×

জাতীয়

প্রদীপ ও লিয়াকতের ঠিকানা এখন কনডেম সেলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:০৩ এএম

প্রদীপ ও লিয়াকতের ঠিকানা এখন কনডেম সেলে

প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলী

ইয়াবারাজ্য খ্যাত টেকনাফে ভয় আর আতঙ্কের পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন সেখানকার থানার এক সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। জনশ্রুতি রয়েছে, সন্তান খেতে বা ঘুমাতে না চাইলে মায়েরা বলতেন, ‘ওসি প্রদীপকে খবর দিচ্ছি।’

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থেকে তিনি রাতারাতি চলে এসেছেন কনডেম সেলে। কোনো থানার ওসিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নজির যেন এবারই প্রথম।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এখন ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের ঠাঁই হয়েছে কনডেম সেলে।

চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সেখানকার জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, পুলিশের ভাড়া খাটা মাইক্রোবাসের চালক দিদার আলী কমিটিকে বলেছেন, টেকনাফে পুলিশের কথা শুনলে মানুষ ভয়ে প্রস্রাব করে দেয়। ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় ৩৩ মাস দায়িত্ব পালন করেন।

টেকনাফে প্রদীপের ওসির দায়িত্বে থাকার সময় ১০৬টি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এতে নিহত হন ১৭৪ ব্যক্তি। এলাকাবাসীর অনেকে বলেন, এ তথ্যই বলে দেয় কতটা ভয়ংকর ছিলেন ওসি প্রদীপ।

২৫ বছরের চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় প্রদীপ ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি) থাকাকালে জায়গা দখল, আইনজীবীকে মারধরসহ নানা বিতর্কিত কাজে জড়ান তিনি। ২০০৪ সালে সিএমপির কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) থাকাকালে পাথরঘাটা এলাকায় জায়গা দখলের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। ওই ঘটনায় সিএমপি থেকে তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। কিছু দিন পর চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে তাকে কক্সবাজার জেলায় বদলি করা হয়।

এছাড়া ২০১৫ সালে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় থাকাকালে একটি রিফাইনারির তেল আটক করে সাময়িক বরখাস্ত হন প্রদীপ।

প্রদীপকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, একসময় পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আস্থাভাজন ছিলেন প্রদীপ। তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই ‘ভালো ভালো জায়গায়’ পোস্টিং পেতেন। ওই কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর কিছু দিন বিপাকে ছিলেন। পরে নতুন কৌশল নেন তিনি। অতীতে যে কর্মকর্তার আস্থায় ছিলেন, নানা জায়গায় তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে শুরু করেন। এভাবে নতুন গুরুকে বশে আনার কৌশল নেন। টেকনাফে মাদক নিয়ন্ত্রণের আড়ালে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেক কাজ করেছেন, এলাকার সবাই সেটা জানলেও প্রদীপের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতেন না।

টেকনাফের বাসিন্দারা জানান, প্রদীপের কক্ষে ঢোকার জন্য আলাদা দুটি দরজা ছিল। যাদের আটকের পর বাণিজ্য করার লক্ষ্য থাকত, তাদের ছোট দরজা দিয়ে ঢোকানো হতো, যাতে সিসিটিভির ফুটেজে কোনো আলামত না থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App