×

সাহিত্য

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বাঙালি সত্তার প্রতীক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৩ পিএম

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বাঙালি সত্তার প্রতীক

ছবি: ভোরের কাগজ

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত শুধু বাংলাভাষার জন্য প্রতিবাদী কণ্ঠই নয়- তিনি ছিলেন বাঙালি সত্তার প্রতীক। দেশের জন্যও জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন। স্মৃতির জাগরণের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে স্নাত করতে তার স্মৃতিকে জাগরুক রাখতে হবে। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক। ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। দেশত্যাগ করলে ক্ষমতা লাভের হাতছানি থাকার পরও জন্মভূমি ছেড়ে যাননি। প্রতিবাদী ধীরেন্দ্রনাথের প্রথম প্রতিবাদের পথ ধরেই ভাষা আন্দোলন এবং ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। অথচ সেই স্বপ্নদ্রষ্টাই আজ বিস্মৃতির অন্তরালে। তার স্মৃতি সত্তার উপর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বারবার করেছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে কিনো-আই ফিল্মস আয়োজিত শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর জীবন ও কর্মের ওপর তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত ‘তিতাস পারের মানুষটি: শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, লেখক গবেষক মফিদুল হক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর দৌহিত্রী সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। তিনি মানুষের ভেতরে চেতনার জাগরণ ঘটিয়েছিলেন তার সাহসী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটির প্রতিটি হামলার সময় বারবার সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলা হয়েছে তার স্মরণে নির্মিত স্মৃতি ভাষা চত্বরের উপর এবং আলাউদ্দীন সংগীতাঙ্গনের উপর। এখন এ দুটো স্মৃতি চিহ্নকে পুড়িয়ে দেয়া কমন টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, সেসময়ের ছাত্র-যুবকদের হৃদয়ে ভাষার প্রশ্নে তার আপোষহীন চেতনা জাগরুক থাকায় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারায় অবিচল রাখতে হলে ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঠিক ইতিহাস এখনকার ছাত্র-যুবকদেরও জানাতে হবে। হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। তাহলেই কেবল সাম্প্রদায়িক শক্তির নিরন্তর চলমান ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করা সম্ভব হবে। শহীদের আত্মদান সফল হবে। তার ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্রটির মধ্য দিয়ে তাকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। মফিদুল হক বলেন, পাকিস্তানের ভিত কাপিয়ে দিয়েছিল ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষণ। এর মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি সত্তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে তার করা মোক্ষম আঘাতটির কথা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কখনোই ভোলেনি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ছেলে দিলীপ কুমার দত্তসহ তাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। নেয়া হয় কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। সেখানে নির্মমভাবে এই মানুষটিকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমানের মিলিত যে সমাজ, এই সমাজটাকে নষ্ট করার জন্য দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং পাকিস্তান। সেটি ভয়ং হয়ে উঠেছিল একাত্তরে। তাদের নিষ্ঠুরতার একটা লক্ষ হয়ে উঠেছিল যে অমুসলিম সংখ্যাগোষ্ঠীর মধ্যে যারা নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন তাদেরকে হত্যা করতে হবে এবং করেছিল। ইতিহাসের সেই নায়কদের তুলে ধরতে হবে। স্মৃতির জাগরণের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে স্নাত করতে হবে। শাহরিয়ার কবির বলেন, ৪৮ এর সেই ঐতিহাসিক অধিবেশনে জিন্নাহ এবং লিয়াকত আলী খান উপস্থিত ছিলেন। সেই কারণে তারা নৃশংসভাবে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নির্মমভাবে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করে। অথচ এখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ইতিহাসের এই মহানায়ককে স্মরণ করার দৈন্যতা দুঃখজনক। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিরোধীতা করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী স্বপ্নবান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দেশ ত্যাগ করেননি। বরং রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেই বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে কার্যকর ভূমিকা নেয়া জরুরী ছিল তাই করেছেন দারুণ সাহসের সাথে। শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, বদরুদ্দীন উমরের মতো মানুষরা বলেছিলেন একাত্তরের আর সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। অথচ আজকে পাকিস্তানের চেয়েও বেশি সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে দেশ। পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এখনো চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের অন্দরমহলেও তারা ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের মতো মানুষদের অবদান। যিনি না হলে আজকে বাংলা ভাষার চেহারা কি দাড়াতো। আরমা দত্ত বলেন, তিনি জানতেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্য হতে যাচ্ছেন তিনি। তবু তিনি অকুতোভয়। পরাজয়ের গ্লানি স্বীকার করেননি। যেদিন তাকে নিয়ে যায় তা আগে আমাকে ডেকে একটা শ্লোক পড়েছিলেন এবং বলেছিলেন, যিনি সে¦চ্ছায় যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন দান করেন তিনি অবিনশ্বর। আলোচনা শেষে ‘তিতাস পারের মানুষটি: শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ শীর্ষক সত্তর মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শন করা হয়। তানভীর মোকাম্মেল বলেন, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুখের ভাষা বাংলা হওয়ার পরও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার নেপথ্যে যে দুরভিসন্ধি এবং ভাষিক আধিপত্যের পথ ধরে বাঙালি জাতিকে অবদমিত করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল তা সবার আগেই সনাক্ত করতে পেরেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App