×

জাতীয়

ডিজিটাল আইনের নামে হয়রানির শিকার সাংবাদিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৪০ পিএম

ডিজিটাল আইনের নামে হয়রানির শিকার সাংবাদিকরা

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ, গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সম্পাদক পরিষদের নেতারা। ছবি: ভোরের কাগজ

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালতের কাছে বিশেষ করে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের কাছে তিনি অনুরোধ রেখে বলেন, আপনারা দয়া করে একটু দেখুন, কিছু কিছু আইন আছে সেগুলো কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ, গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সম্পাদক পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।

মাহফুজ আনাম বলেন, আইনে স্পষ্ট আছে যে একটি ঘটনা কেন্দ্র করে কেবল একটি মামলাই হতে পারে। একমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মামলাটি করতে পারেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাইরে অনেকেই মামলা করেছেন। বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা কী আইন অমান্য হলো না! সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিকদের রক্ষা করার দায়িত্ব কী আপনাদের নয়, যেখানে আইনে ব্যত্যয় ঘটিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, দুটি বিষয়কে রক্ষার করে সংবিধানে আইন করা হয়েছে। একটি হলো জুডিশিয়ারি, অপরটি গণমাধ্যম। সমাজ তার বিকাশ, বিবর্তন, উন্নয়নসহ সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছে স্বাধীন সাংবাদিকতা তাদের প্রয়োজন। আমার পেশা নৈতিকতার, সমাজ সেবার, আমার পেশা পাবলিক ইন্টারেস্ট সমন্বয় রাখার।

সভায় প্রেস কাউন্সিলের অবস্থা খুবই নিমজ্জিত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি সংবাদমাধ্যম এবং কর্মীদের অধিকার আদায়ে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের বিভাজন ও দলীয় রাজনৈতিক প্রীতি থেকে বেরিয়ে আসাসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেন সবার এর প্রতি আস্থা তৈরি হয়। সাংবাদিকতার পেশায় হলুদ রঙ যেন না ধরে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

পরিষদের অন্যতম সদস্য নুরুল কবীর বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের সাংবাদিকতাকে লড়াই করে চলতে হয়েছে। ৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমাদের সংবাদমাধ্যমে তুলনামূলক একটু ভালো সময় গেছে।

সম্পাদক পরিষদের অন্যতম সিনিয়র সদস্য ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। বর্তমানে মূল্যায়নের সময় এসেছে আমাদের গণমাধ্যম এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। গণমাধ্যমের যাত্রা কোনো কালেও মসৃণ ছিল না। আমরা যখন গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করছি, তখন বাংলাদেশে ঢাকা থেকে বের হচ্ছে ৫০২টি দৈনিক পত্রিকা, ৩৪৮টি সাপ্তাহিক পত্রিকা। সারা বাংলাদেশ থেকে বের হচ্ছে আরো ৭৭৭টি দৈনিক পত্রিকা। এছাড়া সরকারের কাছে আরো ১০ হাজার ৭২০টির মতো অনলাইনের আবেদন জমা আছে।

গণম্যাধমের অর্জন নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অথবা যুদ্ধপরবর্তীকালে গণমাধ্যম ছিল সংগ্রামের অন্যতম অনুষঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রাতেই কিন্তু আমাদের গণমাধ্যম আক্রান্ত হয়। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র সঙ্কটের সময়েও আমাদের গণমাধ্যম কিন্তু শক্তিশালী প্রতিবাদ করেছে। এখন বাস্তব প্রেক্ষাপটে তা আর হয়তো সম্ভব নয়।

শিল্প হিসেবে গণমাধ্যমের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, বড় বড় শিল্প মালিকরা গণমাধ্যমে ইনভেসট করছেন, বড় হাউজ আসার পেছনের কারণ দেখতে হবে।

প্রত্যেকে আসছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা জন্য। সমাজটা অসহিঞ্চু, সাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, কতখানি চ্যালেঞ্জিং তা দেখতে হবে। একটি কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনব্যবস্থা যখন প্রবলভাবে দেশ শাসন করবে তখন গণমাধ্যম কিভাবে তার স্বাধীন চর্চা করবে? বাংলাদেশে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো কি দাঁড়াচ্ছে? গণমাধ্যম তো একটি অনুষঙ্গ মাত্র। এখন সংসদকে কি আমরা কার্যকরভাবে দেখতে পাচ্ছি? বিচারবিভাগ গণতন্ত্রের একটি অন্যতম অনুসঙ্গ। বিচারবিভাগ কি সেই অর্থে ফাংশনেবল আছে? নির্বাহী বিভাগ দলীয় আনুগত্যের একটি চরম উদাহরণ। আরো অন্যান্য যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে আমরা গণমাধ্যমকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে নিবো।

গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, অকার্যকর প্রতিষ্ঠান থাকার চেয়ে প্রতিষ্ঠান না থাকাই ভালো। এ জন্য প্রেস কাউন্সিলসহ সাংবাদিকতার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সাংবাদিকতার একটি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সেটা নিয়েও আমাদের কথা বলতে হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সিকিউরিটি আইনের অপব্যাবহার দেখতে পাচ্ছি আমরা। বারবার আমরা এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের প্রতিবাদকে গুরুত্ব দেয়নি। এর মধ্যেও গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যেতে হবে। কারণ এটি আমাদের অস্তিত্বের সংকট, আরেকটি হচ্ছে স্বাধীন গণমাধ্যের সঙ্কট। এই সংগ্রামকে সামনে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। আশা করি একটা সময় আমাদের চলার পথ মসৃণ হবে। সভায় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অন্যতম সদস্য মুস্তাফিজ শফিসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। সভার শুরুতে সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সারওয়ারসহ প্রয়াত অন্য সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App