রে কনভয় আকারে ইনার অ্যাংকরেজে প্রবেশ করিয়েছে। ইনার এ্যাংকরেজে জাহাজ প্রবেশ করানোর পরপরই যুদ্ধ শুরু হওয়া এবং বিএসসি’র জাহাজ মিসাইল হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্খিত এবং বিএসসি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রন বহির্ভূত।”

বিএসসি জানিয়েছে, ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে থাকা অবস্থায় মিসাইলের আঘাতে জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নেভিগেশন ব্রিজ) পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। মিসাইল হামলায় ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে বিএসসি পরিবার খুবই শোকাহত জানিয়ে তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের জীবন রক্ষার্থে বিএসসি, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের সময়োচিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অর্থাৎ গত ৩ মার্চ জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ জন নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মিসাইল হামলায় নিহত জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহটি জাহাজ থেকে স্থানান্তর করে পোল্যান্ডের বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় ইউক্রেনে মর্গে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

বিএসসি’র কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে গাফিলতি/অদক্ষতা ছিল- এই সংক্রান্ত প্রচারিত সংবাদের বিষয়েও বিএসসি মতামত জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে মিসাইল হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাকে কতিপয় স্বার্থান্বেসী মহল ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিএসসি’র উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে।

বিএসসি’র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরণের বিরুপ মন্তব্য/সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিএসসি মনে করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App