×

জাতীয়

আজ জাতীয় বিমা দিবস: মানুষের আস্থাহীনতাই বিমা খাতের বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২২, ০৯:২০ এএম

আজ জাতীয় বিমা দিবস: মানুষের আস্থাহীনতাই বিমা খাতের বড় চ্যালেঞ্জ

প্রতীকী ছবি

দেশের সম্ভাবনাময় আর্থিক খাতগুলোর অন্যতম বিমা খাত। অথচ বিগত সময়ে বিমা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা গড়ে উঠেছে, তা থেকে বের হতে পারছে না এ খাত। ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময়েও বিমা খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেশে প্রতি হাজারে জীবন বিমা আছে মাত্র চারজনের। বাংলাদেশের মোট দেশজ আয়ের মাত্র দশমিক ৫৫ শতাংশ বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়, যেখানে ভারতে তা ৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ফিলিপাইনে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আজ মঙ্গলবার দেশজুড়ে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় বিমা দিবস। দিবসটি সামনে রেখে উদ্ভাবনী পণ্য বা সেবা চালুর মাধ্যমে বিমা খাতের স¤প্রসারণের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এজন্য সবার আগে আস্থা বাড়ানোই বিমা খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। বিমা পেশায় তার যোগদানের দিনটিকে স্মরণে রাখতে বাংলাদেশ সরকার ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আজ মঙ্গলবার দেশজুড়ে তৃতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় বিমা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিমায় ?সুরক্ষিত থাকলে, এগিয়ে যাব সবাই মিলে’। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিমা দিবস-২০২২ এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দেশে বর্তমানে ৩৫টি জীবন বিমা ও ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি কাজ করছে। জিডিপিতে নামমাত্র অবদান এ খাতের। ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বিমার অন্তর্ভুক্তি জিডিপির শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট জিডিপি ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ সময়ে গড় মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৯০৯ ডলার। এরপরও বিমার অন্তর্ভুক্তি বাড়েনি। এর কারণ, বর্তমানে দেশের বিমা খাত নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যেই আস্থার সংকট রয়েছে। বিশেষ করে যৌক্তিক বিমা দাবি পরিশোধে গড়িমসির কারণে পলিসি হোল্ডারদের মধ্যে খাতটির প্রতি এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রিমিয়াম সংগ্রহ, পুনর্বিমা, দাবি নিষ্পত্তিসহ সংশ্লিষ্ট আরো নানা বিষয় নিয়েও। মিথ্যা দাবি সাজিয়ে পুরনো তারিখে (ব্যাকডেট) কাভার নোট ইস্যু ও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বিমা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে অনেক। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, পরিচালকদের দুর্নীতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতারও বহু নজির রয়েছে। একটি পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে পরিচালিত হচ্ছে অধিকাংশ বিমা প্রতিষ্ঠান। আইনবহির্ভূতভাবে একই পরিবারের সদস্যদের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার মালিকানার ঘটনাও রয়েছে। করপোরেট কাঠামোর দিক থেকেও আর্থিক খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে খাতটি। দেশের জীবন বিমা কোম্পানিগুলো ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদনে লাভ-ক্ষতি হিসাব দেখায় না- যা এ খাতে চলে আসা দীর্ঘদিনের সুশাসন ঘাটতির আরেকটি নজির।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, উন্নত দেশগুলোতে বিমা ছাড়া কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় না। আমাদের দেশেও হয়তো এ নিয়ম চালু হবে। যখন উন্নত বিশ্ব হবে তখন হয়তো মানুষের মধ্যে এ অনুভূতিটা আসবে। ব্যাংকে প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক রয়েছে। আর বিমায় রয়েছে প্রায় ২ কোটির মতো। মাঝখানে ৮ কোটি গ্রাহকের ব্যবধান। এক্ষেত্রে ব্যাংকের যে গ্রাহক রয়েছে তাদের যদি বিমার আওতায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে গ্রাহকের আলাদা করে বিমা কোম্পানিতে যাওয়া লাগবে।

জানা যায়, ২০১৪ সালে জাতীয় বিমা নীতি করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সব মানুষ এবং সম্পদকে বিমার আওতায় আনার রূপকল্প রয়েছে। বর্তমান জাতীয় বাজেটেও বহুমুখী বিমা ব্যবস্থার চালুর অঙ্গীকার করা হয়েছে। ভালো খবর হচ্ছে, বেশ কিছু কোম্পানি অনলাইনে বিমা পলিসি বিক্রি শুরু করেছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রহণ ও দাবি পরিশোধ করছে। এ খবর আশাবাদী করছে বিশেষজ্ঞদের। তবে তারা বলছেন, আরো গতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতের। কৃষি বিমা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিমা, দুর্যোগ বিমা নেই; অনেক সুউঁ”ু ভবন, বড় প্রকল্প এখনো বিমার বাইরে রয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ ধরনের বিমা চালুর কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব পদক্ষেপ সরকারকে আকস্মিক বিপত্তিমূলক ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App