×

সাহিত্য

গোলাপজান স্মরণ করিয়ে দিলো আদি ঢাকাকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:২১ পিএম

গোলাপজান স্মরণ করিয়ে দিলো আদি ঢাকাকে

আদি ঢাকার জীবন-জীবিকার ঘটনার সাথে জড়িত এক নারীর গল্প নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হলো ভিন্নধর্মী নাটক ‘গোলাপজান’। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বার) সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রযোজনায় আবু তাহেরের মূল গল্প অবলম্বনে নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় ছিলেন এস এম সোলায়মান।

নাটকে ৬৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আদি ঢাকার এক সাধারণ নারী গোলাপজান বর্ণনা করেছেন তার শৈশব-কৈশোর, যৌবন থেকে পৌঢ়ত্বে পৌঁছার সংগ্রামী কাহিনী। বিশ শতকের মধ্যভাগে রাজধানী ঢাকা শহরের শ্রমজীবি একজন নারীর ধনবাদী সমাজ ব্যবস্থা বিকাশের ধারায় ক্রমাগত সংগ্রামী হয়ে উঠার কাহিনী ‘গোলাপজান’। তিরিশের দশকে ঢাকা শহরের এক অতি দরিদ্র পরিবারে গোলাপজানের জন্ম। তার শৈশব-কৈশোর স্মৃতি মধুরতায় ভরপুর। মক্তবে পড়াশোনার সময় প্রায় শৈশবেই তার বিয়ে হয় এক ঘোড়া-গাড়ির কোচোয়ানের সাথে। গাড়ি টানা ঘোড়াটির নাম লাল্লু যে কিনা গোলাপজানের নিকট সন্তানের মত প্রিয়। লাল্লুর সাথে নাম মিলিয়ে গোলাপজান তার একমাত্র সন্তানের নাম রাখেন সাল্লু। যার পুরো নাম সালাউদ্দিন।

লাল্লু, সাল্লু, প্রিয়তম কোচোয়ান স্বামীকে নিয়েই গোলাপজানের এক জীবন। একদিন কিশোর সাল্লু তৎকালীন ঢাকার অতি জনপ্রিয় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা ‘শাকরাইন’-এ অংশ নিতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হয়। আহত ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে জকি এরফানের কাছে লাল্লুকে বিক্রি করে দিতে হয়। সন্তানসম লাল্লুকে বিক্রির কষ্ট সইতে না সইতেই মারা যায় সাল্লু। এ অবস্থায় প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েন গোলাপজান। এর মধ্যেই ঢাকার সমাজচিত্র বদলাতে শুরু করে। বিশ শতকের মধ্য ভাগে বিশ্বব্যাপি নতুন প্রযুক্তি বিকাশের দোলা এসে লাগে ঢাকা শহরেও।

ঘোড়ার গাড়ীর বদলে ঢাকায় শুরু হয় রিক্সার প্রচলন। গোলাপজানের স্বামী কোচোয়ান থেকে হয়ে যায় রিক্সাচালক। কিন্তু একদিন তিনি মটর গাড়ীর ধাক্কায় হারিয়ে ফেলেন একটি পা। স্বামীর পঙ্গুত্বে অসহায় পরিবারটির বোঝা নেমে আসে গোলাপজানের উপর। শুরু হয় গোলাপজানের আরেক জীবন। রাষ্ট্র এবং সমাজের নিকট পরিত্যক্ত গোলাপজান হয়ে ওঠেন জীবন সংগ্রামের প্রতীক। জীবনের তাগিদে গোলাপজান ভেঙ্গে ফেলেন সে সময়ের রক্ষণশীল ঢাকার সামাজিক আব্রু। নেমে আসেন রাস্তায় ‘ঘুমনি’ বিক্রির পেশায়। সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে গোলাপজান সামিল হন সর্বহারা শ্রেণীর শ্রমজীবিদের সংগ্রামের কাতারে। তার পেশা থেকে শুরু করে আপন জীবন পর্যন্ত বাঁধা পড়ে যায় সমাজপতিদের হাতে।

নিজের চোখের সামনে তথাকথিত সামাজিক উন্নয়নের যাতাকলে মানবিক মূল্যবোধের পিষ্টতা দেখে হতাশ হয়ে পড়েন গোলাপজান। পুলিশের হাতে উচ্ছেদ হয় তার রুটি-রুজির একমাত্র পেশা। পুলিশের পিটুনিতে মারাত্মক আহত হন পৌঢ়া এই সংগ্রামী নারী। মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন গোলাপজান। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী। এ নাটকের গানগুলো পুরাতন হিন্দি সিনেমা থেকে নেওয়া। নাটকটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন থিয়েটার আর্ট ইউনিটের দলপ্রধান রোকেয়া রফিক বেবী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App