×

জাতীয়

আস্থা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ সার্চ কমিটির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:০৯ এএম

আস্থা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ সার্চ কমিটির

ফাইল ছবি

রাজনৈতিক বিতর্ক ও সংশয়ের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা মহল সার্চ কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসা বিএনপিসহ কিছু দল এরই মধ্যে সার্চ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে। সার্চ কমিটির কাজের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের কেউ কেউ। এই প্রেক্ষাপটে অংশীজনের আস্থা অর্জন করাই সার্চ কমিটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। এই সময়ের মধ্যে নতুন ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। আর ওই কমিশনের অধীনেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিল অংশ নেয়া দলগুলো। বেশির ভাগ দলই কমিশন গঠনে আইন করার প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিশ্চিত করারও প্রস্তাব করে দলগুলো। সংলাপে অংশ নিয়ে ২৫টি দলের মধ্যে ২১টি দলই আইন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। ৫টি দলের কাছ থেকে এসেছে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব। সার্চ কমিটি চেয়েছিল ৯টি দল। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গঠনে (ইসি) আইন প্রণয়ন করে সরকার। আইন অনুযায়ী, গত শনিবার ইসি গঠনের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত রবিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নাম চাওয়া হয়। আর একটি সর্বসম্মত ইসি গঠনে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নাম সুপারিশ করার জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১০ জন করে নাম পাঠানোর আহ্বান করে কমিটি। রবিবার রাতে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার

এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার লক্ষ্যে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি আগ্রহী ব্যক্তিবর্গের নাম আহ্বান করেছেন। ব্যক্তি পর্যায়েও আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ নাম প্রস্তাব করতে পারবেন।

ইসি গঠনে সার্চ কমিটির সামনে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে- জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নিরপেক্ষ ইসি গঠন নিয়ে সংশয় রয়েছে। সার্চ কমিটির সদস্যরা সবাই দলীয় ব্যক্তি। তারা কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবেন এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।

যোগ্য, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। গতকাল সোমবার পার্টির বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি বলেন, আমরা চাই যোগ্য, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চায়। জাতীয় পার্টি সব সময় অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে। তবে নির্বাচনকালীন সময়ে কমিশনকে ক্ষমতা না দিলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না। যা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে নেই। সার্চ কমিটির চিঠি পেলেই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাব করবে বলে জানান জি এম কাদের।

এদিকে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মতোই সার্চ কমিটিকেও না জানিয়েছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। সার্চ কমিটিতে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো নাম দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সার্চ কমিটিতে যারা রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সার্চ কমিটি লোক দেখানো, এতে কোনো নাম প্রস্তাব করবে না বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনও জনগণ হতে দেবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে আরেকটি হুদা কমিশন করার জন্যই সার্চ কমিটি কাজ করছে। তাই সার্চ কমিটি নিয়ে কোনো আগ্রহ বা প্রত্যাশাও নেই বিএনপির।

সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির সদস্য নিয়ে বিএনপির বিরূপ মন্তব্য করার সুযোগ নেই। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যেতে পুরনো রাজনীতি শুরু করছে তারা। বিএনপির মূল উদ্দেশ্য দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও বিদেশি সাহায্য বন্ধের সুপারিশের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর বাহাসের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে সবার আস্থা অর্জনকেই সার্চ কমিটির বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সার্চ কমিটিকে রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজের আস্থায় আসতে হবে। যোগ্য, দক্ষ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি গঠন করতে হবে। নতুবা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে।

এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্চ কমিটির উচিত হবে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করা। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও দলীয় মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করা।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সার্চ কমিটির উচিত হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাদের নাম পেশ করা, যারা পেশাগত জীবনে উৎকর্ষতা ও বিশেষ গুণাবলি অর্জন করেছেন, কোনো প্রকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। জনগণের কাছে আস্থ নেই- এমন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করলে সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App