মায়ের শখ একটি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:০৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার হাতেখড়ির যেন এক উৎসব চলছিল সেই ৭১ এ,
ঘর থেকে বেড়িয়ে স্কুলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া, ছোট্ট খালের দিকে অবিরাম তাকিয়ে থাকতাম আর কী যেন ভাবতাম।
এমনিভাবে ২৫ মার্চের ওই রাতে রাতের পাখির গান শুনে শুনে,
অবুঝ শিশুর মত ঘুমের এক স্বপ্নরাজ্যে চলে যাই।
গভীর রাতে হঠাৎ শাহজাহানপুরের আকাশে গুলির শব্দে কান বিদীর্ণ হবার উপক্রম।
আকাশ ফাটানো এত গুলির শব্দ কেন?
অন্ধকার আকাশে এত আলো কেন?
বাবা বললেন, 'তোমরা বুঝবে না - যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে'।
বিভীষিকাময়ের সেই দিনরাত-
রাজারবাগে শত শত পুলিশকে হত্যা করা হচ্ছে,
সেই রাতে একটি বড় বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজা,
সেই বাড়িতে ভয়ার্তচিত্তে খাটের নীচে প্রতিবেশীদের সাথে সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়া।
ঠিক পরদিন অন্তঃসত্ত্বা মাকে নিয়ে অজানার পথে পাড়ি দেয়া।
কখনো বাসে কখনো নৌকায় আর পায়ে হেঁটে,
দীর্ঘ ৮ দিনের ৮০ মাইলের যুদ্ধভ্রমণ শেষে গ্রামে পৌঁছে গেলে,
সেদিনের দাদির বাঁধভাঙ্গা খুশিতে মাটির মায়ার ওই সুগন্ধ এখনো খুঁজে ফিরি।
রাজাকারের শ্যেনদৃষ্টি দাদার বাড়িতেও থাকা হলো না,
এবার আগরতলা শরণার্থী শিবিরে।
দাদার ছেলেরা সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নিল প্রশিক্ষণ - করলো যুদ্ধ।
যুদ্ধে পাকিস্তানির মর্টার সেলে এক চাচী শহীদ হলেন, চাচা হলেন দিশাহারা।
১৪ ডিসেম্বর রাজাকার খুজেঁ পায়নি বাবাকে,
মুক্তিযোদ্ধাকে রান্না করে আপ্যায়ন করেছেন,
মায়ের আক্ষেপ মুক্তিযোদ্ধার সনদের সত্যিকারের তিনিই একজন দাবীদার।
এখন ডিসেম্বর আসলে এখন মায়ের বুক চিরে একটি কথাই প্রতিধ্বনিত হয় -
এক সাগরের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে,
তোমাদের সফলতাই আমার আসল মুক্তির সনদ।