×

সাহিত্য

অনুবাদিত ‘বাংলা সাহিত্য’ বিশ্বে আলোড়ন ফেলবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:২১ পিএম

অনুবাদিত ‘বাংলা সাহিত্য’ বিশ্বে আলোড়ন ফেলবে
  • এসবিএসপি সাহিত্য সম্মাননা পেলেন ১২ জন

বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দিতে জানে। যার স্বীকৃতি স্বরুপ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। এরপর থেকে পুরো পৃথিবী বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। তাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডার রয়েছে। কিন্তু যথার্থ অনুবাদের অভাবে বাংলা সাহিত্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তেমন পোঁছায় না। অথচ ১৯৪৭ সালের পর থেকে আমাদের সাহিত্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। নতুন প্রজন্মের লেখকরাও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। বাংলা সাহিত্য যদি যথার্থভাবে অনুবাদ করে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে আলোড়ন সৃষ্টি করবে এবং এটি হবে বাংলাদেশের আরো একটি বিশেষ অর্জন। এ বিষয়ে সবারই উদ্যোগ নেয়া উচিত।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদের (এসবিএসপি) আয়োজনে সাহিত্য উৎসব ও সাহিত্য সম্মাননা -২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ বছর এসবিএসপি সাহিত্য সম্মাননা ২০২২-২০২৩ পেয়েছেন ১২ জন। অনুষ্ঠানে তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ তুলে দেয়া হয়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন এসবিএসপি সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার রেজা, এসবিএসপি-এর প্রেসিডিয়াম কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার তারেক হাসান, গল্পকার, কবি ও ঔপন্যাসিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীম রেজা, বাংলা একাডেমীর পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক সালমা বানী, দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক কবি মুস্তাফিজ শফি, দক্ষিণ এশিয় শিল্প সাহিত্য ও সঙ্গীতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সৌধ এর পরিচালক কবি টি এম আহমেদ কায়সার, যুক্তরাজ্যের লেখক মাইক শেরিফ ও অ্যামি নেইলসন স্মিথ, বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান ও অনুবাদক ড. সুরাইয়া ফারজানা হাসান প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেন, ভাষার জন্য জীবন দেয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এজন্য ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এখন যখন প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হয়, তখন পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ আমাদের সাহিত্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। কিন্তু যথার্থ অনুবাদের অভাবে আমাদের সাহিত্য তাদের কাছে পোঁছায় না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার মনে হয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই উদ্যোগটি নেয়া উচিত। কারণ ১৯৪৭ সালের পর থেকে আমাদের সাহিত্য ভাণ্ডার অন্য মাত্রা পেয়েছে। এখনকার লেখকরাও বেশ ভালো করছে। যদি এগুলো অনুবাদ করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়- তাহলে অনেকের লেখাই আলোড়ন সৃষ্টি করবে। তিনি আরো বলেন, আমরা যারা নিজেদের শিল্প সাহিত্য তুলে ধরতে চাই, তাদের জন্য আজকের এই অনুষ্ঠান অনেক বড় আয়োজন। এ ধররে আয়োজন আরো হওয়া উচিত।

এসবিএসপি প্রেসিডিয়াম কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার তারেক হাসান, ৮ বছর আগে পথ চলা শুরু হয় এসবিএসপি সংগঠনের। আমাদের ল্য দেশবরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের সম্মানিত করার। গত ৭ বছরে আমাদের সম্মাননা পাওয়া ১৫ জন বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়- যথার্থদেরই আমরা পুরস্কার দিচ্ছি। অনুবাদক ও লেখক সুরাইয়া ফারজানা হাসান বলেন, অনুবাদ এমন একটি জিনিস, যা বিশ্বের বিভিন্ন কালচার সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে শেখায়। আমার স্বপ্ন বাংলা সাহিত্য অন্য ভাষায় অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেয়া। 

যুক্তরাজ্যের লেখক মাইক শরিফ বলেন, ৩০ বছর বয়সে (১৯৮৭ সাল) এসে কুড়িগ্রামে গিয়েছিলাম। তখন কৃষকদের মুখে শোনা বিভিন্ন বাংলা গান আমাকে মুগ্ধ করে। সেই থেকে বাংলা সাহিত্যের প্রতি টান কাজ করে। এখন ওতোপ্রোতোভাবে কাজ করছি। বাংলাও শিখেছি। ‘আমার জীবন ও বাংলাদেশ’ নামে বই লিখেছি। এছাড়াও আরো দুটি বাংলা বই আমার আছে। এদেশের পথশিশুদের গল্প খুব টানে। কারণ ওদের জীবন একদম ভিন্ন এবং চ্যালেঞ্জিং। এছাড়াও বাংলা সাহিত্য নিয়ে আরো লিখতে চাই।

সৌধের পরিচালক টিএম আহমেদ কায়সার বলেন, আমাদের তরুণ লেখকদের শুধু লেখালেখি নয়, দর্শনটাও থাকতে হবে। কারণ অনেক অবাঙালি বাংলা শিখে আমাদের চেয়ে ভালো লিখেছেন। বিশ্বব্যাপী আমাদের কথাগুলো ছড়িয়ে দিতে অনেক দূত দরকার হয়। আমরা আশা করি, এই প্রোগ্রামে বিদেশি যারা অংশ নিয়েছেন, তারা এই বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। জীবনানন্দের ফেস্টিভ্যাল বেশ সাড়া ফেলেছিল অবাঙালি দর্শকদের মধ্যে। লিট ফেস্টের মতো প্রোগ্রাম আরো করা উচিত। 

গল্পকার কবি ও ঔপন্যাসিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যদি সংস্কৃতি বিনিময়ের পর্যায়ে যাই, সেইটা ভালো হবে। বাংলা একাডেমীর পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক সালমা বানী বলেন, সমাজকে পরিশোধিত রাখে যে সাহিত্য, সেটির সঙ্গে যুক্তদের নিয়ে এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। 

দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক কবি মুস্তাফিজ শফি বলেন, সাহিত্য সংযোগ ঘটানো খুব জরুরি। অন্যরা কি লিখছে, আমরা কি লিখছি, এটা যেন উভয় জানতে পারি, সেদিকে জোর দিতে হবে। 

এসবিএসপি সাহিত্য সম্মাননা পেলেন যারা : এসবিএসপি সাহিত্য সম্মাননা ২০২২-২০২৩ পেয়েছেন, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য মুজিবুল হক কবীর, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, তুষার কবির, কথা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আকমল হোসেন নিপু, প্রবন্ধ /গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য গাজী আজিজুর রহমান, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য জাকির হোসেন কামাল ও আশিক মুস্তাফা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য সিরু বাঙালি, ছোটগল্পে সাঈদ আজাদ, সাংবাদিকতায় রনি রেজা, ছোট গল্পের জন্য জয়শ্রী দাস ও শিশুসাহিত্যে মরণোত্তর সম্মাননা পান রাইদাহ গালিবা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App