আমি সেই সুলতানা
মানিক পাল
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
প্রচ্ছদ ভোরের কাগজ
এই আমি, ওই শান্ত গাঁয়ের
ষোড়শী সুলতানা
আমার একটা সনদ আছে
আমি বীরাঙ্গনা!
বাবা আমার স্কুল মাস্টার
ছিলাম আদরের মেয়ে
কোন দোষে আজ আমার ভুবন
আঁধারে গিয়েছে ছেয়ে?
একাত্তরের ভয়াল রাতে
রাতের খাবার খেয়ে,
মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে
ছিলাম আমি শুয়ে।
গভীর রাতে কারা যেন
ডাকলো বাবার ঘরে,
এতো রাতে বাবা দুয়ার
খুললো ভীষণ ডরে!
বাবা’র বুকে ধরলো ওরা
রাইফেলের ওই নল,
বললো- এই মাস্টার বেটা
শ্বশুরবাড়ি চল!
চিৎকার শুনে মা আর আমি
ছুটে যাই বাবার ঘরে,
চমকে উঠি, মুখ বেঁধে দেখি
বাপকে নিলো ধরে!
মা আর আমি চিৎকার করি
ডাকাত! ডাকাত! বলে,
অট্ট হেসে ওরা ক’জন
আসলো আবার চলে!
পাশের গাঁয়ের ফরমান আলী
সঙ্গে মিলিটারি,
রাইফেলের ওই বাট দিয়ে মা’র
মাথায় দিলো বারি।
আমি তখন মা-মা বলে
লুটিয়ে পড়ি ঘরে,
গোঁফওয়ালা এক মিলিটারি
জাপটে আমায় ধরে!
জ্ঞান হারা সেই আমি যখন
জ্ঞান পেলাম ফিরে,
চেয়ে দেখি ওই পশুরা আমার
সব নিয়েছে কেড়ে!
বিবস্ত্র আমি, সর্বাঙ্গে যেন
শকুনের ভয়াল ছোবল,
হয়ে গেছি তখন ক্লান্ত আমি
অচেতন দুর্বল।
মরতে গিয়েও হয়নি মরণ
দেয়নি বিবেক সায়,
অস্ত্র তুলে নিলাম হাতে
থাকিনি যে আর গাঁয়।
শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধ
স্বাধীন হয়েছে দেশ
বয়স আমার ঢের হলো যে
পেকেছে মাথার কেশ।
স্বাধীন দেশে স্বাধীন আমি
ফুটপাতে আস্তানা,
সান্ত্বনা মোর সনদ আছে
আমি বীরাঙ্গনা!
চেয়ে চেয়ে রোজ সনদ দেখি
এলো বুঝি ওই সুখ,
বড় কষ্টে ছেঁড়া আঁচলে
চেপে রাখি দুটি চোখ।
হাজারো কষ্টে নিজেকে নিজেই
দিয়ে রাখি সান্ত্বনা,
আমার একটা সনদ আছে
আমি এক বীরাঙ্গনা।