×

জাতীয়

ভারতের শিলচরের নতুন বিমানবন্দরে ব্যবহার করতে পারবে সিলেটিরাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:২৭ পিএম

ভারতের শিলচরের নতুন বিমানবন্দরে ব্যবহার করতে পারবে সিলেটিরাও

ভারতের শিলচরের লোকসভা সদস্য ডা. রাজদীপ রায়। ছবি : ভোরের কাগজ

শিলচরে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ডা. হিমন্ত বিশ্বশর্মা নয়া বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজের ঘোষণা দেবেন। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কাজ শেষে হয়েছে। শিলচরে নতুন বিমানবন্দর নির্মিত হলে সিলেটের মানুষও ব্যবহার করতে পারবেন। পাশাপাশি মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মনিপুরের মানুষও উপকৃত হবেন।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকায় আসেন ডা. রাজদীপ রায়। রাতে পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই নয়, দুই দেশের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের চলমান সমস্যাও অনায়াসে নিরসন হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জয়ের ১০ দিন আগেই ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে চায়না বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ-ছয় বছর পরে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনের প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীন চাইছে চারদিক থেকে ভারতকে ঘিরে ধরতে। এ জন্য তারা পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়েছে। এখন নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকেও প্রায়ই তাদের সঙ্গে নিয়েছে। তারা এখন সঙ্গে নিতে চায় বাংলাদেশকে। চীন মনে করে, চারদিক থেকে ভারতকে ঘিরে ধরে রাখতে পারলে ভারত এ অঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে থাকবে। এজন্য চীন এখন বাংলাদেশের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কোনো দেনা-পাওনার মধ্যে এই সম্পর্ক তৈরি হয়নি। একে অন্যের সহযোগিতায় দেশ দুটির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ভারত এবং বাংলাদেশের তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাব বিনিময়ের হার বাড়ছে। এতে দুই দেশই উপকৃত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডা. রাজদীপ রায় বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে থাকলে এ অঞ্চলে অশান্তি হবে না। শান্তির পথে হাঁটবে। আর্থিক ক্ষেত্রও অগ্রসর হবে। উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে জনপদ। সিলেট বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, আসামসহ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের মানুষ চাইলে সিলেট বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারে। শিলচর, আসামসহ সাত রাজ্যের মানুষ সিলেট বিমান বন্দর ব্যবহার করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিলচরের গ্রীণফিল্ড এয়ারপোর্ট নির্মাণ হচ্ছে। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহনসহ নানা প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা শিলচর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পর্কে ঘোষণা দেবেন। এতে বরাক উপত্যকার লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। এর সঙ্গে মিজোরাম, মনিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরার লোকজনও শিলচর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। সিলেটের লোকজনও শিলচর বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো দেশে যাতায়াত করতে পারবে।

সিলেটের মানুষ শিলচর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চাইলে আগে ভারতের ভিসা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আরেক জটিলতা দেখা দেবে। দুই দেশের মধ্যে ভিসামুক্ত চলাচলের ব্যাপারে আপনার সরকার কিছু ভাবছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিসামুক্ত চলাচল একসময় শুরু হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে ভিসামুক্ত চলাচল শুরু হবে। এতে দেশগুলোর মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময় হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। সেক্ষেত্রে জঙ্গিবাদও বাড়তে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বড় ইস্যু। এখন জঙ্গিবাদের ভয়ে যোগাযোগ বন্ধ হতে পারে না। জঙ্গিবাদ নিরসন করতে হবে।

ভারতের রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে এলেন। নানা ব্যস্ততায় দিন গেল। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকেও আপনি ছিলেন। সবমিলিয়ে আপনার কাছে কী মনে হয়েছে, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে- তিনি বলেন, এই সম্পর্ক শুধু গভীর বন্ধুত্বের নয়। আত্মীয়তার মধ্যে পড়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ, কোভিড সহযোগিতা, বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। যা নিয়ে পরবর্তীতে কাজ করা হবে।

বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে জানতে চাইছিলেন। সেবিষয়ে আপনি কি বলছেন-এর জবাবে তিনি বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়টি নিয়ে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা হয় না। এছাড়া দ্রুত বিচার আদালতে এসব ঘটনার বিচার হচ্ছে। ৬০০ মানুষকে নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। ভারত সরকার এগুলো দেখছে।

সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে সকল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তবে, আলোচিত বিষয়গুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশ ও ভারত ঐক্যমতে রয়েছে। আরও ভালো সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে কী গুরুত্ব পাবে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্কে সবুজ বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, তরুণদের জন্য আরও কর্ম সংস্থান তৈরির মতো বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কে প্রাধান্য পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App