×

জাতীয়

জোটের পালে ভোটের হাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

জোটের পালে ভোটের হাওয়া

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় লোগো।

আওয়ামী লীগের ভাবনায় দুই বিকল্প। সক্রিয় হচ্ছে ১৪ দল। নতুন মিত্র খুঁজছে বিএনপি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দুই বছর। এরই মধ্যে নির্বাচন ঘিরে দলীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ ও প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। পুরনো জোট ধরে রেখে দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। বসে নেই বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। দ্বাদশ সংসদেও ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চায় জাপা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্দোলন কিংবা নির্বাচন দুই ক্ষেত্রেই জোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ইতিহাস রয়েছে। দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বরাবরই জোট গড়েই এগিয়েছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ নানা বিষয়ে যখন কথার লড়াই জমে উঠেছে, তখন জোটের রাজনীতিরও টনক নড়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ হয়ে আছে, তারা এখন নড়েচড়ে বসছে। হিসাব কষছে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল নিয়ে। রাজনৈতিক প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়েও হিসাব করছে তারা। এরই মধ্যে জোট নিয়ে দুই বড় দলের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ নেতারা কাজ শুরু করেছেন। সূত্রমতে, জোট নিয়ে নানামুখী চমকের আভাস রয়েছে। জোটগুলোয় বড় ধরনের রদবদলও হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক থাকতে পারে বিএনপি-জামায়াতের বিচ্ছিন্নতা।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী শিবিরের বাইরে ইসলামী দলগুলোর জোটও খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে বড় দলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। নানামুখী টানে বামদের জোটও টানাপড়েনের মধ্য দিয়েই চলছে। তারাও রয়েছে বড় জোটের আশায়।

জোট সম্প্রসারণের বিকল্প ভাবছে আওয়ামী লীগ : দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে তৃণমূল পুনর্গঠন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নির্বাচনী জোট সম্প্রসারণে বিকল্পগুলো নিয়েও ভাবছে দলটি। চলতি বছর কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো এবং নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য তৈরি করা হবে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করে আসন্ন উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকেও নজর রেখেছে দলটি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নির্বাচনী জোট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা মাথায় রেখে দলটি সমমনা বামপন্থী ও কিছু মধ্যপন্থী ইসলামী দলের সঙ্গেও আলোচনা করবে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট-মহাজোটের নানা হিসাব-নিকাশ কষছেন নীতি-নির্ধারকরা। বিএনপি জোট নির্বাচনে এলে ১৪ দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে নিয়ে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনে অংশ নেবে। আর আগের মতোই বিএনপি ভোট বর্জন করলে কিংবা ধানের শীষের পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভোরের কাগজকে বলেন, জোট সম্প্রসারণের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে আমরা সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে আগ্রহী। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।

সক্রিয় হচ্ছে ১৪ দল : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আদর্শিক জোট। ২৩ দফার ভিত্তিতে এ জোট গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দলীয় জোট মিলে এ জোট গঠিত হয়। জোট গঠনের পরপরই ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণফোরামসহ কয়েকটি ছোট দল। কিন্তু জোটটি ১৪ দল নামেই এখনো সক্রিয় আছে। বর্তমানে জোটে আছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), জাসদ (আম্বিয়া), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাসদ, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) ও গণআজাদী লীগ।

কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ একলা চলার নীতি গ্রহণ করেছে। মন্ত্রিসভায় ১৪ দল ও শরিকদের বাদ দেয়ায় জোটের মধ্যে স্পষ্টত হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দল হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও ১৪ দলের অধিকাংশ শরিকই সে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল এবং তারা বলেছিল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিরোধী দল হওয়া যায় না। এরপর ১৪ দলকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটা সফল হয়নি। করোনা মহামারির সময় দিবসভিত্তিক কিছু ভার্চুয়াল আলোচনা ছাড়া তেমন কার্যক্রমও ছিল না। ফলে শরিকদের অনেকেই ১৪ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় বলেই ধরে নিয়েছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৪ দলীয় জোটকে আবার সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ভোরের কাগজকে বলেন, ১৪ দলীয় জোট এখনো আদর্শিক জোট হিসেবে কাজ করছে। জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যতদিন জঙ্গিবাদ থাকবে, জামায়াত-শিবির থাকবে, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা থাকবে, ততদিন আমাদের আদর্শিক জোট ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তি মোকাবিলায় মাঠে থাকবে।

মিত্র খুঁজছে বিএনপি : সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর জোটে নামছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। বিএনপির শরিক দলগুলো হলো জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি, লেবার পার্টি, এনডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ ও পিপলস পার্টি। নির্বাচন ঘিরে জোটের আকার আরো সম্প্রসারিত করার টার্গেট নিয়েছে দলটি। সে লক্ষ্যে মিত্র খুঁজছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি। রাজপথে আন্দোলনের সাথীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে চায় তারা। দীর্ঘদিনের একতরফা রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের স্বপ্ন দেখছেন দলটির নেতারা। জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে জোরালো আওয়াজ তুলে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল রেখে নির্বাচনে যাওয়া কিংবা না-যাওয়া সমান। আমরা বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে ভাবছি। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আমাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে আরো কর্মসূচি দেয়া হবে।

ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চায় জাপা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপাতত এককভাবে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি জাতীয় পার্টির। তবে অতীতের মতো জোটবদ্ধ নির্বাচনের পথটিও খোলা রাখবে তারা। ভোটের আগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হয়, তার ওপর নির্ভর করেই নিবাচনী কৌশল প্রণয়ন করবে দলটি। জোট গঠন এবং আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও ফয়সালা হবে তখন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন জোট গঠন করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেই নির্বাচনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু আসনে আওয়ামী লীগ হয়তো জাপাকে ছাড় দেবে। কিছুদিন পর আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু হবে। এর আগে ৩০০ আসনের টার্গেট নিয়ে মাঠে কাজ করবে জাপা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, আপাতত ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার টার্গেট। তবে এ বিষয়ে এখন আগাম বলা যাবে না কিছুই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App