×

সাহিত্য

রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১১ পিএম

রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন

ছবি: ভোরের কাগজ

দেশের বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। যিনি শিল্পানুরাগীদের কাছে ‘রনবী’নামেই পরিচিত। সারা জীবনজুড়ে আঁকাজোকা, লেখালেখির পাশাপাশি চারুকলার শিক্ষার্থীর জীবন থেকেই যুক্ত থেকেছেন দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনে। কখনও পোস্টার এঁকেছেন, অংশ নিয়েছেন সাংগঠনিক কাজে। কর্মজীবনের শুরুতে করেছেন সাংবাদিকতাও। আগামী ২৮ নভেম্বর রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী।

রবিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে দিনটিকে সামনে রেখে বরেণ্য এই শিল্পীর এক যোগে দুটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে। এর আগে বন্ধু শুভার্থীদের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মৃতিচারণায় জমে উঠেছিল প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্ব। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে শিল্পীর ১৯৫৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রফিকুন নবীর শিল্পযাত্রার নানা পর্যায় বৈচিত্রময় শিল্পধারাকে ৯৩টি চিত্রকর্মের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এ প্রদর্শনী চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। আর গ্যালারি চিত্রকে ২০২২-২৩ এ দুই বছরে আঁকা ৫১টি চিত্রকর্ম স্থান দেওয়া হয়েছে। এ প্রদর্শনী চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান নূর। রনবীর ৮০তম জন্মবার্ষিকীর আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গ্যালারি চিত্রকের পরিচালক শিল্পী মনিরুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন অভিনেতা আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রফিকুন নবী। সেখানে উঠে আসে তার তরুণ বয়সে শিল্পী হিসেবে বিকাশের পর্ব। অনুষ্ঠানে ‘রনবীর কার্টুন: টোকাই ও অন্যান্য’ শীর্ষক চার খণ্ডের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে নিজের আঁকা দুটি ছবি জাতীয় জাদুঘর ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাতে তুলে দেয়া হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমরা যখন স্কুলে পড়ি তখন খবরের কাগজে রনবীর কার্টুন খুঁজে খুঁজে বের করতাম। কার্টুনে রফিকুন নবী একজন সমাজসচেতন শিল্পী। শুধু বরেণ্য শিল্পীই নন, তিনি আমাদের ইতিহাসের অংশও বটে। তাঁর আঁকা ছবি বহু অমূল্য মুহূর্তের সাক্ষ্য বহন করে। সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি সব বিষয়েই ধারণা রাখেন তিনি। এ কারণেই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকতে পারেন। আমরা অনেক সময় চিত্রকর্মের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারি না। চিত্রশিল্প একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে অনেক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

নিসার হোসেন বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিটি জায়গায় যুক্ত হয়েছেন রনবী। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২৮ নভেম্বর জন্মোৎসবের আয়োজন করা হবে। সেদিন বিকেল তিনটায় চারুকলার বকুলতলায় উৎসব শুরু হবে। রনবীর কার্টুন নিয়ে শুরু হবে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী। সেদিনই 'ঊনসত্তরে ছড়া' নামের একটি বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশ হবে। ৬৯ সালে ছড়া দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করতে এই বইটি করা হয়। কার্টুনের মতো করে সবগুলো ছবি এঁকেছিলেন রফিকুন নবী।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, রফিকুন নবীকে সব সময় দেখেছি পিছিয়ে পড়া মানুষকে নিয়ে চিন্তা করতে। টোকাই রনবীর অনন্য সৃষ্টিকর্ম। টোকাই যেসব কথা বলে তাতে সমাজ প্রসঙ্গ দারুণভাবে উঠে আসে। এই সিরিজগুলো যখন নিয়মিত প্রকাশ হতো, তখন আমরা উৎসাহের সঙ্গে লক্ষ্য করতাম, যে কথা বলতে অনেক শব্দ ব্যবহার করতে হয় কয়েকটি রেখার টানে খুব সহজেই সে কথা তিনি বলে দিতেন। কার্টুন একটি দারুণ শিল্পমাধ্যম। এখন আর পত্রপত্রিকায় এই মাধ্যমটি আমরা দেখি না।

রফিকুন নবী বলেন, আশি বছরকে যত আনন্দের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছেন আমার মনে হয় তা ঠিক আমার জন্য অতটা আনন্দের নয়। এর মাঝে পঁয়ষট্টিটি বছরই শিল্পের সঙ্গে কেটেছে। এই পথচলা সহজ ছিল না। আমরা এই দেশের মানুষেরা সব সময় সহজে পথ চলতে পারিনা, পারিনি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলতেন, এই পথ চলতে গিয়ে যে মানুষের কাছে থেকে শিখতে হবে। মানুষের প্রতি সহমর্মি হতে হবে। এই কথা তিনি বলতেন, কারণ তিনি নিজে ছিলেন একজন মানবিক শিল্পী।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, রফিকুন নবী আমাদের প্রাণের মানুষ। আমরা ছাত্ররা তখন আর্ট কলেজে যাই। বিভিন্ন রকম স্লোগান দিয়ে পোস্টার বানিয়ে শহরে লাগাই। এভাবেই তার সঙ্গে পরিচয়। সেইসব আন্দোলন সংগ্রামে শিল্পীদের ভূমিকা ছিল প্রথম সারিতে। আর এই শিল্পীদের প্রথম সারিতে ছিল রফিকুন নবী। তিনি অত্যন্ত রসিক মানুষ। কার্টুনের মাধ্যমে তা বোঝাও যায়। টোকাই বেরুলে আমরা হাসতে গিয়েও থমকে যেতাম। এই হাসির পেছনেও একটা বেদনা থাকতো। রফিকুন নবী বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেকে অনবরত বদলে গেছেন। জীবনের গভীরে গিয়ে তিনি মানুষকে আবিষ্কার করেছেন। ফলে তার ছবির মাধ্যমে বোধ তৈরি হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App