জঙ্গি হামলার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, অভিজিত হত্যার রায়ের পর জঙ্গিরা ক্ষিপ্ত আছে ও সেনাবাহিনীর বহিস্কৃত মেজর জিয়া বাইরে আছে। তাই আশংকা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ পরিদর্শন শেষে এসব কথা জানান তিনি। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, অমর একুশে বইমেলা বাঙালির একটি প্রাণের মেলা। আমরা পহেলা বৈশাখ যেভাবে পালন করি, বই মেলাও সেভাবেই পালন করি। আর বইমেলায় নিরাপত্তা দেয়া ডিএমপির বৃহৎ একটি কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে।

নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মেলার মূল প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার কেন্দ্রিক ও শাহবাগ, টিএসসি কেন্দ্রিক একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো হলো বাংলা একাডেমি, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শহীদ মিনার, শাহবাগ, নীলক্ষেত এলাকায় একটি প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এদিকে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি সন্দেহজনক কিছু দেখলে তাদের তল্লাশি করা হবে। মেলার মূল প্রাঙ্গণে বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দুটি গেট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪ টি প্রবেশ ও ৪ টি বের হওয়ার গেট থাকবে। প্রতিটি প্রবেশের রাস্তায় মেটাল ডিটেক্টর থাকবে, সার্চ করা হবে। পাশাপাশি সন্দেহ হলে আলাদা কক্ষ থাকবে সেখানে নিয়ে তল্লাশি করা হবে।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ মেলা ও এর আশপাশের প্রতিটি সড়ক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছে। এছাড়া মেলার ভেতর ও বাইরে সাদা পোশাকে ফোর্স মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি ডিবি, সিটিটিসি, মোবাইল টিম মোতায়েন থাকবে। এছাড়া মেলায় ডগ স্কোয়াড, বোম ডিস্পোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। সোয়াতের ভ্যান, সিআইডির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ক্রাইম সিন ভ্যান থাকবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সার্বক্ষণিক অবস্থান করবেন। তারা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি হলে কাজ করবে। মেডিকেল টিম থাকবে। খাওয়ার পানি সরবরাহ করা হবে। কন্ট্রোল রুমের ভেতরে শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং এর স্থান থাকবে।

যাদের দুগ্ধ পোষ্য শিশু আছে তাদের জন্য এ ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া আমরা যারা সিনিয়র কর্মকর্তা আছি তারা নিয়মিত পরিদর্শন করবে।  এছাড়া মেলা চলাকালীন সময়ে এই এলাকার রাস্তা বন্ধ থাকবে।

জঙ্গি হামলার আশংকা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি প্রধান বলেন, অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ে জঙ্গিরা ক্ষিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক বলে আমরা মনে করছি। আমাদের যে আলোচনা হয়েছে সেখানেও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে তাদের মূল নেতা মেজর জিয়া সে এখনও বাইরে আছে। তাই এই ঝুঁকিকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উস্কানিমূলক বইয়ের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা জানেন আমাদের লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে হটাৎ করে কিছু আপত্তিকর বই চলে আসে। এটা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। এটা নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি মিটিংয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আসলে বাংলা একাডেমিতে প্রতিদিন যে শতশত বই প্রকাশিত হয়, এতোগুলো বই পড়ে সিদ্ধান্ত দেয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে এগুলোকে মনিটরিং করতে আমাদের সিটিটিসির পক্ষ থেকে লোক থাকবে। প্রতিদিন কি কি বই আসছে সেটি মনিটরিং করার জন্য আমরা আলাদা করে ব্যবস্থা করব। এখন রাতের বেলা যদি কেউ বই এনে রাখেন তাহলে সে দায় স্টল মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে।

মেলায় প্রবেশের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা আছে সেগুলো মেনে চলা হবে। মাস্ক ছাড়া মেলায় প্রবেশ করা যাবে না এবং গেটে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। মেলার ভেতরে মোবাইল টিম থাকবে। আর স্টলের প্রত্যেককে কোভিড টিকা দেয়ার প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হবে। না জলে জরিমানা করা হবে ও তাদের মেলার স্টলে কাজ করতে দেয়া হবে না।

জরুরি মুহুর্তের জন্য সোয়াতের ভ্যান, ফায়ার সার্ভিসের লোক থাকবে। আগুনসহ যেকোনো মুহূর্তে তারা কাজ করবে।

আমরা সবাই হাতে হাত ধরে কাজ করব। বাঙালির প্রাণের মেলা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে সে জন্য সকলের সহযোগিতা আশা করছি।