×

জাতীয়

মার্কিন নাগরিক হত্যা: এসিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:৪৮ পিএম

মার্কিন নাগরিক হত্যা: এসিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সাফায়েত মাহবুব ফারাইজিকে হত্যার অভিযোগে বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তয়াছের জাহানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- ভাটারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মশিউর, সুজানা তাবাসসুম সালাম, আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদ, কামরুল হক (বাড়ির মালিক) ও রিপন।

আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে ফারাইজির মা শামীমুন নাহার এ আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়ে দেন। মামলার বাদী শামীনুন নাহার ভোরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সুজানা তাবাসসুম সালামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়া ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার আবেদনের নথিতে বলা হয়, বাদী শামীমুন নাহার বাংলাদেশ ও আমেরিকার নাগরিক। তার বড় ছেলে ভিকটিম সাফায়েত মাহাবুব ফারাইজী জন্ম সূত্রে একজন আমেরিকান নাগরিক। সে আমেরিকা থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে একটি কোম্পানীতে চাকরি করতেন। মা শামীমুন নাহার বাংলাদেশে থাকায় মায়ের জন্মদিন পালনের জন্য গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসেন।

এর কিছুদিন পর ভিকটিম তার মাকে প্রধান আসামি সুজানা তাবাসসুম সালাম, আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদের সঙ্গে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। সুজানা মাঝেমধ্যে ফারাইজীর সঙ্গে দেখা করতে এলে তার মা তাকে মানা করতেন। কয়েকদিন পর তার মা বুয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন আসামিরা নেশা করেন। আর তার ছেলেকে খেতে বলতেন। তাই আসামিদের আর সে বাড়িতে না আনতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৬ নভেম্বর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাদী ও ভিকটিমকে বাসায় এসে গালিগালাজ ও আঘাত করেন। তখন বাদি ৯৯৯ কল দিলে রামপুরা থানা থেকে পুলিশ এসে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং মীমাংসা করেন।

পরে ১০ ডিসেম্বর বাদি ও তার ছেলে ফারাইজী গুলশান থেকে বাসায় ফেরার পথে সুজানাসহ আসামি চার বন্ধু অতর্কিত আক্রমন করে তাদের আহত করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গুলশান থানায় আসামীদের বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরী করতে গেলে গুলশান থানা কর্তৃপক্ষ বলেন, সুজানা তাবাসসুম সালাম অর্থাৎ ১ নম্বর আসামির সিন্ডিকেট অনেক খারাপ। অহেতুক তাদের নামে অভিযোগ বা ডায়েরি নিলে পরে বিপাকে পড়তে হবে। এই বলে বাদিনী ও ভিকটিমকে গুলশান থানা থেকে বিদায় করে দেন। ওই দিন আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার সময় বাদিনীর খিলগাঁওয়ের বাসায় বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তয়াছের জাহানসহ কয়েকজন এসে বলেন, প্রধান আসামি সুজানা তাবাসসুম সালাম তাদের পরিচিত এবং ভালো মেয়ে। সুতরাং তার সাথে যেন ভিকটিম যোগাযোগ ও সম্পর্ক রাখেন। অন্যথায় ভিকটিম দেশে থাকতে পারবে না। তখন সুজানা বাদী ও ভিকটিমকে ওই দিনের ঘটনার বিষয়ে মাফ করে দিতে বলেন এবং ভবিষ্যতে আর এমন কিছু হবে না বলে তারা চলে যান।

পরে গত ২৫ ডিসেম্বর ফারাইজী বড়দিনের অনুষ্ঠান পালন শেষে রাত পৌনে ১২টায় সুজানা তাবাসসুম সালামসহ চার বন্ধুকে (আসামি) বাসায় নিয়ে আসেন। সুজানাকে দেখে তার মা রাগান্বিত হয়ে আসামীদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন সুজানা ভিকটিমকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন ফারাইজী সুজানার গাড়ি করে বাকি আসামিসহ বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে ভিকটিম আর বাসায় আসেননি।

এরপর ভিকটিমের মোবাইলে কল ও এসএমএস দিয়ে কোন রিপ্লাই না পেয়ে ভাটারা থানায় যান। সুজানাকে ভালো মেয়ে বলা বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তয়াছের জাহানের কাছে সুজানার ঠিকানা নিতে গেলে তার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। ঘটনার একদিন পর ২৭ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টায় ভাটারা থানা থেকে বাদীর কাছে ফোনে বলা হয়, ২৬ ডিসেম্বর ভাটার থানাধীন পশ্চিম নুরের চালার নোভা মঞ্জিল থেকে ফারাইজীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পরে গত ৩ জানুয়ারি বাদী ভাটার থানায় মামলা করতে গেলে বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তয়াছের জাহান ও ভাটারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মশিউর মামলা না করার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। তারা বলেন, আপনি যদি বাঁচতে চান ভালো হয় আমেরিকায় চলে যান। অন্যথায় কোন সময় আপনিও মারা যেতে পারেন। তারা বাদীর কাছ থেকে কয়েকটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বখারাপ আচরন করে থানা থেকে বের করে দেন বলে বাদী অভিযোগ করেন। কয়েকদিন ধরে থানায় মামলা না নেয়ায় আদালতে এসে মামলার আবেদন করেন বাদী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App