×

সাহিত্য

তিনি ছিলেন বিদ্রোহী এবং সাহসী অগ্নিমশাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৬ পিএম

তিনি ছিলেন বিদ্রোহী এবং সাহসী অগ্নিমশাল

ছবি : ভোরের কাগজ

বাংলাদেশের গৌরবের দশক ষাটের দশক, এই দশকে আয়শা খানমের একটা চমকালাগানো ভূমিকা ছিল। তিনি অগ্নিমশালদীপ্ত পদচারণার মধ্য দিয়ে নারী আন্দোলনের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন এক বিদ্রোহী এবং সাহসী অগ্নিমশাল। ইতিহাসে তার ভূমিকা অক্ষয় হয়ে থাকবে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ-নাগরিক কমিটি’ আয়োজিত ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ-মুক্তিপথের অনিঃশেষ অভিযাত্রী’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার আজীবন সংগ্রামী নারী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সভাপতি নারীনেত্রী আয়শা খানমের সংগ্রাম ও অবদানের আলোচনা ও স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ-মুক্তিপথের অনিঃশেষ অভিযাত্রী এর’ প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্ব্ েআয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আয়শা খানমের পরিবারের সদস্য সৈয়দা মুনিরা আক্তার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এদেশের নারী আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে তিনি অক্ষয় হয়ে থাকবেন। তিনি ছিলেন এক বিদ্রোহী, সাহসী এক অগ্নি মশাল। বিশ^সভ্যতাকে অপরিহার্য মানবতার দিকে ধাবিত করতে তিনি এক লড়াকু যোদ্ধা। মফিদুল হক বলেন, পরিবর্তিত সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাজের পশ্চাৎপদ নারীদের কল্যাণের লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকে সংগঠিত করতে, নারীর জাগরণ তৈরির জন্য তার জীবনদর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে এই স্মারকগ্রন্থে। শাহরিয়ার কবীর বলেন, এখনকার জটিল পরিস্থিতি অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে, ধর্মের নামে রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়া, সংস্কৃতিতে ধর্মান্ধতার উপস্থিতি প্রতিরোধের আন্দোলনে আয়শা খানমকে সহযোদ্ধা, অভিভাবক হিসেবে পেয়েছি। বাংলাদেশের নাগরিক আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন তিনি। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার রোধের আন্দোলনে তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিলে ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে অশ্লীলভাবে কথা বলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে। এইসব আন্দোলনে তাকে আমরা পেয়েছি। তিনি কায়িক ভাবে না থাকলেও তরুণ প্রজন্মের জন্য অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবেন। ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশের গৌরবের দশক ষাটের দশক, এই দশকে মুক্তিযুদ্ধ নির্মাণের বড় অংশীদার ছিলেন আয়শা খানম। তার জীবন প্রবাহিত হয়েছে সমতার ধারা, অগ্রসরতার ধারার মধ্য দিয়ে। বইটির মাধ্যমে আয়শাকে দেখার পাশাপাশি তার সময়ের সমাজের পরিস্থিতিকে পরীবীক্ষণ করা যাবে। সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী, পাহাড়ি, হাওড় অঞ্চলের, দলিত সমাজের, চা-শ্রমিকদের মত মানুষের ভালো থাকা নিশ্চিত হলে আজকের এই আয়োজন অর্থবহ হবে। চিরবঞ্চিত এই সকল মানুষের জন্য সাম্য, সমতাপূর্ণ সমাজ গড়তে আয়শা খানমের মত ব্যক্তিত্ব যুগে যুগে আমাদের প্রেরণা দিবেন। সৈয়দা মুনিরা আক্তার বলেন, যে কোনো লক্ষ্য স্থির করে তা পূরণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিলো তার মধ্যে। বাংলাদেশ আজ বর্হিবিশে^ প্রশংসিত হচ্ছে, কারন আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সকলকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলাম তানিয়া হক বলেন, তিনি ছিলেন আমার দেখা বিরল ব্যক্তিত্ব এবং আমার জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি নারীদের জন্য অভিন্ন পৃথিবী তৈরীর চেষ্টা করে গেছেন। তিনি ছিলেন সক্রিয় এক অনন্য যোদ্ধা। এমন মানুষের মৃত্যু নেই। তরুণদের অনুপ্রেরণার লক্ষে আয়শা খানমকে নিয়ে লেকচার সিরিজ করারও প্রস্তাব দেন তিনি। ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ’-এর সভাপতি ড. অনুপম সেনের লিখিত বক্তব্যের অংশ বিশেষ পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহযোগী সম্পাদক গৌতম বসাক। অনুপম সেন বলেন, আয়শা সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে অর্জিত জ্ঞানকে সমাজের কল্যাণে প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি সমাজবিজ্ঞানের যথার্থ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের নারীদের পাশবিক নির্যাতন থেকে মুক্ত করতে তিনি মহিলা পরিষদের মাধ্যমে পাঁচদশক ধরে আন্দোলন করেছেন। সেই আন্দোলনকে আজ অনিঃশেষ মনে হয়, একে সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তার উত্তরসূরীদের নিতে হবে। সুলতানা কামাল বলেন, আয়শা খানমের কথা বলার সাহস আজও অনুপ্রেরণা যোগায় আজকের সময়ের প্রেক্ষাপটে। তিনি নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বক্তব্য জোরালোভাবে তুলে ধরতেন। কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুর পর নারী আন্দোলনকারী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি দক্ষতা ও দুরদর্শিতার সাথে নেতৃত্ব ধরে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বúক্ষ কোনো বায়বীয় বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংজ্ঞা আছে, চেহারা আছে, স্বপ্ন আছে, সেটাকে চিনতে হবে। এটাকে ধরেই আমাদের এগুতে হবে। যারা বলবেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষা যদি তারা দিতে না পারেন তাহলে আমাদের কোনো দায় নেই যে তাদেরকে সারাক্ষণ মনে করিয়ে দিতে হবে তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। তাদের যদি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হতে হয় তাহলে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাড়াতে হবে। মৌলবাদের হাতে দেশ ছেড়ে দেয়া চলবে না। যারা সহিংস শক্তি প্রদর্শন করে তাদের হাতে মাথা নোয়ালে চলবে না। নির্বাচনকে হেলাফেলার বিষয় বানালে চলবে না। সুলতানা কামাল আরো বলেন, এই দেশটাকে আমরা দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দেয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী তানিয়া মান্নান, আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট লায়লা আফরোজ। অনুষ্ঠান শেষে আয়শা খানমকে নিয়ে কার্টুনিষ্ট শিশির ভট্টাচার্যের আকা প্রতিকৃতি তার কন্যা উর্মি খানের হাতে তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সুলতানা কামাল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App