×

সাহিত্য

এক স্পর্শহীন জীবনের গল্প বলল ‘কহে ফেসবুক’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম

এক স্পর্শহীন জীবনের গল্প বলল ‘কহে ফেসবুক’

ছবি: ফেসবুক

আপনজনের সঙ্গে সম্পর্কের নৈকট্য ঘুচে গিয়ে ভাব জমছে দূরের মানুষের সঙ্গে। অন্তর্জালের মোহময় জগতে হারিয়ে যাচ্ছে আবেগ-অনুভূতি। আর প্রযুক্তির এই আগ্রাসনের চিত্র মেলে ধরা নাটক ‘কহে ফেসবুক’।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মুল মিলনায়তনে আরণ্যক নাট্যদলের ৬২তম প্রযোজনাটি মঞ্চায়ন হলো। রচনার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ।

নাটকের গল্পে বর্ণিত হয়েছে প্রযুক্তির জয়-জয়কার। শয়ন কক্ষ, ড্রইং রুম থেকে কবরস্থান- সব জায়গার দখল নিয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট মানুষকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রার গতিবেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। অন্তর্জালীয় এই যোগাযোগ ব্যবস্থার অথৈ সমুদ্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে ফেসবুক তৈরি করেছে এক অদৃশ্য জগত, যা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড নামে পরিচিত। এর ব্যাপ্তি এবং ঘাত এতটাই তীব্র যে, পরিবার সমাজ সর্বোপরি মানবিক জীবন থেকে আবেগ-অনুভূতি ও ভালবাসা বিলুপ্ত করে মানুষকে পরিণত করেছে জৈবিক রোবটে। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর কর্পোরেট জগতের প্রতিটি মানুষ ও তাদের যাপিত জীবন তার চাক্ষুস উদাহরণ। অতি সহজে ও স্বল্প সময়ে সেখানে সবকিছু মিললেও একটি জিনিসের বড্ড অভাব, সেটি হলো ‘স্পর্শ’। তেমনই এক স্পর্শহীন জীবনের গল্প কহে ফেসবুক।

কহে ফেসবুক প্রসঙ্গে নাটকটির রচয়িতা এবং নির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন, ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় একটা কথা শুনেছিলাম, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। ওই সময় গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞানের কোনো সুফল পৌঁছায়নি। কিন্তু একে একে দেশে টেলিভিশন এল, মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার আরও কত কী! এর মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা পেল ফেসবুক।

প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন কামরুল হাসান, রুবলী চৌধুরী, আরিফ হোসেন, জোবায়ের জাহিদ, সুরভী রায় প্রমুখ।

নাট্যতীর্থর ‘দ্বীপ’

অপরদিকে নাটকের দল নাট্যতীর্থ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন করলো দলটির তৃতীয় প্রযোজনার নাটক ‘দ্বীপ’। উৎপল দত্ত রচিত এই নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন তপন হাফিজ। মানুষ কিভাবে আদর্শচ্যুত হয় এবং তাতে মানুষের দ্বারাই মানুষের কতবড় ক্ষতি হতে পারে কিংবা হয় এই বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তার তীক্ষ্ম মেধা দিয়ে নিজেকে ছাড়া জগতের সবকিছুকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। নাটকের তেমনি এক চরিত্র মিলন সরকার। সে একজন বাম রাজনৈতিককর্মী, যার আদর্শ থেকে হঠাৎ বিচ্যুতি ঘটে এবং খবরের কাগজের মালিকের হুকুমে সে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আরও উষ্কানিমূলক তথ্য সরবরাহ করে। ফলে তার বিবেক তাকে তাড়িত করে নিয়ে আসে কাঠগড়ায়। যেখানে তার বিচারের সম্মুখীন হতে হয় তারই সহকর্মী জনার্দন মল্লিক, কপিল নাথ এবং ইউনুস মোহাম্মদের। তারা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে মার্কসবাদী ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, সে আদর্শ হতে বিচ্যুত হচ্ছে। এক পর্যায়ে সে তার ভুল বুঝতে পারে। যখন সে বুঝতে পারে যে, তার এই আদর্শচ্যুতের কারণে তারই হবু সহধর্মিণী বিপদাপন্ন হতে পারে। তখন সে আবার তার আদর্শে ফিরে আসে। এভাবে বিন্যাস্ত হয়েছে নাটকটির কাহিনী।

নাটকটি নিয়ে নির্দেশক তপন হাফিজ বলেন, আমাদের তৃতীয় প্রযোজনা ‘দ্বীপ’ যখন প্রথম মঞ্চে আসে তখন সারাপৃথিবী এক ক্রান্তিকাল পার করছিলো। কেন এই ক্রান্তিকাল, কেন এত অস্থিরতা, কেন এত অরাজকতা, কেন এত অসাধুতা এই সমস্ত কারণের সমাধান খুঁজতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি যে এর একমাত্র প্রধান কারণ হচ্ছে পৃথিবীর মানুষ কেবলই আদর্শচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। আর তাই আমি উৎপল দত্তের ‘দ্বীপ’ নাটকটি একেবারেই সমসাময়িক বলে মনে করেছি। এই নাটকটি নির্দেশনা দিতে গিয়ে নাট্যকারের একটি ভাবনা আমাকে ভীষণ ভাবে তাড়িত করেছে। তা হলো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তার তীকক্ষ্ণ মেধা দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয় কিন্তু নিজেকে ব্যতিত। জানি না আমার এই ক্ষুদ্র মেধায় উৎপল দত্তকে কতটুকু ধারণ করতে পেরেছি। একটুও যদি ধারণ করে থাকি, তবে আমি এবং নাট্য তীর্থের পরিশ্রম সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস।

বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন-তপন হাফিজ, মোনালিসা মোনা, শামসুর রহমান পেরু, মারুফ তমাল, সোলাইমান সেলিম, আমিরুল ইসলাম শুভ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App