×

সাহিত্য

কোলাহলমুখর ঢাকা ফিরে পেতে চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২০, ১০:২৪ এএম

কোলাহলমুখর ঢাকা ফিরে পেতে চাই

আতাউর রহমান নাট্যব্যক্তিত্ব

আতাউর রহমান। বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বয়সে প্রবীণ হলেও তিনি চিরতরুণ। তাকে বলা হয় মঞ্চসারথী। একাধারে লেখক, নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, অভিনেতা, নাট্যসমালোচক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব। গত ৫০ বছরে তিন ডজনের মতো মঞ্চ নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দুই হাজারটি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেন। একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীর মঞ্চে নির্দেশিত প্রতিটি প্রযোজনাই যেন অর্জন করেছে সমতালের জনপ্রিয়তা। অভিনয় ও নির্দেশনা দুই জায়গাতেই তিনি সম্প্রতিভার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। অসাধারণ অভিনয় শৈলীতে তিনি মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। শুধু মঞ্চ বা টেলিভিশনে অভিনয় বা নির্দেশনাই নয়, টকশোসহ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন এই অঙ্গনের অভিভাবকত্বের জায়গায় থেকে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটকের মধ্যে মাইল পোস্ট, সাজাহান, কবর দিয়ে দাও, গডোর প্রতিক্ষায়, গ্যালিলিও, ঈর্ষা, হিম্মতি মা, দর্শক চিত্তে এখনো দোলা দেয়। চলতি প্রযোজনা রক্তকরবী ও অপেক্ষমাণে তার অসাধারণ শিল্পকারু ফুটে উঠেছে বিচিত্র মহিমায়। এই মঞ্চসারথীর করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকগুলো কবিতা লিখেছি। করোনা নিয়েই লিখেছি। কবি মীর বরকত দুটো আবৃত্তি করেছে। যেমন- ‘সভ্যতা যুগে যুগে এভাবে ধ্বংস হয়েছে। সিরিয়ান, ব্যাবিলিয়ান আদি সভ্যতা, কখনো মহামারিতে, কখনো ভূমিকম্পে অনেক সভ্যতা ডুবে গেছে। পৃথিবী আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে।’ আতাউর রহমান বলেন, যে পৃথিবীতে সাড়ে সাতশো কোটি লোক। সে তুলনায় মৃত্যুর পারসেনটেজ কম। প্লেগে দুই কোটি লোক মারা গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তো আরো বেশি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তো তিরিশ লাখ লোক মারা গিয়েছিল। সে তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যুর হার অমন কিছু না। এটা যেহেতু ছোঁয়াচে, আধুনিক বিশ্বের সাবধানতা। আগে তো কে কোথায় মরছে এটাও জানতাম না আমরা। যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাড়ি নোয়াখালীতে প্রতিদিন দশজন করে কলেরা রোগী গ্রাম থেকে বেরুতে দেখেছি। তখন কলেরার কোনো ওষুধ নাই, কোনো ভ্যাকসিন বের হয়নি। কলেরা হলে পানি খেতে দিত না, তখন আরো মরত। তখন প্রতিবছর শ’য়ে শ’য়ে মানুষ মরত। আমাদের দেশে তো সড়ক দুর্ঘটনাতেই অনেক লোক মারা যায়। এই করোনায় সারা পৃথিবী যেহেতু সাবধান, আমরাও সাবধানতা অবলম্বন করছি। ঘরে বসে আছি। তাতে ভালোই হয়েছে। রোগ কম ছড়াচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে আমাদের সবকিছু খুলে দিতে হবে। নইলে অর্থনীতিতে ধস নামবে। সারা পৃথিবী বিব্রতকর। তাছাড়া কাজ না করলে উৎপাদন হবে না। বাঁচা মরা তো মানুষের আছেই। আমাদের মতো বয়স্ক মানুষরা পড়েছে বেকায়দায়। যারা নিয়মিত চেকআপ করি, তা করতে পারছি না। কী বই পড়ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংকলন। আমার জন্মের আগে ১৯৩৫, ১৯৩৬, ১৯৩৭ সালে যেসব লেখকরা লিখতেন তাদের লেখার একটি সংকলন। তাদের লেখা কেমন, সমালোচনা সাহিত্য কি? এ নিয়ে লেখা বইটা পড়ছি। নীরদ সি চৌধুরীর ‘হোয়াই আই মোর্ন ফর ইংল্যান্ড’ বইটা পড়ছি। কখনো রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ছি- ‘দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে, এসেছে আমার দ্বারে; একমাত্র অস্ত্র তার দেখেছিনু, কষ্টের বিকৃত ভান, ত্রাসের বিকট ভঙ্গি যত, অন্ধকার ছলনার ভূমিকা তাহার। যতবার ভয়ের মুখোশ তার করেছি বিশ্বাস, ততবার হয়েছে অনর্থ পরাজয়।’ যেমন এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি এবং পড়ছি- ‘আমি রক্ত করবীর রাজা হিসেবে অন্তত একশ দশ বার বলেছি শূন্যতায়ই আমার শোভা। রবী বাবু কী জানতেন আজকে শূন্যতাই আমাদের শোভা হবে? সারা পৃথিবী আজ শূন্যতায় মোড়া। আপনার চেনা পৃথিবীটা তো মুখর ছিল। এখনকার পৃথিবীর সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে এই নাট্য ব্যক্তিত্ব আরো বলেন, না কোনোই মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ফিরে পেতে চাই আমার ঝুট ঝামেলার ঢাকা শহর। আমি ফিরে পেতে চাই আমার ট্রাফিক জ্যামের ঢাকা শহর। আমি আমার পুরনো জ্যামের এবং কোলাহলমুখর ঢাকা শহরকে ফিরে পেতে চাই। আমি এরকম শ্মশান এবং এরকম একটা বন্ধ্যা, নির্লিপ্ত সময় আমার কাছে অসহ্য। আমি পড়ব, লিখব, নাটক করব, আড্ডা দেব, অফিস করব, সংসারের দুঃখ কষ্ট টানব, স্ট্রাগল করব। চুপচাপ বসে ঘরবন্দি এবং নিষ্কর্মা হয়ে মারা যাব- এমন জীবন অসহ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App