×

সাহিত্য

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দেশ ও ভাষার জন্য লড়াই করেছেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৭ পিএম

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দেশ ও ভাষার জন্য লড়াই করেছেন

ছবি: ভোরের কাগজ

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দেশ ও ভাষার জন্য লড়াই করেছেন এবং সেই বাংলার মাটিতেই যেন তার রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে যথাযথভাবে স্মরণ করা স্বাভাবিক হলেও আমরা এ ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছি। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত একক বক্তৃতানুষ্ঠানে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী জাতীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত এসব কথা বলেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণে’ শীর্ষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিকের লিখিত বক্তব্য তার অনুপস্থিতিতে উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী নূরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমিন (চলতি দায়িত্বে)। আরমা দত্ত বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জীবন ও কর্মের প্রতি নতুন প্রজন্মকে যথাযথভাবে অবহিত করাই আমাদের আশু কর্তব্য। শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে খসড়া-নিয়ন্ত্রণ-প্রণালীর ২৯নং ধারায় উল্লেখ ছিল-‘পরিষদের প্রত্যেক সদস্যকে উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে হবে।’ তখন পূর্ববাংলার কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার প্রস্তাবটি ছিলÑউর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও পরিষদের সরকারি ভাষা করা হোক। যুক্তি হলোÑপাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে বাংলাভাষীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪০ লক্ষ। সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠের কথিত ভাষাই রাষ্ট্রের ভাষা হওয়া উচিত। বাংলা সেজন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব যতই যৌক্তিক হোক না কেন, তা পাকিস্তানের গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সদস্যগণ সাম্প্রদায়িক কারণে মেনে নিতে পারেন নি। পরিষদে পূর্ব-পাকিস্তানের বাংলাভাষী সদস্যরাও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন। দেশপ্রেমিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবের জন্য ‘রাষ্ট্রবিরোধী’র তকমা পেয়েছেন, তার বিরুদ্ধে নানা বিষোদ্গার করা হয়েছে। তবে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সে প্রস্তাব ক্রমশ পূর্ববাংলার মানুষের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে; যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠালাভ। কাজী নূরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একজন অনন্যসাধারণ মহানায়কের নাম ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। সেলিনা হোসেন বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে আছেন। তিনি শুধু বীর ভাষাসংগ্রামীই নন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই বীর শহিদ যিনি তার জীবন দিয়ে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির ঋণ শোধ করে গেছেন। মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার কথা প্রথম উত্থাপন করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহান ভাষা আন্দোলনের বীজ বপন করেন। সেই পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। সরকার আমিন বলেন, বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদান কখনও ভুলবার নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App