×

সাহিত্য

দুর্যোগের সময়টায় সবাই মিলে কাজ করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২০, ০২:৫২ পিএম

দুর্যোগের সময়টায় সবাই মিলে কাজ করতে হবে

সৈয়দ হাসান ইমাম

সৈয়দ হাসান ইমাম। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। একাধারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, অভিনেতা ও আবৃত্তিকার। ভালোবাসতেন রবীন্দ্রসংগীত আর খেলাধুলা। কিন্তু ধীরে ধীরে জড়িয়ে গেছেন নাটক, চলচ্চিত্র আর সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় উদীচীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নানা জায়গায় গেছেন, সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে সম্প্রীতি ও মৈত্রী স্থাপনের কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনেরও অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। বিশিষ্ট এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের করোনাকাল কেমন কাটছে জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, এখন ঘরেই আছি। বাইরে একেবারেই যাওয়া যাচ্ছে না। সরকার এবং ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ঘরেই থাকছি। এক মাসের বেশি হয়ে গেল এই স্বেচ্ছা গৃহবন্দির। অথচ আগে যদি এ রকম দীর্ঘসময় ধরে ঘরে থাকতে হতো, পাগল হয়ে যেতাম। এখন যেহেতু ঘরে বসে পৃথিবী দেখতে পাচ্ছি তাই হয়তো থাকতে পারছি। এই সময়টায় পড়াশোনা আর লেখালেখিই করছি। প্রবন্ধ পড়ছি। আমার বাড়ির লাইব্রেরিটাও মোটামুটি সমৃদ্ধ। প্রায় চার হাজারের মতো বই আছে। লেখাপড়ার ফাঁকে টেলিভিশনে খবরও দেখি। লিখছি স্মৃতিচারণের দ্বিতীয় খণ্ড। এর আগে গত বছর প্রথম খণ্ডটা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আমাদের কিছু সংগঠন, সমিতি আছে তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি। পরিচিতজনদের মধ্যে যারা অসচ্ছল তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। না বের হয়ে যতটুকু পারছি করছি। আমার ছোটবেলা থেকে অর্থাৎ আট বছর বয়স থেকেই এসব কাজ করছি। সেটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলুন আর রাজনৈতিক দুর্যোগই। এর আগে এ রকম দুর্যোগের মুখোমুখি কখনো হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বিশিষ্ট এই সংস্কৃতজন বলেন, দেখেছি। তবে তা আঞ্চলিকভাবে দেখেছি। বিশ্বব্যাপী দেখিনি। ছোটবেলা থেকে অনেক দুর্যোগ দেখেছি। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ দেখেছি। রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার মামারা রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে সৎকার করেছেন, হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। আমার তখন আট বছর বয়স। আমার মা-খালা-মামিরা সমিতি করতেন তখন। বাচ্চাদের দেখেছি মাটির ভাঁড় নিয়ে লাইন ধরে বসে থাকতে। তাদের আমাদের দুধের জগ দিয়ে দেয়া হতো। সেবারই প্রথম গণমৃত্যু দেখেছি। তারপর কলেরার মৃত্যুতে গ্রামের পর গ্রাম শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। বসন্ত আর ম্যালেরিয়ায় দেখেছি গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেতেও দেখেছি। সেসব ছিল আঞ্চলিক। বিশ্বব্যাপী ছিল না। বিশ্ব তো তখন অতো কাছেও ছিল না সবার। তখনকার বিশ্বব্যাপী এরকম হয়নি। এখন তো আমাদের ছেলেমেয়েরাও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। তাদের জন্যও চিন্তা। এরকম বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ আগে কখনো দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশের দুর্যোগ দেখেছি, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধও দেখেছি। ইংরেজ আমলে তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ দেখেছি। কিন্তু এরকম আন্তর্জাতিক মহামারি দেখিনি। তবে সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের সময় ভোলাতে মানুষ দাফন করেছি আমার গ্রুপ নিয়ে। সেগুলো তো চোখের সামনে ঘটেছে। কিন্তু এখন তো দেখছি মানুষ একেবারে অসহায়। ম্যালেরিয়া, স্মল ফক্স ও কলেরা দেখেছি। মানুষের জ্ঞান ছিল না বলেই একসময় গ্রামকে গ্রাম এত মানুষ মারা গিয়েছিল। আশা করি এটারও একটা প্রতিষেধক বেরিয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রতিদিন কিছু কিছু চ্যানেলের রিপোর্টে মৃত্যুর সংখ্যাটা আগে প্রচার করা হচ্ছে। বেঁচে থাকার সংখ্যাটা পরে আসছে। এগুলো তো আগে আসা উচিত। মানুষকে ওভাবে আশাহত করলে মানুষের ভেতরে বেঁচে থাকার লড়াকু ভাবটা কমে যায়। বরং মানুষ যে জিতবে এই আশাটা মনের মধ্যে জাগিয়ে রাখতে হবে। এখন দুর্যোগের সময়টায় সবাই মিলেই কাজ করতে হবে এবং জিততে হবে। সরকারের উচিত বিরোধী দলকে টেনে নেয়া, বিরোধী দলেরও উচিত সরকারের পাশে থাকা। সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, সরকারের একটা বিষয়ে এবার নজর দিতে হবে। তা হচ্ছে- বৈষম্য কমিয়ে শিক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বাজেট বাড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App