×

সাহিত্য

ঝরে গেল পঞ্চাশের আরেক নক্ষত্র কবি আবুবকর সিদ্দিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৬ পিএম

ঝরে গেল পঞ্চাশের আরেক নক্ষত্র কবি আবুবকর সিদ্দিক

ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় চিরনিদ্রায় শায়িত

ঝরে গেল পঞ্চাশের আরেক নক্ষত্র বহুমাত্রিক লেখক আবু বকর সিদ্দিক। যিনি সারাজীবন সাহিত্যের নানা শাখায় আলো ছড়িয়েছেন তার সব্যসাচী কলমে। গত এক দশক আগে এ শহর ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন দূরে খুলনার রূপসার তীরে। যেখানে অনেকটা গুটিয়েছিলেন নির্জন নক্ষত্রের মতো। সেখানেই তিনি ৯১ বছরের জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গণমাধ্যমকে মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন তার বড় মেয়ে রাজনীতিবিদ বিদিশা। মৃত্যুকালে কবি পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বিদিশা সিদ্দিক বলেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আবু বকর সিদ্দিককে খুলনা সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে) স্থানান্তর করা হয়।

আবু বকর সিদ্দিক খুলনা মহানগরীর ৫ নম্বর মুন্সিপাড়া ছোট বোনের বাড়িতে দীর্ঘ ১ যুগ ধরে বসবাস করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। আবু বকর সিদ্দিকের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।

শোক জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছেন, আবুবকর সিদ্দিক বাংলা কবিতার এক শক্তিমান নাম। ধবল দুধের স্বরগ্রাম দিয়ে বাংলা কবিতায় তার যে স্বতন্ত্রযাত্রা, তা ক্রমশ ব্যাপ্ত হয়েছে ব্যক্তিমানুষের ও সমষ্টিমানুষের অর্ন্তকথনে। বাংলা কথাসাহিত্যেও আবুবকর সিদ্দিক এক অসামান্য শিল্পী। খরাদাহ, জলরাক্ষস-এর মতো উপন্যাস তাকে বাংলা কথাসাহিত্যে বিশিষ্ট আসনে অধিষ্ঠান দিয়েছে। বাংলাদেশের গণসংগীতের ইতিহাসেও আবুবকর সিদ্দিকের নাম কখনও বিস্মৃত হবার নয়। মুক্তিযুদ্ধের বহু সাড়াজাগানো গানের রচয়িতা ছিলেন তিনি।

বাংলা একাডেমি কবি-কথাসাহিত্যিক আবুবকর সিদ্দিকের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

ফেসবুকে শোক জানিয়ে কবি ফারুক মাহমুদ লেখেন, মৃত্যুযাপনে গেলেন কবি, কথাসাহিত্যিক, গণসংগীত রচয়িতা, ছড়ালেখক, সমালোচক, শিক্ষক আবুবকর সিদ্দিক। তিনি ছিলেন পঞ্চাশ দশকের জীবিত শেষ লেখক। বাংলা সাহিত্য তাকে বহুযুগ মনে রাখবে।

আবুবকর সিদ্দিক ১৯৩৬ সালের ১৯ আগস্ট বাগেরহাটের গোটাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মতিয়র রহমান পাটোয়ারী সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন এবং মা মতিবিবি ছিলেন গৃহিণী। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাগেরহাট জেলার বৈটপুর গ্রামে। বাবার চাকরি সূত্রে ১৯৩৫ সাল থেকে তিনি হুগলী শহরে এবং ১৯৪৩ সাল থেকে বর্ধমানে বসবাস করেন। বাল্যকাল থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। ১৯৪৬ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাকালীন তার প্রথম কবিতা আবদুস সাত্তার সম্পাদিত ‘বর্ধমানের কথা’ পত্রিকায় ছাপা হয়।

তিনি বাগেরহাট মাধ্যমিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫৪ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং একই কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

পেশাগত জীবনে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। চাখার ফজলুল হক কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বি এল কলেজ, পিসি কলেজ, ফকিরহাট কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯৪ সালের ৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার নটর ডেম কলেজে অধ্যাপনা করেন।

আবুবকর সিদ্দিক একাধিক উপন্যাস লিখেছেন। তিনি ছোট গল্পকার, গণসংগীত রচয়িতা, ছড়াকার ও সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। এ ছাড়া বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ পুরস্কার, বঙ্গভাষা সংস্কৃতি প্রচার সমিতি পুরস্কারসহ (কলকাতা) আরও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

কবির কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ধবল দুধের স্বরগ্রাম’, ‘বিনিদ্র কালের ভেলা’, ‘হে লোকসভ্যতা’, ‘শ্যামল যাযাবর’, ‘মানব হাড়ের হিম ও বিদ্যুৎ’ এবং ‘মনীষাকে ডেকে ডেকে’। তার লেখা উপন্যাসগুলো হলো- ‘জলরাক্ষস’, ‘খরাদাহ’, ‘বারুদপোড়া প্রহর’ এবং ‘একাত্তরের হৃদভস্ম’। তার লেখা গল্পগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি।

বিদিশা সিদ্দিক জানান, বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) খুলনার হাদিস পার্কে বাদ জোহর কবি আবুবকর সিদ্দিকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনাতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App